প্রতিনিধি ১৫ জানুয়ারি ২০২২ , ৭:৪০:১৪ প্রিন্ট সংস্করণ
মান্দা (নওগাঁ) প্রতিনিধি : খোলা জায়গায় রান্না আর টং ঘরে বসবাস। অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই জীবনের শেষ বেলায় নিঃসঙ্গ জীবনযাপন। বিধবাভাতার সামান্য কয়েকটি টাকা আর অন্যের সহায়তায় চলছে তার সংসার। বয়োবৃদ্ধ এই নারীর নাম মিরজান বিবি (৭০)। বসবাস করেন নওগাঁ জেলার মান্দা-নিয়ামতপুর সড়কের পাশে উপজেলার পরানপুর ইউনিয়নের বালুবাজার এলাকায়। স্বাধীনতা যুদ্ধের আগেই স্বামী তাকে তালাক দেন। তখন তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তানের জননী। দুই সন্তানকে স্বামীর কাছে রেখেই সংসার জীবনের ইতি টানতে হয়েছে। চলে আসেন বাবার বাড়ি।
শুরু হয় বেঁচে থাকার যুদ্ধ। আলাপচারিতার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটি বসতঘরের দাবি করছিলেন বার বার। মিরজান বিবি উপজেলার পরানপুর ইউনিয়নের বালুবাজার এলাকার মৃত কছিমুদ্দীনের মেয়ে। পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়েছিল একই ইউনিয়নের হাটোইর গ্রামের আব্বাস আলী প্রামানিকের সঙ্গে।
বয়োবৃদ্ধ এই নারী জানান, স্বামী পরিত্যক্তা হওয়ার পর বাবা বাড়িতে থাকাকালিন স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়। বেঁচে থাকার জন্য আশ্রয় নেন বিভিন্ন জায়গায়। দেশ স্বাধীনের পর জীবন বাঁচাতে ঝি এর কাজ শুরু করেন। এ কাজে পেটের ভাত জুটলেও স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
তার এ অবস্থায় খবর জেনে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন পরানপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আহসান হাবীব। হতভাগ্য এ নারীর কপালে জুটে বিধবভাতার একটি কার্ড।
মিরজান বিবি বলেন, বিধবা ভাতার টাকা ও অন্যের দেওয়া সহায়তার টাকা জমিয়ে বাড়ির নির্মাণের জন্য ৬ শতক জমি ক্রয় করেন। কিন্তু বয়স হওয়ায় কাজ করতে পারেন না আগের মতো। তাই পেটের দায়ে সেই জমি বিক্রি করে দিতে হয়েছে। বর্তমান রাস্তার ধারে স্থানীয় লোকজন নির্মাণ করে দেওয়া ঘরে বসবাস করছেন তিনি।
এই নারী আরও বলেন, বিধবাভাতার সামান্য টাকা দিয়ে আর সংসার চলে না। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গরীবের জন্য এতো ঘর দিল। কিন্তু আমার ভাগ্যে একটা ঘরও জুটলো না। জীবনের শেষ বেলায় বসবাসের জন্য একটি ঘরের জন্য আকুতি জানান এই নারী। এ প্রসঙ্গে পরানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইলিয়াস খান বলেন, মিরজান বিবি রাস্তার ধারে দুর্বিসহ জীবন-যাপন করছেন। তার বিধবাভাতার একটি কার্ড রয়েছে। এ কারণে তাকে আর অন্য কোনো সহায়তা দেওয়া সম্ভব হয়নি। সরকারি একটি ঘর পেলে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেতেন।