চট্টগ্রাম

পাকিস্তানিদের নৃশংসতার সাক্ষী দোহাজারীর জামিজুরী বধ্যভূমি!

  প্রতিনিধি ৩০ মার্চ ২০২৪ , ৭:৩৮:০০ প্রিন্ট সংস্করণ

পাকিস্তানিদের নৃশংসতার সাক্ষী দোহাজারীর জামিজুরী বধ্যভূমি!

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী পৌরসভার জামিজুরী গ্রামের বধ্যভূমিটি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর লোমহর্ষক নৃশংসতার সাক্ষী। ১৯৭১ সালের ২৮ এপ্রিল, বাংলা ১৩৭৮ সালের ১৪ই বৈশাখ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তৎকালীন পটিয়া (বর্তমানে চন্দনাইশ) থানার দোহাজারীর জামিজুরী গ্রামে নারকীয় তাণ্ডবলীলা চালিয়ে ১৩ জন নিরপরাধ নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করে।

এতে শহীদ হন ডা. বগলা প্রসাদ ভট্টাচার্য, কবিরাজ তারাচরণ ভট্টাচার্য, মাস্টার প্রফুল্ল রঞ্জন ভট্টাচার্য, মাস্টার মিলন ভট্টাচার্য, বিশ্বেশ্বর ভট্টাচার্য, রেনু বালা ভট্টাচার্য, ডা. করুনা কুমার চৌধুরী, হরি রঞ্জন মজুমদার, মহেন্দ্র সেন, নগেদ্র ধুপী, রমনী দাশ ও অমর চৌধুরী।স্থানীয় এলাকাবাসী ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লাশগুলো একত্রিত করে একটি গর্তে সমাধিস্থ করে।

পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ মজুমদার (আমিরাবাদ), মুক্তিযোদ্ধা বিমল দাশ (নলুুয়া), মনীন্দ্র দাশ (মুজাফরাবাদ) এর দেহাবশেষও এখানে সমাধিস্থ করা হয়। স্বাধীনতার পর শহীদ পরিবার ও স্থানীয় ক’জন প্রগতিশীল তরুণের অক্লান্ত পরিশ্রমে সমাধিস্থলে গড়ে তোলা হয় বধ্যভূমি। প্রতিবছর ২৫ মার্চ রাতে চন্দনাইশ উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গণহত্যা দিবস উপলক্ষ্যে শহিদদের স্মরণে জামিজুরী বধ্যভূমিতে আলোক প্রজ্বলন ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।

স্থানীয়দের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, দীর্ঘদিন অযত্নে-অবহেলায় পড়ে থাকার পর ২০০৭ সালের ২৬ মার্চ তৎকালীন চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার খালেদ রহিম জামিজুরী বধ্যভূমির ফলক উন্মোচন করেন। এরপর ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের অর্থায়নে ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা ব্যয়ে বধ্যভূমি স্থলে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়।

চন্দনাইশ উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করে দেয়া হয়। এরপর দোহাজারী পৌরসভার অর্থায়নে জামিজুরী প্রধান সড়ক থেকে বধ্যভূমিতে যাওয়ার জন্য আরসিসি ঢালাই দ্বারা দেড়শ মিটার সড়ক নির্মাণ করে দেওয়া হয়। গত সোমবার (২৫ মার্চ) চন্দনাইশ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জামিজুরী বধ্যভূমিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদা বেগম।

এসময় তাঁর সাথে ছিলেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা জাফর আলী হিরু, দোহাজারী পৌরসভার মেয়র আলহাজ মোহাম্মদ লোকমান হাকিম, দোহাজারী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের আইসি পুলিশ পরিদর্শক আব্দুর রহিম, দোহাজারী পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) তন্ময় চাকমা, পুলিশ উপপরিদর্শক বিল্লাল হোসেন সহ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় গণ্যমাণ্য ব্যক্তিবর্গ।

শহীদ ডা. বগলা প্রসাদ ভট্টাচার্যের ছেলে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুশীল কান্তি ভট্টাচার্য বলেন, “স্বাধীনতার পর ৫৩টি বছর কেটে গেলেও ১৯৭১ সালের ২৮ এপ্রিল লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডে নিহতদের পরিবারগুলো আজও পায়নি শহীদ পরিবারের মর্যাদা। পায়নি সরকারি কোন সাহায্য কিংবা অনুদান।” তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “তরুণ প্রজন্মের অনেকেই জানে না জামিজুরীতে একটি বধ্যভূমি আছে।

তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে কার্যকর ভূমিকা নেয়া প্রয়োজন অগ্রজদের। “শহীদ পরিবারের মর্যাদা ও সরকারি অনুদান প্রদান বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদা বেগম বলেন, “এ বিষয়ে শহীদ পরিবারের সদস্যগণ আবেদন করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।”

আরও খবর

Sponsered content

Powered by