রাজশাহী

বাগাতিপাড়ায় বাবা-ছেলের একসঙ্গে এসএসসি পাস

  প্রতিনিধি ২৯ নভেম্বর ২০২২ , ৯:০৩:৫৩ প্রিন্ট সংস্করণ

বাগাতিপাড়া (নাটোর) প্রতিনিধি :

নাটোরের বাগাতিপাড়য় একসঙ্গে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছেন বাবা ইমামুল ইসলাম এবং ছেলে আবু রায়হান। সোমবার দুপুরে প্রকাশিত ফলে বাবা জিপিএ ৪ দশমিক ৭৯ আর ছেলে পেয়ে ৪ দশমিক ৮২ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধিনে বাগাতিপাড়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের ভোকেশনাল শাখার ড্রেস মেকিং অ্যান্ড টেইলারিং ট্রেড এবং একই প্রতিষ্ঠানের জেনারেল ইলেকট্রিক্যাল ওয়ার্কস ট্রেড বিভাগ থেকে তারা এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। এদিকে বাবা-ছেলের পাসের ঘটনায় পরিবারসহ স্বজনদের মধ্যে আনন্দের জোয়ার বইছে। পাশাপাশি বাবা-ছেলে প্রশংসায় ভাসছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুরাইয়া মমতাজ বলেন, বাবা-ছেলের একসঙ্গে এসএসসি পাসের খবর শুনে আমি আনন্দিত হয়েছি। শিক্ষার যে আসলে কোনো বয়স নেই, এটি প্রমাণ করেছেন তারা। বাবা-ছেলের জন্য শুভকামনা জানান তিনি। জানা যায়, তাদের বাড়ি উপজেলার পাকা ইউনিয়নের চক-তকিনগর এলাকায়। বাবা ইমামুল ইসলাম বলেন, পড়ালেখা বন্ধের দীর্ঘ ২৪ বছর পর তিনি ছেলের সঙ্গে স্কুলে ভর্তি হয়ে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। ঐকান্তিক ইচ্ছা থাকা সত্তে¡ও সংসারের অভাব অনটনের কারণে অষ্টম শ্রেণি পাশের পরে আর স্কুলে যাওয়া হয়নি তার। পড়ালেখা ছেড়ে জীবিকার তাগিদে ২৪ বছর আগে তিনি ঢাকায় পাড়ি জমান। সেখানে প্রায় ১৮ বছর গার্মেন্টসে শ্রমিকের কাজ করেন। ২০১৬ সালে সেই কাজ ছেড়ে বাড়ি ফিরে জমানো টাকা দিয়ে গ্রামে এসে মৌসুমে আমের ব্যবসা শুরু করেন। পাশাপাশি বাড়ির পাশে একটি ছোট্ট মুদির দোকান দেন। কিন্তু বুকের ভেতরে লেখাপড়া করতে না পারার চাপা কষ্ট মাঝে মধ্যেই তাকে পীড়া দিত। লোকলজ্জায় পড়ালেখা হয়ে উঠছিল না। সমাজে আর ১০টা মানুষের মতো নিজেকেও একজন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে যেন পরিচয় দিতে পারেন সেই উদ্দেশ্যেই পারিবারিক সিদ্ধান্তে অবশেষে ২০২০ সালে ছেলের সঙ্গে বাগাতিপাড়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের ভোকেশনাল শাখার নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন। তিনি আরো বলেন, এই বয়সে এসে পড়াশোনা করে যে ফলাফল পেয়েছি, তাতে আমি সন্তুষ্ট। এখন ছেলের সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হবো। ছেলে আবু রায়হান বলেন, বাবা সব সময় আমার পড়াশোনার দিকে খেয়াল রাখতেন এবং নিজেও পড়তেন। আর এখন একসঙ্গে পাস করায় আমি খুবই আনন্দিত। বাবা ও ছেলের একসঙ্গে পাশের খবরে অভিনন্দন জানিয়েছেন ওই প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সামসুন্নাহার। তিনি দাবি করেন এ ঘটনা অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করবে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by