প্রতিনিধি ৩০ মে ২০২০ , ৫:২৫:২৮ প্রিন্ট সংস্করণ
রাসেল মিয়া, মহম্মদপুর (মাগুরা) : বাবা দীর্ঘদিন থেকে হার্টের রোগে ভুগছেন। কাজ করতে পারেন না। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছেলে লাল চাঁদ। অভাব অনটনে কোন রকম চলে তাদের সংসার। দারিদ্রতা থেকে পরিত্রাণের জন্য ধারদেনা এবং এনজিওর ঋণের টাকায় লাল চাঁদকে লিবিয়ায় পাঠায় বাবা ইউসুফ আলী। কিন্তু স্বপ্ন পূরণ তো দূরের কথা; সন্তান এবং সম্পত্তি হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন বাবা–মা।
লিবিয়ায় বাংলাদেশী মানব পাচারকারী চক্রের কাছে অপহৃত হওয়ার পর অপহরনকারীদের হাতে গুলিতে খুন হওয়া ২৬ বাংলাদেশী মধ্যে রয়েছে মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার নারানপুর গ্রামের লাল চাঁদ (২৫)। এক সাথে যাওয়া একই গ্রামের আরেক যুবক ফুল মিয়ার ছেলে তরীকুল ইসলামও (২০) অপহরনকারীদের হাতে গুলিবিদ্ধ হন। তবে তিনি লিবিয়ার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বলে জানা গেছে। লাল চাঁদের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে তার পরিবারের কান্না থামছে না। তাদের স্বজনদের আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। পাড়া–প্রতিবেশিরা শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের সান্তনা দিচ্ছেন।
নিহত লাল চাঁদের পিতা ইউসুফ আলী জানান, ছেলের টাইলস মিস্ত্রির কাজের মাধ্যমে কামাল সাহেব নামে এক ব্যক্তির সাথে পরিচয় হয়। সে আমার ছেলেকে লিবিয়ায় পাঠায়ে টাইলস মিস্ত্রির কাজ দেবে বলে। চার বছর আগে আমার কাছ থেকে ৪লাখ টাকা নেয়। নেবে নেবে বলে কিন্তু নেয় না। পরে গত বছর ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আরো দেড় লাখ টাকা নিয়ে তাকে নিয়ে যায়। পরে শুনি তাকে আটকে রাখা হয়েছে। কাজ দেয়নি। ঈদুল ফিতরের দুই দিন আগে আমার কাছে ফোন আসে আরো দশ লাখ টাকা না দিলে তাকে ছাড়া হবে না। তাকে মারপিট করতে থাকে। পরে খবর আসে লাল চাঁদকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছে।
নিহতের পিতা আহাজারি করে বলেন, আমি কাজ করতে পারি না। ছোট ছেলে তেমন কাজ করতে পারে না। পড়াশোনা বাদ দিয়ে যা পারে তা দিয়ে সংসার চলে না। অনেক আশা নিয়ে একদিকে সম্পত্তি শেষ করে ছেলেকে বিদেশ পাঠালাম। আশা পূরণ তো হয়নাই। আরেকদিকে ছেলেকে হারালাম।
বিনোদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শিকদার মিজানুর রহমান বলেন, লাল চাঁদের মরদেহ আইনী প্রক্রিয়া শেষে দ্রæত দেশে আনার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মিজানূর রহমান আহত ও নিহতের বাড়িতে যেয়ে খোজ খবর নিয়েছেন।