চট্টগ্রাম

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের টাউনখাল রক্ষার দাবিতে নোঙর মানববন্ধন

  প্রতিনিধি ৩০ জানুয়ারি ২০২১ , ৪:৫৬:৫৫ প্রিন্ট সংস্করণ

সোহেল আহাদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি:

খালের সীমানা নির্ধারণ ও সীমানা পিলার স্থাপন , দখলদারদের তালিকা ও উচ্ছেদ, নদীর গভীরতা সমান খাল খনন ও নৌযান চলাচলের ব্যবস্থা, সিসি ব্লক অপসারণ ও রিটার্নিং ওয়াল নির্মাণ, এবং দুই পাড়ে পায়ে হাঁটার রাসÍা ও সৌন্দর্য বর্ধন। এই ৫ দফা যৌক্তিক দাবি নিয়ে শহরের টিএ রোডস্থ টাউনখালের ব্রিজের উপর বেলা ১১টায় কয়েকশতো নাগরিকের সমাগমে মানববন্ধনের অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান বক্তা ছিলেন নোঙর কেন্দ্রীয় সভাপতি নদী গবেষক শামস সুমন, বক্তব্য রাখেন বিএমএর সভাপতি ডা. আবু সাঈদ, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান লায়ন ফিরোজুর রহমান ওলিও, সাংবাদিক ইউনিয়নের আহবায়ক মনির হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দীপক চৌধুরী বাপ্পী, জেলা খেলাঘরের সাধারণ সম্পাদক নিহার রঞ্জন সরকার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সহ সভাপতি ইব্রাহিম খান সাদাত, সুজনের সদর উপজেলা সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক মোশারফ হোসেন, পিস ভিশন সভাপতি এড. শেখ জাহাঙ্গীর, শিল্পী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি শফিকুল ইসলাম তৌসির, কমরেড নজরুল ইসলাম, নোঙর জেলা সাধারণ সম্পাদক খালেদা মুন্্নী। মানববন্ধন চলাকালীন ব্রাহ্মণবাড়িয়া -৩ এর সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি নোঙরের ৫ দফা দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
বক্তারা বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের পূর্ব প্রান্ত দিয়ে বয়ে চলা তিতাস নদী। তিতাস নদী থেকে শহরের ভিতর দিয়ে বয়ে চলা টাউনখাল নামে পরিচিত খালটি দিয়ে একসময় পালের নৌকা, ইঞ্জিনচালিত নৌকা চলাচল করতো। বর্ষার মৌসুমে খালে পানি থৈ থৈ করতো অনবরত। দুই পাড়ে বেড়ে উঠা কিশোরেরা দাপিয়ে সাঁতার কাটতো, পাড়ের বাসীন্দারা হারিপাতিল ধোয়া, কাপড় ধোয়া, বড়শি দিয়ে মাছ ধরা-ই ছিল বর্ষাকালের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। কিন্তু কালের বিবর্তনে ভূমিদস্যুদের কবলে পড়ে জরাজীর্ণ অবস্থায় ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে টাউনখালটি। একদিকে ময়লা আবর্জনায় জর্জরিত আর অন্যদিকে দখলের পায়তারায় খালটির বিস্তীর্ণ এলাকা ভরাট করে দখলদারেরা নিজেদের করে নিয়েছে। নদীর গভীরতা সমান খনন এবং দুই পাড়ের সীমানা নির্ধারণ না করেই অপরিকল্পিতভাবে সিসি ব্লক বসানো হয়, রিটার্নিং ওয়াল নির্মাণ না করার কারণে টাউনখালটি হারিয়েছে তার নিজস্বতা, হারিয়েছে তার গতি, হারিয়েছে তার সৌন্দর্য। শহরবাসী টাউনখালটি নিয়ে বর্তমানে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। বক্তারা আরো বলেন, স্বাধীনতার আগে এদেশে ৭০০টিরও বেশি নদ-নদী ছিলো। বর্তমানে নদী রয়েছে মাত্র ৪০৫টি। ৬৪ জেলার ১৩৯টি নদীর বিশাল অংশ দখল হয়ে আছে এবং সারাদেশে মোট দখলদার রয়েছে ৪৯,১৬২ জন। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে নদ-নদী দখলের অভিযোগ থাকলে তাকে সব ধরনের নির্বাচনে অযোগ্য করার ব্যবস্থা নিতে নির্দেশও দিয়েছে হাইকোর্ট। