নির্বাচিত

ভোলার পূর্ব ইলিশায় গরু চোর চক্রের নারী সদস্য আটক, ৫টি গরু উদ্ধার

  প্রতিনিধি ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ , ৮:৫০:০৬ প্রিন্ট সংস্করণ

নিয়াজ মাহমুদ জয়, ভোলা প্রতিনিধি:

ভোলা সদর উপজেলার পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নে গরু চোর চক্রের নারী সদস্য রোকসানা বেগম কে আটক করেছে পুলিশের একটি টিম। শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারী) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। তাকে আটকে সময় তার বাড়ি থেকে ৫টি চোরাই গরু উদ্ধার করা হয়। এ চক্রের আরো কয়েক জন টের পেয়ে পালিয়ে যায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বেশ কিছু দিন যাবত ভোলা সদর উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চল ও গ্রাম থেকে কৃষকের গরু, মহিষ ও ছাগল চুরি হওয়ার ঘটনা ঘটে। চুরি হয়ে যাওযা পশুর অসহায় মালিকগন কয়েকদিন খোঁজাখুঁজি করে কান্নাকাটি করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না । গত কয়েক মাস ধরে উপজেলার পূর্ব ইলিশার,পশ্চিম ইলিশা,রাজাপুর থেকে প্রায় শতাধিক গরু ও ছাগল চুরি হয়েছে। চুরি হওয়া ঘটনা গুলো বেশিরভাগ পূর্ব ইলিশায় ঘটে। তার জের ধরে পূর্ব ইলিশার বাসিন্দারা উক্ত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ছোটন কে জানালে চেয়ারম্যান এই গরু চোর চক্র কে শনাক্ত করতে চারদিকে সোর্স নিয়োগ করেন। চেয়ারম্যান পূর্ব ইলিশার সকল কসাইদের পরিষদে ডেকে এনে সর্তক করে দেন।

শনিবার ভোরে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে পূর্ব ইলিশা ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকজন ইউপি সদস্য ও গ্রাম পুলিশ সহ ৮নং ওয়ার্ডের গুপ্তমুন্সী গ্রামের আবদুল মান্নানের বাসায় গিয়ে চুরি হওয়া গরু দেখতে পান। ঘটনার সত্যতা পেয়ে অভিযুক্ত রোকসানার কাছে জানতে চাইলে তিনি দ্যা নিয়ে মেম্বারও গ্রাম পুলিশদের দাওয়া করেন। মেম্বারও গ্রাম পুলিশরা নিরাপত্তার ভয়ে সেখান থেকে সরে এসে উক্ত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ছোটন কে বিষয়টি জানান, ছোটন চেয়ারম্যান সঙ্গে সঙ্গে ঘটনা স্থলে এসে বিষয়টি ইলিশা পুলিশ ফাঁড়িকে অবহিত করেন। পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ গোলাম মোস্তফার নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে আসলে চেয়ারম্যানসহ মন্নানের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ৫টি গরু, অর্ধশতাধিক গরু ও ছাগল বাধার রশি, ফ্রিজ থেকে জবাই জবাইকৃত গরুর মাংস, ১০টির মত গরুর পা উদ্ধার, ছাগলের চামড়া এবং জবাইয়ের কাজে ব্যবহৃত চুরি উদ্ধার করেন। এ ছাড়াও আবদুল মান্নানের বাড়ীর চারপাশে জবাই করা গরুর ভুঁড়ি চামড়া সহ গরু ছাগলের বিভিন্ন অংশ মাটিতে পুঁতে রাখার বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করেন তারা।

ইউপি সদস্য লিটন বলেন চুরি করে আনা গাভীন গরু জবাই করে জীবিত বাছুর গুলো মাটিতে পুঁতে রাখতো মন্নান,সেই আলামত ও আমরা পেয়েছি তার বাড়িতে।

সরজমিনে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আবদুল মান্নান ও তার তিন ছেলে এবং মেয়ের জামাই মাইনউদ্দিন গরু, ছাগল চুরির সাথে সরাসরি জড়িত। তারা চুরি করে এনে জবাই করে বিভিন্ন মাধ্যমে জবাইকৃত গরুর মাংস ও গরুর বিভিন্ন অংশ বিক্রি করতো। এছাড়াও কসাইদের কাছে চুক্তিভিত্তিক গরু বিক্রি করতো। গরীব অসহায় কৃষকদের পেটে লাথি দিয়ে গরু চোরদের গডফাদার মান্নান ও তার ছেলেরা ক্ষুদ্র মাছ ব্যবসার আড়ালে এ কাজ করতো বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় অনেক বাসিন্দা।

রাকিব নামের একজন বলেন মাছ ব্যবসা কে সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করে তারা মূলত গরু চুরি করতো। আর সেই টাকা দিয়ে ভোলা লক্ষ্মীপুর সড়কের পাশে তিনতলা আলিশান মান্নান মার্কেট গড়ে তুলেন, আহামরি কোন ইনকাম না থাকলেও মন্নান ও তার ছেলেরা রাজকীয় ভাবে চলাফেরা করে কোথার থেকে পায় তারা এত টাকা। তাড়াছা অত্র এলাকায় অনেকের সাথে কথা বললে তারা বলেন হঠাৎ আলাদীনের চেরাগের মত বনে যান মান্নান। ভোলা শহরের কিচেন মার্কেটে মাছ কিনে বিক্রি করেন মান্নান, তার ছেলেদের ও একই পেশা তাহলে নুন আনতে পান্তা পুড়ানো মান্নান আজ আলিশান মার্কেট ও বাড়ী মালিক। এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন শুধু মান্নান নয় এর সাথে আরো অনেক জড়িত থাকতে পারে, তাদের কেও আইনের আওতায় আনতে হবে।

এই ঘটনায় আটক রোকসানার কাছে তার বাড়িতে পাওয়া গরু ও বিভিন্ন আলামত পাওয়া বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন পদ উত্তর দিতে পারে নি।

পূর্ব ইলিশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ছোটন বলেন, আমি খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে সত্যতা পেয়েছি, গরু সহ গরুর পা, গোশত ও গরু জবাইয়ের বিভিন্ন সামগ্রী উদ্ধার করেছি। আমি প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি তারা যেন এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করে, যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ এ ধরনের কাজ করতে সাহস না পায়।

ইলিশা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ গোলাম মোস্তফা জানান, আমরা ৫ টা গরু ও গরু চুরির বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। ঘটনাস্থল থেকে একজন মহিলা কে আটক করেছি। তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

আরও খবর

Sponsered content

Powered by