করোনাভাইরাস

যে কারণে দেশে ফের চোখ রাঙাচ্ছে করোনা

  প্রতিনিধি ১৪ মার্চ ২০২১ , ৮:৪৩:৪৪ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের দর্পণ ডেস্ক:

সম্প্রতি দেশের নতুন করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে গেছে। যুক্তরাজ্য থেকে করোনার নতুন স্ট্রেইন ছড়িয়ে পড়ার পর বাংলাদেশে শনাক্ত হয়েছিল জানুয়ারিতে। তবে তা এতোদিন গোপন ছিল। মার্চে এসে তা প্রকাশ করল সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাজ্যের নতুন স্ট্রেইন দ্রুত ছড়ায়। দুই মাসের বেশি সময় আগে বাংলাদেশে তা শনাক্ত হয়েছে। এর কারণে দেশে সংক্রমণ বাড়তে পারে। আবার রেসপিরেটরি রুটে একটা ভাইরাস ঢুকলে অন্য ভাইরাসকে ঢুকতে দেয় না। শীতকালে সর্দি-কাশির মতো অন্য ভাইরাস খুব বেশি সংক্রমিত হয়েছিল। এসব দেশি ভাইরাস ঢুকার ফলে হয়তো করোনাভাইরাস ঢুকার সুযোগ পায়নি। সে কারণে হয়তো শীতকালে সংক্রমণ কমে গিয়েছিল। এখন শীতকালের ভাইরাস কমে যাওয়ায় করোনা ভাইরাস সুযোগ পেয়ে গেছে। সে কারণেও বাড়তে পারে। তবে বাড়লেও তা ১০ শতাংশের বেশি বাড়ার আশঙ্কা কম।

কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম এবং সার্স ভাইরাসের কিট উদ্ভাবক ও করোনাভাইরাস শনাক্তের ‘জি র‌্যাপিড ডট ব্লট’ কিটের উদ্ভাবক ড. বিজন কুমার শীল গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান।

এ বিষয়ে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম জানান, যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশে জানুয়ারিতে শনাক্ত হয়।

বর্তমানে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, অনেকে সন্দেহ করছে যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্টের কারণে বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু ওই ভ্যারিয়েন্ট সারাদেশে ছড়িয়ে গেছে আগের ভ্যারিয়েন্টকে রিপ্লেস করে- এটা এত তাড়াতাড়ি সম্ভব না। সুতরাং এ একটা জিনিস দিয়ে এটাকে ব্যাখ্যা করা যাবে না। আরও অন্য ফ্যাক্টর থাকতে পারে।

এ বিষয়ে ড. বিজন কুমার শীল গণমাধ্যমকে বলেন, আজকে সারাবিশ্বের করোনা সংক্রমণের স্ট্যাটাস দেখতে গিয়ে দেখি যে, হঠাৎ করে সংক্রমণ জাম্প করেছে। বিষয়টা নিয়ে বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আলাপ করলাম। তারা বললেন, বাংলাদেশে সম্ভবত ব্রিটিশ ভ্যারিয়েন্টটা জানুয়ারি মাসেই আইসিডিডিআরবি শনাক্ত করেছিল। এই ভাইরাসটা বাংলাদেশে সমস্যা সৃষ্টি করার পর্যায়ে আছে আর কী। আমেরিকা, ইউরোপ, জার্মানিতেও এ ভাইরাস অধিকাংশ ক্ষেত্রে পাওয়া যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ভাইরাসটা যদি দুই মাস আগে পাওয়াই গিয়ে থাকে, তাহলে দেরি করা উচিত হয়নি। আমি যতটুকু শুনেছি, ৫ জানুয়ারি শনাক্ত করা হয়েছিল। তারা হয়তো বলেনি বা উপেক্ষা করে গেছে। এসব ক্ষেত্রে উপেক্ষা করা ঠিক না। যুক্তরাজ্যের ভাইরাস অনেক সময় বিদ্যমান ইমিউন সিস্টেমকে ভেদ করে চলে যেতে পারে।

