প্রতিনিধি ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ , ৪:১৪:১৩ প্রিন্ট সংস্করণ
ভোরের দর্পণ ডেস্ক:
মিয়ানমারে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সংঘটিত গণহত্যা মামলার গণশুনানি শুরু হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিজে)। আগামীকাল সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) এই শুনানি শুরু হয়ে চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা বন্ধ বা দোষীদের শাস্তি দিতে ব্যর্থ হওয়ায় গাম্বিয়া ২০১৯ সালের নভেম্বরে আইসিজেতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও গ্লোবাল জাস্টিস সেন্টার জানিয়েছে, এই শুনানি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নির্যাতনের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ।
সংস্থা দুইটি আজ রবিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) এ মামলার সাম্প্রতিক অগ্রগতি নিয়ে একটি কিউঅ্যান্ডএ (প্রশ্নোত্তর) নথি প্রকাশ করেছে। এতে অন্তর্ভুক্ত আছে মিয়ানমারে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারির সামরিক ক্যুর বিস্তারিত বর্ণনা।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিপীড়নের শিকার হয়ে অন্তত ১০ লাখ রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। মিয়ানমারে সামরিক দমন-পীড়নের ফলে ২০১৭ সালে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক রোহিঙ্গা প্রবেশ করে। জাতিসংঘ যাকে ‘গণহত্যার অভিপ্রায়’ বলে অভিহিত করেছে।
গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলায় মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচারের মাধ্যমে বিভিন্ন গণহত্যা প্রতিরোধ স্মারক ও চুক্তির লঙ্ঘন হয়েছে বলে অভিযোগ আনা হয়। এ মামলা কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা নয়, বরং এর মাধ্যমে একটি সমগ্র জাতিকে গণহত্যার জন্য দায়ী করা হয়েছে।
এর আগে গাম্বিয়ার অনুরোধে আইসিজে ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি নেদারল্যান্ডসের হেগে মিয়ানমারের প্রতি রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় জন্য জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অন্তর্বর্তী আদেশ দিয়েছিলেন। মূলত দেশটিতে থেকে যাওয়া ছয় লাখ রোহিঙ্গার নিরাপত্তায় এই আদেশ দেওয়া হয়।
সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, আইসিজে মিয়ানমার সরকারকে চারটি অস্থায়ী ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন। এর মধ্যে আছে গণহত্যা প্রতিরোধ, সামরিক ও পুলিশ বাহিনী যাতে গণহত্যা না করে তা নিশ্চিত করা, গণহত্যা সংক্রান্ত প্রমাণাদি সংরক্ষণ এবং চার মাসের মধ্যে এসব আদেশ পালন করা বিষয়ে প্রতিবেদন দেওয়া। এই প্রতিবেদন প্রতি ছয় মাস পর পর দিয়ে যেতে হবে। মামলার শুনানির ভিত্তিতে আইসিজে এ আদেশ দেন।
তবে ২০২১ সালের সামরিক ক্যুর পর থেকে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা গণহত্যা, নির্যাতন, সহিংসতা, হয়রানিমূলক গ্রেপ্তার ও বিভিন্নভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
তাদের অভিযোগ, ১০০ শিশুসহ প্রায় এক হাজার ৫০০ জনকে হত্যা করেছে নিরাপত্তা বাহিনী এবং ১১ হাজারেরও বেশি মানুষকে হয়রানি করার জন্য আটক করেছে। আটকদের মধ্যে আছেন মানবাধিকার কর্মী, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও অন্যান্যরা। রাখাইন রাজ্য ছেড়ে যারা পালানোর চেষ্টা করেছেন, তাদের ওপর বড় আকারের শাস্তি নেমে এসেছে।
২০১৯ সালে মিয়ানমার সরকার দেশটির সাবেক নেত্রী অং সান সুচিকে আইসিজের প্রতিনিধি দলের দায়িত্ব দেয়। কিন্তু ২০২১ সালের ক্যুর সময় সামরিক বাহিনী তাকে আটক করে। পরে বিভিন্ন মামলায় তাকে ১৫০ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। এরপর আদালতে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য সামরিক জান্তার আট জ্যেষ্ঠ সদস্যের সমন্বয়ে একটি প্যানেল গঠন করা হয়।
আগামীকাল থেকে শুরু হতে যাওয়া শুনানিতে আইসিজের মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার আছে কি না, সে বিষয়ের ওপর মিয়ানমার ও গাম্বিয়ার প্রতিনিধিরা যুক্তি দেবেন।
চলমান করোনাভাইরাস মহামারির পরিপ্রেক্ষিতে হাইব্রিড ফর্মেটে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। আদালতের কিছু সদস্য গ্রেট হল অব জাস্টিসে উপস্থিত থেকে ও বাকিদের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিচারিক কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ওয়েবসাইটে কিউঅ্যান্ডএ নথিটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। -ডেইলি স্টার