দেশজুড়ে

নবান্ন উৎসবে বগুড়ায় জমে ওঠে মাছের মেলা

  প্রতিনিধি ১৮ নভেম্বর ২০২৩ , ৭:৪৯:৪৩ প্রিন্ট সংস্করণ

নবান্ন উৎসবে বগুড়ায় জমে ওঠে মাছের মেলা

অগ্রহায়ণ মাস। ঘরে উঠেছে নতুন ধান। আর সেই ধানে পিঠা-পায়েসসহ নানা আয়োজনে মেয়ে-জামাই ও স্বজনদের নিয়ে পালিত হচ্ছে কৃষকের প্রাণের নবান্ন উৎসব। এ উৎসবকে ঘিরে বগুড়ার শিবগঞ্জ ও নন্দীগ্রাম উপজেলায় জমে উঠেছে মাছের মেলা।

নবান্নে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার ২০ গ্রামের মানুষের ঘরে ঘরে চলে উৎসব। উপজেলার উথলী বাজারে বসেছে দুইশ বছরের ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা। একদিনের এ মেলায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বড় বড় দেশীয় মাছের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। এ মেলা নবান্ন শস্যভিত্তিক একটি ঐতিহ্যবাহী লোকজ উৎসব। একদিনেই ঐতিহ্যবাহী উথলিতে কোটি টাকার মাছ বেচাকেনা হয়ে থাকে।

উথলী ছাড়াও উপজেলার রথবাড়ী, ছোট ও বড় নারায়ণপুর, ধোন্দাকোলা, সাদুল্লাপুর, বেড়াবালা, আকনপাড়া, গরীবপুর, দেবীপুর, গুজিয়া, মেদেনীপাড়া, বাকশন, গণেশপুর, রহবল শিবগঞ্জসহ প্রায় ২০ গ্রামের মানুষের ঘরে ঘরে চলে উৎসব আয়োজন। প্রতি বাড়িতে মেয়ে জামাইসহ আত্মীয় স্বজনদের নিমন্ত্রণ করা হয়। পরিবারের সবাইকে নিয়ে গ্রামবাসীরা নতুন ধানের উৎসবে মেতে ওঠেন।

মেলায় আসা মাছ ব্যবসায়ী শিহাব মুকুল বলেন, প্রতি বছর অগ্রহায়ণ মাসের ৩ তারিখ উথলী মাছের মেলায় দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির বড় বড় মাছ আসে। মেলা উপলক্ষে প্রচুর মাছ বেচাকেনা হয়। আগের দিন রাত থেকেই মাছ আসতে শুরু করে। আর বেচাকেনা হয় কাকডাকা ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত।

ব্যবসায়ীরা জানান, মেলায় প্রতি কেজি বাঘাইড় ১৩০০ টাকা, বোয়াল ১৪০০ টাকা, রুই, কাতল ও চিতল মাছ ৪৫০-৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি আকারের মাছ ৩০০-৬৫০ টাকা, ব্রিগেড ও সিলভার কার্প ৩০০-৪৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

মেলার আরেক মাছ ব্যবসায়ী জানান, ছোট-বড় মিলে শতাধিক মাছের দোকান বসেছে। প্রত্যেক বিক্রেতা অন্তত ৫-১০ মণ করে মাছ বিক্রি করেছেন। মেলায় মাছ সরবরাহের জন্য সেখানে রাত থেকে ২০টি আড়ত খোলা হয়।

মেলায় মাছ কিনতে আসা কাব্য দেব বলেন, প্রায় দুইশ বছর আগে থেকে উথলিতে প্রতিবছর নবান্নে মাছের মেলা হয়। এ সময় স্বজনদের আগমনে গ্রামের প্রতিটি বাড়ি মিলনমেলায় পরিণত হয়। তাদের জন্যই বড় বড় মাছ কিনতে মেলায় আসা।

