দেশজুড়ে

মাদারীপুরে আটশতাধিক গ্রাম ডাক্তার এখনো অসহায় মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন

  প্রতিনিধি ১১ এপ্রিল ২০২০ , ১০:০৭:০৬ প্রিন্ট সংস্করণ

ম.ম.হারুন অর রশিদ, মাদারীপুরঃ সারাবিশ্বে প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসে এখন পর্যন্ত লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বাংলাদেশেও করোনার ভয়াল থাবা প্রসারিত করেছে। দেশে প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃত্যুর খবর দীর্ঘ হচ্ছে। সরকার প্রধানের নির্দেশে দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে  দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। দেশের এই দুর্যোগের সময় করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে জেলার অর্ধ শতাধিক প্রাইভেট ক্লিনিক চিকিৎসক শূণ্য। তখন জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে জেলার আট শতাধিক গ্রাম ডাক্তার নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দিনরাত অসহায় মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এক সময় যাদের অবহেলার চোখে দেখা হতো, তারাই আজ এগিয়ে এসেছেন সেবার ব্রত নিয়ে। জেলার বেশিরভাগ বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা না পেয়ে সাধারণ রোগীরা এ সব গ্রাম ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে সেবা নিচ্ছে। প্রতিদিন সকাল-বিকেল এমনকি রাতেও শহরতলি ও গ্রাম অঞ্চলের হাট-বাজারের ঔষধের দোকান এবং গ্রাম ডাক্তারদের চেম্বারে গেলে এ দৃশ্য চোখে পড়ে। এ সব গ্রাম ডাক্তারের চেম্বারে আসা রোগীদের উপসর্গ দেখে সাধারণ রোগের চিকিৎসা দিচ্ছেন। পাশাপাশি করোনার উপসর্গ সন্দেহ হলে সরকারি উপজেলা ও জেলা হাসপাতালে সেবা পাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। তাদের দাবী ‘মানুষের সেবার জন্য ডাক্তারী পেশায় এসেছি। মৃত্যু তো একদিন হবেই তখন ভয় পেয়ে লাভ কি। নিজেরা নিরাপদে থেকে গরীব অসহায় মানুষের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের কাছে যেসব রোগী আসেন তারা তো আমাদেরই ভাই বোন, আত্মীয়-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব। তাদের ফিরিয়ে দেওয়া ডাক্তারী পেশার মধ্যে পড়ে না।’  মাদারীপুরের ৪ উপজেলার প্রায় সর্বত্র নিজেদের ফার্মেসীতে ঔষধ বিক্রির পাশাপাশি রোগী দেখছেন। আবার কারো কারো ব্যক্তিগত চেম্বারও রয়েছে। তারা শুধু রোগী দেখে ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন। এদের কেউ কেউ আবার নিজেদের সুরক্ষার জন্য নিজেরাই নিরাপত্তা সরঞ্জামসহ পিপিই ও সার্জিক্যাল মাস্ক কিনে নিয়েছেন।  

করোনা ভাইরাস সংক্রমণরোধে সরকার জরুরী সেবা ব্যতীত অন্য সব কিছু বন্ধ ঘোষণা করেছে। এ অবস্থায় জেলার বেশিরভাগ বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা না পেয়ে সাধারণ রোগীরা ছুটছেন গ্রাম ডাক্তারদের কাছে। বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকের চিকিৎসকদের দাবী প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সরঞ্জাম নেই, পিপিই সার্জিক্যাল মাস্ক ছাড়া করোনা রোগীর কাছে গিয়ে সেবা দিতে অত্যান্ত ঝুঁকি থাকে। এদিকে গ্রাম ডাক্তার কল্যাণ সমিতির নেতাদের ভাষ্য, বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকের চিকিৎসকরা সাধারণ সময় মাসে একেকজন ডাক্তার ৫-১০ লাখ টাকা রোজগার করেন। তারা নিজেরাও তো প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সরঞ্জামসহ পিপিই সার্জিক্যাল মাস্ক ক্রয় করে নিতে পারেন।
স্থানীয় একটি বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সদর উপজেলার চিড়াইপাড়া গ্রামের হালিমা বলেন, ‘বাবুর ঠান্ডা-কাঁশি। আসছিলাম শিশু ডাক্তার দেখাইতে, দুইদিন আইসা ফিররা গেছি। পরে বাড়ির পাশে আমাগো কাকারে (গ্রাম ডাক্তার) দেখাইছি। এখন বাবু ভাল হইয়া গেছে’। 
এদিকে স্থানীয় একটি বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সদর উপজেলার কুন্তিপাড়া গ্রামের হাওয়া বেগম বলেন, আমি বাসার থেকে বের হয়েছি, কোন রিক্সা নেই। আমার বাড়ির পাশের রিক্সাওয়ালাকে দ্বিগুন ভাড়া দিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পথে পুলিশের বাঁধা ও রিক্সার চাবি নিয়ে যায়। তারপর দীর্ঘ ১ ঘন্টার রোদ্রে রোগী নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাই। গিয়ে কোন ডাক্তার পাই নাই। পরে রোগী ক্রমান্বয়ে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। বাধ্য হয়েই গেলাম পরিচিত গ্রাম ডাক্তারের কাছে গিয়ে চিকিৎসা সেবা নেই’। 

কালাকিনি উপজেলার ভুরঘাটা এলাকার গ্রাম ডাক্তার সৈয়দ শুকুর মাহমুদ সুজন বলেন, ‘আমার একটি জীবনের বিনিময়ে যদি এদেশের হাজারো মানুষের জীবন বেচে যায় তাহলে আমি হাজারো মানুষের হৃদয়ে বেচে থাকবো। আমি মনে করি একজন আদর্শবান ডাক্তার কখনও তার সেবা থেকে সরে থাকতে পারে না, আমি দেশবাসী সকলের কাছে দোয়া চাই, যেন আপনাদের সকলের চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত থাকতে পারি যেকোনো মহামারী ও দুর্যোগ মোকাবেলায় আপনাদের পাশে থাকবো ইনশা আল্লাহ।

