চট্টগ্রাম

মিরসরাইয়ে অনিয়ন্ত্রিত কিশোর গ্যাং

  আশরাফ উদ্দিন ২৩ এপ্রিল ২০২৪ , ৩:৪৪:৩২ প্রিন্ট সংস্করণ

মিরসরাইয়ে অনিয়ন্ত্রিত কিশোর গ্যাং

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং। মাদক বাণিজ্য, চুরি, ছিনতাই,ডাকাতি ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়ত হানাহানি ও মারামারির ঘটনা ঘটছে। কিশোর গ্যাং এর দৌরাত্ম্য ও অপরাধ কর্মকাণ্ড বাড়লেও নির্বিকার পুলিশ প্রশাসন। থানায় অভিযোগ দিয়েও বিচার পাচ্ছে না ভুক্তভোগীরা।

সাম্প্রতিক মিরসরাইয়ের ১৬ নং সাহেরখালী ইউনিয়নে কিশোর গ্যাং এর দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের ১০ জন আহত হয়েছে। রবিবার ( ২১ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৮ টায় উপজেলার ১৬নং সাহেরখালী ইউপির ০৮নং ওয়ার্ডস্থ ডোমখালী আনু ভূঁইয়া বাড়ির সামনে সড়কে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

ঈদের দুই দিন আগে ৯ এপ্রিল রাতে মিরসরাই পৌর বাজারে স্থানীয় সাংবাদিক আশরাফ উদ্দিনের উপর অতর্কিত হামলা চালায় সংঘবদ্ধ মোটরসাইকেল চোর ও কিশোর গ্যাং সদস্যরা। এর পরদিন জোরারগঞ্জ থানার গোপিনাথপুর এলাকায় সাবেক সেনা সদস্যের নগদ টাকা, মোবাইল ও মোটরসাইকেল ডাকাতি করে নিয়ে যায় স্থানীয় ছাত্ররাজনীতির সাথে জড়িত চিহ্নিত কিশোর গ্যাং সদস্যরা। ঈদের ৩ দিন আগে মিরসরাই সদর ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বদরুদ্দোজার বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতির ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও মামলা নেয়নি মিরসরাই থানা পুলিশ।

ঈদের দুই দিন পর একই কায়দায় ওয়ারলেস এলাকায় মাদবার বাড়িতে ডাকাতি করতে গিয়ে ধরা পড়ে এক ডাকাত। ডাকাত আটকের পর ঘন ধোলাই দিয়ে পুলিশের রোষানলে পড়ে ডাকাত আটককারীরা। পুলিশি হয়রানির ভয়ে ডাকাতির ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিতে সাহস পায়নি ভুক্তভোগী পরিবার। ঈদের মাত্র ৫ দিন পূর্বে মিরসরাই প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ের পাশে একটি ভাড়া বাসার পার্কিং থেকে একটি মোটরসাইকেল চুরি হয়ে যায়।

মোটরসাইকেল চুরির ভিড়িও ফুটেজ সহকারে মিরসরাই থানায় চুরির মামলা করতে গেলে মামলা নেয়নি থানা পুলিশ। অনেক দেন দরবারের পর ২ দিন পরে পুলিশের ইচ্ছায় হারানো জিডি করতে বাধ্য করা করা হয়।এসব কিশোর গ্যাং ও তাদের নেতৃত্বে থাকা জনপ্রতিনিধি কিংবা রাজনৈতিক ব্যক্তিরা এলাকা ভিত্তিক মাদক বাণিজ্য ও অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকেন। চুরি ছিনতাই ডাকাতি মাদক বাণিজ্য কিংবা মারামারির ঘটনায় কিশোর গ্যাং এর সদস্যরা চিহ্নিত হয়ে গেলে কিংবা ধরা পড়ে গেলে তখন মামলা না করে সমঝোতার চেষ্টা করা করেন তাদের আশ্রয় প্রশোয়দাতারা।

রবিবারে মিরসরাইয়ের ১৬ নং সাহের খালীতে কিশোর গ্যাং এর দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় পক্ষের ১০ জন আহত হয় । আহতরা হলো গজারিয়া কাশেম মুক্তার বাড়ির প্রবাসী মোসলেম উদ্দিনের ছেলে কিশোর গ্যাং লিডার মোশাররফ হোসেন জিসান (২২), তার চাচাতো ভাই ও কিশোর গ্যাং সদস্য মাহমুদুল হাসান অহি (২২), জাবেদ হোসেন (২১) ও মো. সবুজ (২২)। অপর দিকে মোশাররফ হোসেন জিসান গ্রুপের হামলায় প্রতি পক্ষের এক নারী সহ ৬ জন আহত হয়েছেন।

