ভোরের দর্পণ অনলাইন:
বিভিন্ন সেবা সংস্থার তার ভূগর্ভে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।
এজন্য একটি পাইলট প্রকল্পের আওতায় উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের কয়েকটি সড়কের ঝুলন্ত তার নেওয়া হচ্ছে সড়কের নিচে করা ‘ইউটিলিটি ডাক্টে’।
ডিএনসিসি বলছে, বারবার রাস্তা খোঁড়াখুড়ি এবং ঝুলন্ত তারের ঝুঁকি এড়াতে পর্যায়ক্রমে পুরো ডিএনসিসি এলাকায় এই ডাক্ট বসানো হবে। তার নিয়ে যাওয়া হবে মাটির নিচ দিয়ে। আপাতত অপটিক্যাল ফাইবারসহ বিভিন্ন সেবা সংস্থার তার নেওয়া হবে।
ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ আমিরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের ৩, ৫, ৭ ও ৮ নম্বর সড়কে এ পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার সড়কে ইউটিলিটি ডাক্ট বসানো হয়েছে। ডাক্ট বসাতে প্রতি মিটারে খরচ হয়েছে ৭৮০ টাকা। ৯ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপে নিয়ে যাওয়া হবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অপটিক্যাল ফাইবারসহ অন্যান্য কেবল।
ব্রিগেডিয়ার আমিরুল বলেন, উন্নয়ন কাজের জন্য বিভিন্ন সংস্থাকে রাস্তা কাটার অনুমতি দিতে হয়। এতে অর্থের অপচয়ের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হয়।
“নতুন রাস্তা কেটে ফেলতে হয়, কাদা-ধুলায় মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। এছাড়া ওভারহেড কেবলগুলোর জন্য বৈদ্যুতিক এবং বাতির খুঁটিগুলোতে বেশি চাপ পড়ে। বাতি পরিবর্তন করতে গিয়ে দুর্ঘটনাও ঘটে। একটু বাতাসেই এসব খুঁটি পড়ে যাওয়ার অবস্থা হয়। বারবার রাস্তা কাটাকাটি বন্ধ এবং খুঁটিগুলোর ওপর থেকে চাপ কমানোর জন্যই আমরা ইউটিলিটি ডাক্ট করতে চাচ্ছি।”
সেই লক্ষ্যেই পাইলট প্রকল্পটি শুরু হয়েছে। নতুন ওয়ার্ডগুলোতে যত সড়ক নির্মাণ হবে, তার দুপাশে ইউটিলিটি ডাক্ট বসাবে ডিএনসিসি।
ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী বলেন, নতুন করে আরেকটি নকশা করছেন তারা। এতে ঝুলন্ত তারগুলো কাটতে হবে না।
“ইউটিলিটি ডাক্টের পাইপে তারগুলো ঢোকানোর জন্য কেটে ফেলতে হচ্ছে। কিন্তু আমরা নতুন ডিজাইন করছি সেখানে স্ল্যাব থাকবে। তারগুলো উপর থেকে সরাসরি নিচে নামিয়ে ডাক্টে ঢুকিয়ে ঢাকনা দিয়ে দেওয়া হবে। আর ভবিষ্যতে প্রয়োজনে কেবল বসাতে হলে সহজেই ডাক্টের ভেতর নেওয়া যাবে। সেবা সংস্থার কেবল কোনো ত্রুটি হলে সমাধানও সহজেই করা যাবে।”
উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের ৬ নম্বর সড়কে গিয়ে দেখা গেছে, সড়ক ও ফুটপাতের উন্নয়নকাজ চলছে। পাশাপাশি ফুটপাতের নিচের ইউটিলিটি ডাক্টের ভেতর দিয়ে কেবল টিভি ও ইন্টারনেটের তার নিয়ে যাচ্ছেন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা।
সড়কের দুপাশের ফুটপাতে ৯ ইঞ্চি ব্যাসের একটি পাইপ রাখা হয়েছে। ৭৫ ফুট দূরত্বে একটি করে পিট রাখা হয়েছে। ওই পিট থেকে আরেকটি পাইপের সাহায্যে তার নিয়ে যাওয়া হয়েছে সড়ক বাতির খুঁটিতে। সেখান থেকে বিভিন্ন বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে সেবা সংস্থার তার।
একটি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপনের কাজ করছিলেন মুকুল হোসেন। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রাথমিকভাবে কিছু অসুবিধা হলেও ইউটিলিটি ডাক্টে সবারই সুবিধা হবে।
“এখন অসুবিধা হল কেবল বেশি লাগবে। যে কোনো জায়গায়ই আপনি সংযোগ দেন, একটা পিট থেকে দিতে হবে। ওভারহেড থাকলে আমি যে কোনো জায়গা থেকেই সংযোগ দিয়ে দিতে পারি। খরচটা বেড়ে গেছে। কিন্তু সুবিধা হলো তার সহজে নষ্ট হবে না। দিনের পর দিন রৌদ্র-বৃষ্টিতে তারের মান কমে যায়। এছাড়া অনেক তার একসঙ্গে সঙ্গে ঝুলে পড়ে। এখন সেটা হবে না।”
উত্তরা কেবল নেটওয়ার্কের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থাপক কবির আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পাইপের পরিবর্তে স্ল্যাব দিলে কেবল বসানো, মেরামত ও প্রতিস্থাপন করা সহজ হতো।
“এখন জিআই তার নিয়ে কেবল টেনে নিতে হচ্ছে। কোনো কারণে জিআই তারটা হারিয়ে যায়, তাহলে নতুন কেবল টানা যাবে না। বৃষ্টির সময় পানির সঙ্গে পাইপে বালি গিয়ে জ্যাম হয়ে যাওয়ার একটা ঝুঁকি থাকে। ডাক্ট স্ল্যাব সিস্টেম করে ১০ ফুট পরপর খোলার ব্যবস্থা রাখলে ভালো হত।”
সিটি করপোরেশনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন আইএসপিএবির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক। এটা আগে করা উচিৎ ছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ইমদাদুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পৃথিবীর সব দেশেই সিটি করপোরেশন বা লোকাল গভর্নমেন্ট এই কাজটা করে থাকে। নির্দিষ্ট ভাড়ার বিনিময়ে এনটিটিএন, বিটিসিএল এবং আইএসপি সবাই এই ডাক্ট ব্যবহার করবে। বাস্তবতা হল আমাদের পলিসিতে গলদ ছিল।
“যাই হোক দেরিতে হলেও উত্তর সিটি করপোরেশন বিষয়টি অনুধাবন করেছে। এটা যেন অব্যাহত থাকে, কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তা যেন বন্ধ না হয়।”
ডিএনসিসির মেয়র মো.আতিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, যেসব সড়কের পাশের ফুটপাত উন্নয়ন কাজ চলছে সেখানে ইউলিটি ডাক্ট করার তৈরির জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এখন থেকে ঝুলন্ত যেসব তার কাটা হবে, তা আর ওপরে উঠবে না।
“এটা আমাদের এখানে প্রথম হতে যাচ্ছে। উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরে ফুটপাত ও সড়কের উন্নয়ন কাজ চলছে। যেসব নতুন রাস্তা হচ্ছে সেসব ফুটপাতের প্রত্যেকটির নিচে ডাক্টিং পাইপ বসিয়ে দিয়েছি। এখানে সব লাইন চলে আসবে।”
এজন্য সেবাদাতা কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ভাড়ার পরিমাণ কী হবে, তা সবার সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করা হবে।
“আমি সবার সঙ্গে কথা বলেছি, একটা স্থায়ী সমাধান করতে চাই,” বলেন মেয়র আতিক।