চট্টগ্রাম

মিরসরাইতে রহস্যের আগুনে পুড়ল ৬ হিন্দু বসতি

  প্রতিনিধি ২৮ মার্চ ২০২১ , ৫:১০:৪২ প্রিন্ট সংস্করণ

আশরাফ উদ্দিন, মিরসরাই প্রতিনিধিঃ

 

মিরসরাইতে রহস্যজনক অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ৬ হিন্দু পরিবারের বসতি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে ৫০ কোটি টাকার সম্পতি সংক্রান্ত বিরোধের জেরেই এই অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত। অগ্নিকান্ডের ঘটনায় পরিবারের লোক জড়িত থাকতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন স্থানিয় চেয়ারম্যান কবির নিজামি।

 

গত শনিবার (২৭ মার্চ) দিবাগত রাত পৌনে ২টায় উপজেলার মায়ানী ইউনিয়নের পূর্ব মায়ানী গ্রামের মনু ভূঁইয়া পাড়ার শীল বাড়িতে এসব অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রাত পৌনে ২টায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এসময় পরিবারের লোকজনের চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। মিরসরাই ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। অগ্নিকান্ডের ঘটনায় বাষুদেব শীল, জয়দেব শীল, রঞ্জিত শীল, নয়ন শীল, স্বপ্না রাণি শীল ও সহদেব শীলের বসতঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তবে এতে হতাহতের কোন ঘটনা ঘটেনি। ঘটনার রাতে ও রবিবার সকালে ঘটনাস্থলে পরিদর্শণ করেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (মিরসরাই সার্কেল) লাবিব আব্দুল্লাহ, মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সুবল চাকমা ও মিরসরাই থানার ওসি মজিবুর রহমান।

এসময় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসা স্থানীয় মায়ানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কবির আহম্মদ নিজামী বলেন, ‘এটি কোন সাম্প্রদায়িক ঘোষ্ঠীর নাশকতার আগুন নয়। এখানে ৫০ কোটি টাকা মূল্যের একটি জমি নিয়ে পাশ^বর্তী দুটি পরিবারের বিরোধ চলছে। ওই জমি এসব হিন্দু পরিবারগুলোর পূর্বপুরুষের। পরিবার গুলো বিরোধ পূর্ণ দুটি পক্ষের মধ্যে একটি পক্ষের সমর্থক। আমরা ধারণা করছি বিরোধ ও সমর্থনকে কেন্দ্র করে পরিকল্পিত অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে।’

তিনি আরো বলেন, অগ্নিকান্ডের আগে সবকটি বসতির বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় ও গ্যাসের সিলিন্ডার গুলো গ্যাস শুন্য করা হয়। এছাড়া বসতির বাসিন্দাদের সবাই তাদের জায়গা জমির দলিল ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজ পত্র সংরক্ষনে রাখে ও অনেকেই নিজ ঘরের আগুন না নিবিয়ে মোবাইলে ভিড়িও ধারণে ব্যস্ত ছিল। সব দিক বিবেচনায় অগ্নিকান্ডের বিষয়টি রহস্য মূলক ও নাশকতা বলে মনে হচ্ছে।

মিরসরাই উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নুপুর ধর ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বলেন,

‘এখানকার ৪টি ঘরে বিদ্যুত লাইন ছিল না। আর সবকটি ঘরে একযোগে আগুন লাগে। এটি কোন সাধারণ অগ্নিকান্ডের ঘটনা নয়। তবে কোন সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীও ঘটনাটি ঘটায়নি। আমরা এ ঘটনার নিন্দা প্রকাশ করছি। পাশাপাশি প্রশাসনের কাছে বিষয়টি গভীর তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’ এসময় তাঁর সাথে উপস্থিত ছিলেন মিরসরাই উপজেলা যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি কল্যাণ রায় ও ছাত্র ঐক্য পরিষদের সভাপতি সৈকত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক নয়ন শর্মা।

 

মিরসরাই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা ইমাম হোসেন পাটোয়ারি জানান, প্রাথমিকভাবে দারণা করা হচ্ছে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। তবে বিষয়টি আমরা গভীরভাবে তদন্ত করে দেখছি।

মিরসরাই থানার ওসি মজিবুর রহমান জানান, এটি সাম্প্রদায়িক কোন নাশকতা নয়, ফায়ার সার্ভিসের ভাষ্যমতে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। তবে অগ্নিকান্ডের ঘটনা আমরা গভীরভাবে তদন্ত করছি। সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এদিকে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সুবল চাকমা জানান, আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করছেন মিরসরাই থানার অফিসার ইনচার্জ মজিবুর রহমান। এখনো এ বিষয়ে চূড়ান্ত কিছু বলার সময় আসেনি। আগে তদন্তের কাজ শেষ হউক।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by