স্থানীয় এক স্কুল শিক্ষক কনক দেব বলেন, মেলায় মাছের পাশাপাশি সাড়া ফেলেছে নতুন আলু। প্রতি কেজি নতুন আলু বিক্রি হয়েছে ৪০০ টাকা কেজিতে। বছরে এসবই আমাদের আনন্দ দেয়।

উথলি মাছ মেলা কমিটির ইজারাদার আজিজুল হক বলেন, বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে প্রতি বছর নবান্নে একদিনের মাছের মেলা হয়ে আসছে। এলাকার মেয়ে জামাই আত্মীয় স্বজনদের নানা ধরনের দেশীয় খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মেলায় আসা বড় বড় দেশীয় প্রজাতির মাছ।

শুধু শিবগঞ্জ নয় বগুড়ার জেলার নন্দীগ্রামে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উৎসবের পঞ্জিকা অনুসারে শনিবার অগ্রহায়ণের এ দিনে প্রতিবছরের মতো নবান্ন উৎসব পালিত হয়েছে। উপজেলার ওমরপুর, রণবাঘায় বসেছে মাছের মেলা। পাশাপাশি নন্দীগ্রামের নাগরকান্দি, হাটকড়ই, ধুন্দার বাজারেও মাছের মেলা বসেছে। জেলে থেকে শুরু করে খামারি ও ব্যবসায়ীরা মাছ নিয়ে এসেছেন মেলাগুলোতে। এখানেও গ্রামের বাড়িতেই মেয়ে-জামাইসহ স্বজনদের আগে থেকে মেলার দাওয়াত দেওয়া হয়।

এদিকে ওমরপুর ও রণবাঘায় মাছের মেলায় সুন্দর করে থরে থরে সাজানো কাতল, চিতল, সিলভার কার্প, রুই, ব্রিগেড, বাঘা আইড়, বোয়ালসহ হরেক রকমের মাছ। নানা রঙের কাপড়ে সাজানো সারি সারি দোকান।

দুই কেজি থেকে শুরু করে ২৫ কেজি ওজনের মাছ আছে এখানে। লোকজনও ব্যাপক উৎসাহের সঙ্গে কিনছেন এসব মাছ। অনেকেই আবার এসেছেন কেবল মাছ দেখতে।

মেলায় ২০০-৭৫০ টাকা কেজি দরে ব্রিগেড ও সিলভার কার্প মাছ বিক্রি হচ্ছে। রুই ও কাতলা মাছ বিক্রি হচ্ছে ২২০-৬৫০ টাকা কেজি দরে। চিতল মাছ ওজন ভেদে ৫০০-৭০০ টাকা কেজি। এছাড়া ৪৫ কেজি ওজনের বাঘা আইড় ১২০০ টাকা কেজি দরে দাম চাওয়া হচ্ছে।

মাছের পাশাপাশি মেলায় শীতকালীন হরেক রকম সবজির দেখা মিলছে। প্রতিবারের মতো এবারও ক্রেতা সমাগম চোখে পড়ার মতো। মাছের দামও অনেকটা স্বাভাবিক বলে জানান ক্রেতা ও বিক্রেতারা।

কালিকাপুর গ্রামের ধীরেন চন্দ্র বলেন, যুগ যুগ ধরে অগ্রহায়ণ মাসের এইদিন মাছের মেলা বসে। দিন যতই যাচ্ছে মেলার ঐতিহ্য ততই বাড়ছে।

মাছ বিক্রেতা মোস্তফা আলী বলেন, নবান্ন উৎসবকে ঘিরে মূলত বড় বড় মাছ মেলায় আনা হয়। ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতা মাথায় রেখে মাছের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। স্থানীয়দের সঙ্গে খুব একটা দামাদামি করা হয় না।

অতিথি আপ্যায়নের জন্য মাছ কিনতে এসেছেন মিলন সরকার। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নবান্ন উৎসব উপলক্ষে মেলা বসে। দিনব্যাপী মেলায় মাছের পাশাপাশি সবরকম পণ্য পাওয়া যায়।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by