প্রতিনিধি ৫ অক্টোবর ২০২০ , ৩:২৮:৫০ প্রিন্ট সংস্করণ
বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক। পিতা মরহুম মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশীদ চৌধুরীর সাথে চট্রগ্রামের হালিশহরে কমান্ডার বাইল্লা মিয়ার অধীনে মুক্তিযোদ্ধে অংশগ্রহন করেছেন। অস্ত্রহাতে যুদ্ধ না করলেও মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার সরবরাহ, আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা করা সহ নানাবিধ কার্যক্রমে অংশগ্রহন করতে গিয়ে পাক বাহিনীর গুলিতে হয়েছিলেন আহত।
হারিয়েছেন বা পায়ের একটা আঙ্গুলও। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে জেনারেল অরোরার কাছ থেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে একটি সনদও পেয়েছিলেন। কিন্তু ঠিকমতো সংরক্ষণ করতে না পারায় তা হারিয়ে যায়। চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষের সময় যুদ্ধ বিজয়ী নবগঠিত বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পিয়ন এর চাকরী পেয়েছিলেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর স্বৈরশাসক জিয়ার আমলে ২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭৭ সালে চক্রান্ত করে মিথ্যা চুরির অভিযোগে তাকে চাকরীচ্যুত করে জেলে পাঠানো হয়। জেল থেকে বেরোনোর পর থেকে আজ অবধি রাজধানী ঢাকা শহরে তিনি রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি কোনো সনদ পাননি। তাই মিলছে না মুক্তিযোদ্ধা ভাতা । বহু কষ্টে মানুষ করা একমাত্র ছেলে ইমরান করোনাকালে কর্মহীন। তাই বাধ্য হয়ে এই ৭৫ বছর বয়সে এসেও রণাঙ্গনের এই মুক্তিযোদ্ধা আজ রাজধানীর রিকশাচালক। দুর্ভাগ্যক্রমে আমি আজ তার রিক্সার আরোহী হয়েছিলাম।
পথে যেতে যেতে তার কাহিনী শুনে বিবেকের ভারে আক্রান্ত হয়ে তাকে নিয়ে বসলাম দিলকুশা সমাজ উন্নয়ন সংস্থায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জম্মদিন উপলক্ষে ওই সংস্থায় আজ ওয়ার্ড যুবলীগের সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম চৌধুরী নুরুর উদ্যোগে পথশিশু ও অসহায়দের মাঝে খাবার বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল। মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেককে নুরু ভাইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতেই তিনি তাঁকে সেখানে বসিয়ে মন ভরে খাওয়ালেন। সাথে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য আরও কিছু প্যাকেট দিয়ে দিলেন। যুবলীগ নেতা নুরু ভাই তাঁকে যে কোন সময় প্রয়োজন পড়লে যেন ফোন করে যোগাযোগ করে সে জন্য ফোন নাম্বার দিয়ে দিলেন।
খাওয়ার মাঝেই তার কিছু কথা ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোজাম্মেল হক ভাইয়ের আপন ছোটভাই রায়হান ভাইয়ের সাহায্যে ভিডিও ধারণ করলাম। বর্তমানে এই মুক্তিযোদ্ধা বৃদ্ধ আব্দুল মালেক রামপুরা আনন্দনগরের পাশে আলিফ নগর সাঁকোর পারে চান্দু ম্যানেজারের বস্তিতে সস্ত্রীক বসবাস করছেন।
নিদারুণ অর্থকষ্টে, চিকিৎসাহীন কোন রকম চলছে তার জীবন। মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণেই আজ আমরা এই দেশে আনন্দের সাথে, স্বাধীণভাবে নিজ পরিচয়ে বসবাস করি। আমাদের এই স্বাধীন জীবনের জন্য দায় রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেকের কাছে। সেই দায়মুক্তির জন্যই আমার এই লেখা ।