এদিকে করোনার সংক্রমণ বাড়ার কারণ হিসেবে সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গণমাধ্যমকে বলেন, মানুষজন সামাজিক দূরত্ব মানছে না এবং মাস্ক পরছে না। সে কারণেই এখন সংক্রমণের হার বেশি। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আমরা পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। আর লোকজনের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, তারা পেছনে ফিরে যেতে চায়। যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপে কী ঘটেছে তা আমরা দেখতে চাই না। সামাজিক ও রাজনৈতিক সমাবেশ সীমিত করতে আমরা ইতোমধ্যে দেশব্যাপী ডিসিদের নির্দেশনা পাঠিয়েছি।

শিগগিরই স্বাস্থ্যবিধি মানার আহ্বান জানিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রচার করা হবে বলেও জানান তিনি।

২০২০ সালের মার্চে দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হওয়ার পর দৈনিক শনাক্তের হার কিছুদিন কম ছিল। গত বছরের মে মাসের মধ্যবর্তী সময় থেকে শনাক্তের হার বেড়ে ২০ শতাংশেরও বেশি হয়। যা গত আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এরপর থেকে দৈনিক শনাক্তের হার কমতে থাকে। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি দেশে সর্বনিম্ন করোনার হার ছিল দুই দশমিক ২৬ শতাংশ। কিন্তু মার্চ থেকে আবার তা বাড়তে থাকে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ৯ মার্চ দেশে দৈনিক শনাক্তের হার পাঁচ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়।

স্বাস্থ্য অধিপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশিদ আলম বলেন, মানুষের অসতর্কতা সত্যিই হতাশাব্যঞ্জক। ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নেওয়ার পর অনেকেই ভাবছেন তারা এখন নিরাপদ। কিন্তু বিষয়টি তো তেমন নয়। যদি মানুষ বিপদ সম্পর্কে সচেতন না থাকে, তাহলে আমাদের কী করার আছে?

এদিকে করোনাভাইরাসে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও ১৮ জন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৮ হাজার ৫৪৫ জনে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা শনাক্ত হয় ১ হাজার ১৫৯ জনের শরীরে। যা গত আড়াই মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এ নিয়ে দেশে মোট করোনা শনাক্ত দাঁড়াল ৫ লাখ ৫৭ হাজার ৩৯৫ জন।

এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যানুযায়ী, রোববার (১৪ মার্চ) সকাল পর্যন্ত বিশ্বে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১২ কোটি ৪২ হাজার ৮৭ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২৬ লাখ ৫৯ হাজার ১১৮ জনের। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৯ কোটি ৬৫ লাখ ৮০ হাজার ১৩৯ জন।

করোনায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও মৃত্যু হয়েছে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রে। তালিকায় শীর্ষে থাকা দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ৩ কোটি ৪৩ হাজার ৬৬২ জন। মৃত্যু হয়েছে ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৬০৫ জনের।

আক্রান্তে ও মৃত্যুতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ব্রাজিলে এখন পর্যন্ত সংক্রমিত হয়েছেন এক কোটি ১৪ লাখ ৩৯ হাজার ২৫০ জন এবং মারা গেছেন ২ লাখ ৭৭ হাজার ২১৬ জন।

আক্রান্তে তৃতীয় এবং মৃত্যুতে চতুর্থ অবস্থানে থাকা ভারতে এখন পর্যন্ত করোনায় এক কোটি ১৩ লাখ ৫৮ হাজার ৬৪৪ জন সংক্রমিত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে এক লাখ ৫৮ হাজার ৬৪২ জনের।

আক্রান্তের দিক থেকে চতুর্থ স্থানে রয়েছে রাশিয়া। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৩ লাখ ৮০ হাজার ৫২৫ জন। ভাইরাসটিতে মারা গেছেন ৯১ হাজার ৬৯৫ জন।

আক্রান্ত ও মৃত্যুর হিসাবে যুক্তরাজ্য রয়েছে পঞ্চম স্থানে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৪২ লাখ ৫৩ হাজার ৮২০ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন এক লাখ ২৫ হাজার ৪৬৪ জন।

এদিকে আক্রান্তের তালিকায় ফ্রান্স ষষ্ঠ, স্পেন সপ্তম, ইতালি অষ্টম, তুরস্ক নবম এবং জার্মানি দশম স্থানে আছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের অবস্থান ৩৩তম।

২০১৯-এর ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২১৮টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে কোভিড-১৯।

Powered by