মাদারীপুর শহরের কলেজ রোড এলাকার গ্রাম ডাক্তার আলী আজম সরদার জানান, করোনা ভাইরাসের ফলে যানবাহান চলাচল না করায় অনেক রোগী আসতে পারছে না। আগের চেয়ে রোগীর চাপ বেশি। জরুরী প্রয়োজনে রোগীদের আসতে বলি এবং তাদেরকে মোবাইলে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি এবং নিজে সচেতন থেকে ও স্বাস্থ বিধি মেনে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশ গ্রাম ডাক্তার কল্যাণ সমিতির মাদারীপুর জেলা শাখার সিনিয়র সহ সভাপতি মো: জুয়েল বেপারী জানান, ‘মাদারীপুর জেলায় ৭৫০ জন গ্রাম ডাক্তার চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। আমার গ্রাম ডাক্তার ভাইরা এই দুর্যোগকালীন মুহুর্তে দেশের মানুষকে সেবা করছে। তারা তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে। তিনি আরও বলেন সবাই আমার সাথে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করছে, আমার পক্ষে তাদের জন্য সাত্ত¡না ছাড়া কিছুই নেই। রোগীরা আপনার কাছে যতদ্রæত আসতে পারবে বড় ডাক্তারের কাছে ততদ্রæত আসবে পারবে না। এর মধ্যে পুলিশের ভয়তে আসে না। এই দুর্যোগকালীন সময়ে দেশের পাশে থাকলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই আপনাদের পাশে সহযোগিতা করবে। দেশের এই ক্রান্তিকালে মানুষের সেবায় নিয়োজিত একমাত্র গ্রাম ডাক্তার’। মাদারীপুর সিভিল সার্জন ডা. শফিকুল ইসলাম বলেন, যারা গ্রাম ডাক্তার রয়েছেন, তারা যে প্রাথমিক সেবাটি দিচ্ছেন আমি সেটাকে মন্দ বলবো না; তবে যারা যেন নিজেকে সুরক্ষিত রেখে সেবা দেন। আর যতদূর সম্ভব টেলিমেডিসিন পদ্ধতি ব্যবহার করে মোবাইলেরর মাধ্যমে সেবা দেন। এতে করোনা ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব হবে।

আরও খবর

বিজয়ের ৫০ বছরেও সংরক্ষিত হয়নি চাঁদপুরের বধ্যভূমিগুলো

ডোমারে কৃষকলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

পটুয়াখালীতে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠান

কুমিল্লায় ১৭ হাজার পিস ইয়াবাসহ ডাক্তার আটক

চট্টগ্রামে নতুন করে ১০৬ জনের করোনা শনাক্ত চট্টগ্রাম ব্যুারো: চট্টগ্রামে নতুন করে ১০৬ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) অস্তিত্ব মিলেছে। এর মধ্যে নগরে ৯৪ জন এবং উপজেলাগুলোতে ১২ জন। এ নিয়ে চট্টগ্রামে ২৪ হাজার ১৭৫ জনের করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। বিগত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় চট্টগ্রাম শহরে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (২৫ নভেম্বর) সকালে গতকালের চট্টগ্রাম জেলার করোনা সম্পর্কিত এ তথ্য নিশ্চিত করেন সিভিল সার্জন ডা: সেখ ফজলে রাব্বি। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের আট ল্যাব এবং কক্সবাজারে ৮৫৫ টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। উক্ত পরীক্ষায় চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে ১০৬ জন। চট্টগ্রামের মোট আক্রান্ত বেড়ে ২৪১৭৫ জন। এর মধ্যে নগরে ১৮১০০ জন এবং উপজেলায় ৬০৭৫ জন। চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ইতিমধ্যে ৩১৭ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে নগরে ২২৩ এবং উপজেলায় ৯৪ জন। এখন পর্যন্ত করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন মোট ১৭ হাজার ৫৩১ জ

চট্টগ্রামে নতুন করে ১০৬ জনের করোনা শনাক্ত চট্টগ্রাম ব্যুারো: চট্টগ্রামে নতুন করে ১০৬ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) অস্তিত্ব মিলেছে। এর মধ্যে নগরে ৯৪ জন এবং উপজেলাগুলোতে ১২ জন। এ নিয়ে চট্টগ্রামে ২৪ হাজার ১৭৫ জনের করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। বিগত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় চট্টগ্রাম শহরে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (২৫ নভেম্বর) সকালে গতকালের চট্টগ্রাম জেলার করোনা সম্পর্কিত এ তথ্য নিশ্চিত করেন সিভিল সার্জন ডা: সেখ ফজলে রাব্বি। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের আট ল্যাব এবং কক্সবাজারে ৮৫৫ টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। উক্ত পরীক্ষায় চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে ১০৬ জন। চট্টগ্রামের মোট আক্রান্ত বেড়ে ২৪১৭৫ জন। এর মধ্যে নগরে ১৮১০০ জন এবং উপজেলায় ৬০৭৫ জন। চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ইতিমধ্যে ৩১৭ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে নগরে ২২৩ এবং উপজেলায় ৯৪ জন। এখন পর্যন্ত করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন মোট ১৭ হাজার ৫৩১ জ

চট্টগ্রামে এশিয়া কাপ করপোরেট ফুটবল টুর্নামেন্ট

Sponsered content

Powered by