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কোনো ব্যাংক থেকে ঋণ না দেয়ার ব্যবস্থা নেয়ারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে নদ-নদী, খাল-বিল এবং জলাশয়ের আইনগত অভিভাবক হিসেবে ঘোষণা করেছে। পানির গুণগতমানের হিসাবে, ২৯টি নদী মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে আছে। সরকারি জমির অপব্যবহার বা এর পৃষ্ঠপোষকতা উভয়ই দণ্ডনীয় অপরাধ। নদী রক্ষা কমিশন ইতোমধ্যে বিভিন্ন জেলায় সরকারি জমি দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। টাউনখালটি সৌন্দর্য বর্ধন ও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য নোঙর প্রদত্ত ৫ দফা দাবী বাস্তবায়নে এখনই সঠিক ও কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে টাউনখাল রক্ষা কাগুজে কলমেই সীমাবদ্ধ থেকে যাবে। নদী নিরাপত্তার সামাজিক সংগঠন “নোঙর” দৃঢ়ভাবে প্রত্যাশা করে যে সরকারি সম্পদ রক্ষা করার মাধ্যমে জেলা প্রশাসক দুর্নীতি রোধে কার্যকর ভূমিকা নিবেন।
এছাড়াও যৌক্তিক ৫দফা দাবিতে সংহতি প্রকাশ করেছেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আহবায়ক আবদুন নূর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সাবেক সহসভাপতি সৈয়দ আকরাম হোসেন, জেলা নাগরিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা রতন কান্তি দত্ত, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক পরিষদের সদর উপজেলার সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা দেলোয়ার, সমাজ কর্মী ও সাংবাদিক সুমন রায়, প্রথম আলো জেলা প্রতিনিধি শাহাদাত হোসেন, ডেইলি স্টার জেলা প্রতিনিধি মাসুক হৃদয়, সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম, সাংবাদিক আবু সোহেল সরকার, সাংবাদিক এনায়েত, বিডি ক্লিন এর সমন্বয়ক সোহান মাহমুদ, খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এসএম শফিকুল ইসলাম, স্প্রে আশিক, আইনজীবি শফিকুল ইসলাম, লেখক রোকেয়া রহমান, কমরেড নজরুল ইসলাম, ইউনেস্কো ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখার ফারুক, অঙ্কুর শিশু-কিশোর সংগঠনের সদস্য জয়নাল আবেদীন, লেখক গাজী তানভীর আহমেদ, সাংবাদিক ফরদাদুল ইসলাম পারভেজ, তোফাজ্জল হোসেন জীবন, মাদক মুক্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংগঠনের সভাপতি মাহফুজুর রহমান পুষ্প, স্পার্ক ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সভাপতি শাহাদত হোসেন, প্রাউড অব ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সভাপতি কোহিনুর আকতার, মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সাথী চৌধুরী, ভরসা সভাপতি আলমগীর হোসেন, নোঙর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কমিটির সদস্য ও মানববন্ধন বাস্তবায়ন উপকমিটির আহবায়ক কামরুজ্জামান খান টিটু, মনিরুল ইসলাম, আজিজুর রহমান, শিপন কর্মকার, সোহেল খান, শান্তা ইসলাম, নোঙর রাজঘাট ইউনিট (শিমরাইলকান্দি), কালাইশ্রীপাড়া ইউনিট, কান্দিপাড়া ইউনিট, কাজীপাড়া ইউনিট ও খৈয়াসার পশ্চিম মেড্ডা ইউনিট। মানববন্ধন পরিচালনা করেন নোঙর জেলা সদস্য নির্জয় হাসান সোহেল।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by