রংপুর

পোকা দমনে সাড়া ফেলেছে আলোক ফাঁদ

  প্রতিনিধি ১১ অক্টোবর ২০২৩ , ৩:৪১:৪০ প্রিন্ট সংস্করণ

পোকা দমনে সাড়া ফেলেছে আলোক ফাঁদ

কুড়িগ্রামের উলিপুরে চলতি আমন মৌসুমে কৃষি জমিতে উপকারী ও অপকারী পোকার উপস্থিতি এবং ক্ষতিকর পোকা দমনে আলোক ফাঁদ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন এলাকার কৃষকেরা স্বল্প খরচে এবং কীটনাশক ব্যবহার ছাড়াই এই পদ্ধতি ব্যবহার করে পোকা দমন ও নির্ণয় করছেন। আলোক ফাঁদ পদ্ধতি স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা পোকামাকড়ের ক্ষতির হাত থেকে ফসল রক্ষায় আলোক ফাঁদ ব্যবহারে চাষিদের উৎসাহিত করছেন। ফসলি জমি পোকামুক্ত করতে কীটনাশকের বিকল্প হিসাবে এ পদ্ধতি কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আলোক ফাঁদের মাধ্যমে ফসলের মাঠে পোকা-মাকড়ের উপস্থিতি যাচাই ও নিয়ন্ত্রণ করছেন তারা। স্বল্প খরচে এ কৌশল ব্যবহারে একদিকে আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা অন্যদিকে ক্ষতিকর কীটনাশক থেকে রক্ষা পাচ্ছে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ১টি পৌরসভা সহ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৪ হাজার ৫’শ হেক্টর। যা অর্জিত হয়েছে ২৪ হাজার ৪’শ ৫০ হেক্টর। এ উপজেলায় আমন ধানের চাষ এলাকায় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগনের সহায়তায় সপ্তাহের প্রতি সোমবার করে এক যোগে ৪০টি ব্লকে আলোক ফাঁদ পদ্ধতিতে পোকা দমন করা হচ্ছে।

সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, আলোক ফাঁদ প্রদর্শনী করছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগ। সন্ধ্যার সময় ধান ক্ষেতের ১০ থেকে ১৫ মিটার দূরে পতিত জায়গায় আলোক ফাঁদ বসানো হয়। চার্জার লাইটের সাহায্যে খুঁটিতে পুঁতে নিচে সাবান মিশ্রিত পানির পাত্র দিয়ে এই ফাঁদ স্থাপন করা হয়। এতে অপকারী পোকাগুলো আলোতে আকর্ষিত হয়। এর ফলে পোকাগুলো সাবান মিশ্রিত পানিতে পড়ে মারা যায়। ফসলে কী কী অপকারী পোকা রয়েছে তা শনাক্ত করা যায়। এছাড়া উপকারি পোকার উপস্থিতিও দেখা যায়। ফাঁদের মাধ্যমে সবুজ পাতা, ফড়িং, মাজরা পোকা, পাতা মোড়ানো পোকার মথ দেখা যায়।

উপজেলায় প্রতি বছর কৃষকরা ধান, গম, পাট, সবজিসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করেন। কিন্তু বিভিন্ন সময় পোকার আক্রমণে প্রতি বছরই কমবেশি ফসলের ক্ষতি হয়। ফলে পোকা দমনের জন্য বাড়তি খরচ করে ক্ষেতে নানা ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। এতে কৃষকদের উৎপাদন খরচ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। বিষয়টি বিবেচনা করে কৃষি বিভাগের উদ্যোগে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় জমিতে বসানো হয়েছে আলোর ফাঁদ। এতে ক্ষতিকর ও উপকারী পোকা চিহ্নিত করে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে কৃষকরা শুধু প্রয়োজনীয় কীটনাশক প্রয়োগ করছেন ঐ ফসলে। ফলে জমিতে ফসলের উৎপাদন বাড়ছে।

উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের কিশোরপুর গ্রামের কৃষক অখিল রায় জানান, আলোক ফাঁদ ব্যবহারে ফসলি জমিতে পোকার ধরন চিহ্নিত করা হচ্ছে। পুরো ক্ষেতে আক্রমণ করার আগেই নির্দিষ্ট কীটনাশক প্রয়োগ করে ফসলের পোকা দমন করা যাচ্ছে। আলোক ফাঁদের মাধ্যমে ক্ষতিকর পোকা নিধনে কোনো খরচ নেই। ফসলি জমিরও কোনো প্রকার ক্ষতি হয় না। ফলে জমিতে ফলন বাড়ছে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে ধানের জমিতে তারা আলোক ফাঁদ ব্যবহার করছেন বলেও জানান তিনি। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকার আমন চাষিদের মধ্যে লাল মিয়া, নুরনবী, আশরাফ আলী খন্দকার, খতিব, মহশিন মিয়া ও আব্দুস ছামাদ সহ আরও অনেকে একই কথা বলেন।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল বলেন, প্রতি সোমবার করে আমার ব্লকে আমনের ক্ষেতের পার্শ্বে ক্ষতিকর ও উপকারী পোকার উপস্থিত নির্নয় করতে আলোক ফাঁদ স্থাপন করা হচ্ছে। আলোক ফাঁদ স্থাপনে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। যাতে অযাথা কীটনাশক প্রয়োগ না করে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মোশারফ হোসেন বলেন, মাঠ পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে আলোক ফাঁদ স্থাপন করে উপকারী ও অপকারী পোকা শনাক্তকরণ কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা হচ্ছে। ক্ষতিকর পোকার উপস্তিতি দেখা দিলে তা দমনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। উপকারী পোকার উপস্থিতি দেখা দিলে অযথা কীটনাশক প্রয়োগ করতে নিষেধ করা হচ্ছে। এ অভিযান আমন ধান কাটা পর্যন্ত চলবে।

তিনি আরো বলেন, পোকামাকড়ের ক্ষতির হাত থেকে ফসল রক্ষায় পোকা দমনে কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে আলোক ফাঁদ স্থাপনে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এ মৌসুমে আমনের বাম্পার ফলনের আশা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by