দেশজুড়ে

বাগেরহাটে ছাত্রী ধর্ষণ মামলা, মাদ্রাসার সুপারের যাবতজ্জীবন কারাদন্ড

  প্রতিনিধি ৫ নভেম্বর ২০২০ , ৫:৫৬:০২ প্রিন্ট সংস্করণ

সৈয়দ শওকত হোসেন, বাগেরহাট : বাগেরহাটের শরণখোলায় পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রী (১১) কে ধর্ষণের মামলায় মাদ্রাসার সুপার ইলিয়াছ জোমাদ্দার (৪৮) কে যাবতজ্জীবন কারাদন্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা দিয়েছে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল।

বাগেরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. নূরে আলম জনাকির্ণ আদালতে এ রায় প্রদান করেন। এই মামলায় বাদী পক্ষে ১৫ জন এবং আসামী পক্ষে দু’জন মোট ১৭জন স্বাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন বিচারক।

ধর্ষনের শিকার মাদ্রাসা ছাত্রী শরণখোলা উপজেলার উত্তর খোন্তাকাটা গ্রামে বাড়ী ও একই গ্রামের রাশিদিয়া স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসার পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। মাদ্রাসা সুপার ইলিয়াছ জোমাদ্দার বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার উত্তর খোন্তাকাটা রাশিদিয়া এবতেদায়ী মাদ্রাসার সুপার এবং একই উপজেলার পূর্ব রাজাপুর গ্রামের আব্দুল গফফার জোমাদ্দারের ছেলে।

মামলার নথি থেকে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৮ আগষ্ট সকাল সাতটায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রতিদিনের মত পঞ্চম শ্রেণির চার ছাত্রী মাদ্রাসার সুপারের কাছে আরবি শিক্ষা নিতে যায়। পৌনে আটটার দিকে মাদ্রাসার সুপার ইলিয়াছ জোমাদ্দার এক ছাত্রীকে রেখে অন্য তিন জনকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। পরে তিনি ওই ছাত্রীকে মাদ্রাসার লাইব্রেরিতে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।

এই ঘটনা কাউকে না জানাতে হুমকি দিয়ে মেয়েটিকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। অসুস্থ অবস্থায় মেয়েটি মাদ্রাসা থেকে বেরিয়ে বাড়িতে যেয়ে তার মাকে ঘটনা খুলে বলে। অসুস্থ হয়ে পড়া মেয়েটিকে স্থানীয় গ্রাম্য চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা দেয়া হয়। এই ঘটনার ১১ দিন পর ১৯ আগষ্ট মেয়েটির বাবা বাদী হয়ে শরণখোলা থানায় মাদ্রাসা সুপার ইলিয়াস জোমাদ্দারের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন।

মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিকেশনে (পিবিআই) তদন্তভার দেয়া হলে পিবিআই এর উপ পরিদর্শক (এসআই) আবু সাইয়েদ তদন্তে নামেন। তিনি তদন্তে নেমে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়ানো মাদ্রাসা সুপার ইলিয়াছ জোমাদ্দারকে ঘটনার প্রায় ২ মাস পরে ওই বছরের ১৭ অক্টোবর জেলার ফকিরহাট উপজেলার কাটাখালি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর মাদ্রাসা সুপার ইলিয়াছ ধর্ষণের কথা স্বীকার করে গ্রেফতারের ৩ দিন পর আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাইয়েদ তদন্ত শেষে ধর্ষণের সত্যতা পেয়ে ১৩ নভেম্বর মাদ্রাসা সুপার ইলিয়াছের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেন। এরপর বিচারক মামলাটিকে আমলে নিয়ে ২০২০ সালের ৯ মার্চ চার্জ গঠন করে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২৯ অক্টোবরের মধ্যে আদালতের বিচারক চিকিৎসক, পুলিশ, বাদী ও বিবাদী মোট ১৭ জন স্বাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।

মামলার বাদী বিবাদী পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে আদালতের বিচারক এ রায় ঘোষণার করেন। রায় ঘোষনার সময় আসামী আদালতে উপস্থিত ছিলেন।  রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসাবে মামলা পরিচালনা করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ সহকারি কৌসুলি (এপিপি) রনজিৎ কুমার মন্ডল। আসামী পক্ষে আইনজীবী হিসাবে মালা পরিচালনা করেন মো. আলী আকবার। আসামী পক্ষের সরকার নিযুক্ত আইন সহয়তা কেন্দ্রে আইনজীবী লিয়াকত আলীর সাথে কথা বলার চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by