দেশজুড়ে

নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা জলোচ্ছাসের আতঙ্কে

  প্রতিনিধি ১৯ মে ২০২০ , ৯:৩৫:৫১ প্রিন্ট সংস্করণ

সোহরাফ হোসেন, বরগুনা : মহামারি করোনা আতঙ্কের পর এবার ঘূর্ণিঝড় আম্ফান আতঙ্কে বরগুনার উপকূলবাসী এমন দুর্যোগে উপকূলীয় নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ঘূর্ণিঝড় আম্পানের বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে জেলাজুড়ে ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে সতর্কবার্তা প্রচার জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদ, রেড ক্রিসেন্ট সিপিপির পক্ষ থেকে চলছে প্রচারণা

পানি উন্নয়ন বোর্ড বরগুনা কার্যালয় সূত্রের তথ্যমতে, বরগুনা জেলার ২২টি পোল্ডারে ৯৫০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ৩৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এসব বাঁধের নিকটবর্তী বাসিন্দারা ঝড়ের পূর্বাভাসেই আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়েন

বরগুনা সদরের নলটোনা এলাকার বাসিন্দা সেলিম শাহনেওয়াজ বলেন, বিষখালীর ভাঙ্গণে এবং বুলবুলের তাণ্ডবে নলটোনা এলাকার প্রায় পাঁচ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নড়বড়ে হয়ে যায়। অনেক ধর্ণা ধরে দুই কিলোমিটারের সংস্কার সম্ভব হয়েছে। কিন্ত বাকি এলাকা এখনো অরক্ষিত। পাথরঘাটার কালমেঘা ইউনিয়নের ভাঙ্গন কবলিত কালমেঘা বাজারের উভয় পাশের এক কিলোমিটার এলাকায় ব্লক দিয়ে স্থায়ী সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্ত বাজারের দক্ষিণ দিকের প্রায় এক কিলোমিটার এখনো অরক্ষিত। একই অবস্থা বাকি এলাকাগুলোরও। বিশেষ করে সদরের বদরখালী ইউনিয়নের ফুলঝুড়ি বাজারে নদীর পাশের ভালো কোন ভেড়ি বাধ না থাকায় বেশি ঝুকিতে রয়েছে বাজার বাসী। এছাড়াও নলটোনা, এম বালিয়াতলি, বুড়িরচর ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকা, আতমলী তালতলী বামনা বেতাগী উপজেলার নদী তীরবর্তি বাঁধ সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা সবসময়ই আতংকে থাকেন

তথ্যমতে, বরগুনা জেলার সাড়ে ৯শত কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, মহাসেন, ফণীসহ একাধিক প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রায় সাড়ে পাঁচশত কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেসব বাঁধ এখনও সম্পূর্ণ মেরামত হয়নি। এসব বাঁধ সম্পূর্ণ মেরামত না হতেই ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে আবারো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অবস্থায় আম্ফানের আগমনের বার্তায় আতঙ্কে রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ এলাকার লক্ষাধিক বাসিন্দা

বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কাওছার হোসেন বলেন, বাঁধও মেরামত করা জরুরি আমরা কিছু কিছু এলাকার বাঁধ নির্মাণ সংস্কার করছি

তিনটি নদীবেষ্টিত বরগুনা জেলার নদী তীরের বাসিন্দাদের অনেকেরই কাছাকাছি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রও নেই। জেলার ১২লাখ মানুষের প্রায় এক তৃতীয়াংশের বসবাস নদী তীরবর্তী গ্রামে। ঘূর্ণিঝড়ে আশ্রয় নিতে এদের জন্য মাত্র ৩৪৫টি আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে

সিপিবি বরগুনা সদর উপজেলার টিম লিডার জাকির হোসেন মিরাজ বলেন, বরগুনার উপকূলীয় বাসিন্দাদের তূলনায় আশ্রয়কেন্দ্রর সংখ্যা অনেক কম। আমরা বছরের পর বছর ধরে বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আনলেও এখনো পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। জেলায় পাঁচ শতাধিক আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তত রাখা হলেও স্বাস্থবিধি বজায় রাখার বিষয়টি এখন বড় রকমের চ্যালেঞ্জ। যদিও বরগুনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে, তবুও ঘূর্ণিঝড়কালীন সময়ে আশ্রয়কেন্দ্রে স্বাস্থবিধি মেনে চলা কঠিন হয়ে পড়বে বলবে অনেকেরই ধারণা করছেন

এদিকে ২০ মে থেকে পরবর্তী ৬৫ দিন ইলিশের প্রজনন মৌসুম হওয়ায় সাগরে নদীতে সব প্রকার মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞা থাকবে। তাই জেলেরা নিষেধাজ্ঞার আগমুহূর্ত পর্যন্ত মাছ ধরার জন্য গভীর সমুদ্রে রয়েছেন। সাগর কিছুটা উত্তাল থাকলেও আকাশে মেঘ বৃষ্টি না থাকায় বেশিরভাগ জেলেরা এখনো সাগরে রয়েছেন। তাই জেলেরা এখনো উপকূলে না ফিরলে প্রাণহানির সম্ভাবনা রয়েছে

বিষয়ে বাংলাদেশ মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ২০ মে থেকে মা ইলিশ রক্ষা করার জন্য সাগরের সব প্রকার মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকবে। তাই বেশিরভাগ মাছ ধরার ট্রলার শেষ মুহূর্তে মাছ ধরার জন্য সাগরে রয়েছে। সাগর উত্তাল থাকার কারণে বেশ কিছু মাছ ধরার ট্রলার ঘাটে এলেও এখনো পাঁচ শতাধিক ট্রলার গভীর সমুদ্রে রয়েছে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা চলছে

বরগুনা জেলা দুর্যোগ ত্রাণ ব্যবস্থাপনা অফিসার মো. লুতফর রহমান বলেন, আশ্রয় কেন্দ্রে সামাজিক সুরক্ষা মেনে স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী রাখা হবে। এছাড়াও আশ্রয় কেন্দ্রে গ্রাম পুলিশ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের টিম সার্বক্ষণিক সামাজিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার কাজে নিয়োজিত থাকবেন। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ২৫ লাখ টাকা ২০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা প্রতিটি উপজেলায় বণ্টন করা হয়েছে

বরগুনা জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ জানান, জেলার ৫০৯ টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৮০ হাজার ৪২৪ জন মানুষ প্রায় ১০ হাজার গবাদি পশু এবং ৩০ হাজার হাঁসমুরগি নিয়ে আশ্রয় নিতে পারবেন। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকাকালে ইফতার সাহরির ব্যবস্থা করা হবে এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা হবে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে দুর্গত মানুষদের অবস্থানের জন্য অতিরিক্ত ১০০ আশ্রয়কেন্দ্র বাড়ানো হয়েছে। জেলাজুড়ে মানুষকে সচেতন করার জন্য প্রচার প্রচারণা চলছে

 

 

 

 

 

 

 

 

আরও খবর

Sponsered content

Powered by