আহতরা হলেন, সরোয়ার হোসেন রিপন (৩৪), মো. মনছুর (৩৬), মো. ইসলাম (২৮), মোঃ বেলাল হোসেন ( ৩০), মো. মিন্টু(৪৫) ও মো. বাচ্চু(৪৫)। এছাড়া আরও এক নারী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৬ সাহেরখালী ইউনিয়নের ডোমখালী, গজারিয়া বাজার, ভোরের বাজার ও ভেড়িবাদ এলাকায় মাদক বাণিজ্য, চুরি, ছিনতাই নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে কিশোর গ্যাং লিডার মোশাররফ হোসেন জিসান ও প্রতিপক্ষ সরোয়ার হোসেন রিপনের অনুসারীদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি হয়। বিবাদকে কেন্দ্র করে মোশাররফ হোসেন জিসানের কিশোর গ্যাং সদস্য স্কুল ছাত্র পলাশ ( ১৭) এর সাথে রিপনের অনুসারীদের সাথে রবিবার দুপুরে কথাকাটাকাটি হয়।

কথাকাটাকাটিকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে রাত সাড়ে ৮ টার দিকে মোশাররফ হোসেন জিসানের নেতৃত্বে কিশোর গ্যাং এর ১৮ থেকে ২০ জন জড়ো হয়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে রিপন গ্রুপের সদস্যদের উপর হামলা চালায়। আগে থেকে খবর পেয়ে প্রস্তুতি নিয়ে থাকে রিপন গ্রুপের সদস্যরা। ফলে উভয় গ্রুপের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের ১০ থেকে ১২ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে কয়েকজন স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিলেও গুরুতর আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।

সংঘর্ষের ঘটনায় মিরসরাই থানা পুলিশ এক পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করলেও অপর পক্ষকে অভিযোগের দেয়া হয়নি । এ ব্যাপারে সরোয়ার হোসেন রিপন বলেন, এলাকায় সকল বৈধ অবৈধ ব্যবসা বাণিজ্য মোশাররফ হোসেন জিসান নিয়ন্ত্রণ করছে। সে এসব অবৈধ বাণিজ্য থেকে প্রশাসন ও যুবলীগের এক নেতাকে ভাগ দেয়। ফলে এলাকায় যা ইচ্ছে তাই করছে সে। যাকে ইচ্ছা মারধর করে তার সাথে ইচ্ছা বেয়াদবি করছে। কোন ময়মুরুব্বি মানে না কাউকে ইজ্জত সম্মান দেয় না। এলাকায় ইয়াবা ফেনসিডিল বাংলা মদ গাঁজা সহ সকল ধরনের মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে তার কিশোর গ্যাং।

কেউ ভয়ে কথা বলে না। কেউ কোনো প্রকার প্রতি উত্তর করলে নিজামপুর কলেজ, বড় দারোগারহাট ও মিরসরাই থেকে ভাড়াটে সন্ত্রাসী এনে এলাকায় মহড়া দিয়ে আতঙ্ক ছড়ায়। যাকে তাকে মারধর করে। তার ব্যাপারে থানায় অভিযোগ দিলে রহস্যজনক কারণে অভিযোগ নেয়া হয় না। এখন নিরুপায় হয়ে মানুষ তার অত্যাচারের প্রতিবাদ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছে। হামলা করে এই কিশোর গ্যাং সদস্যরা পুনরায় প্রশাসনের সহযোগিতায় স্থানীয় লোকজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছে।

কিশোর গ্যাং এর হামলায় যারা যারা আহত হয়েছে তাদেরকেই মামলার আসামি দেখানো হয়েছে। আহতদের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ দিতে গেলে থানা পুলিশ তাদেরকে থানা থেকে বের করে দেয়। ১৬ নং সাহেরখালী ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড সদস্য মোহাম্মদ নুর উদ্দিন বলেন, এলাকার প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়ত এ ধরনের ঘটনা ঘটে। আজকের ঘটনা একটু অন্যরকম হওয়াতে জানাজানি হয়েছে।

৮ নং ওয়ার্ড সদস্য সাখাওয়াত হোসেন চৌধুরী দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এখন পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে এসব কিশোর গ্যাং এর কাছে জনপ্রতিনিধিদের ও কোন দাম নেই। তারা ক্যাডার ভিত্তিক রাজনীতি করে। এলাকায় সামান্য সমস্যা হলেই বাহির থেকে লোক নিয়ে এলাকার লোকজনের উপর হামলা করে। এই কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সাহের খালীতে গত কয়েক বছরে কিশোর গ্যাং এর হাতে ২ টি খুন হয়েছে।

নতুন খুন হয়ত যে কোন মুহূর্তে হতে পারে। তাই সাহের খালী ইউনিয়নের কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by