প্রতিনিধি ২৮ জুলাই ২০২০ , ৭:৩২:০৮ প্রিন্ট সংস্করণ
এমদাদুল হক, শ্রীপুর (গাজীপুর) : গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তা বাসস্ট্যান্ড এলাকার উভয় পাশে এক কিলোমিটার জুড়ে রয়েছে ব্যক্তিমালিকানাধীন বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। এর মাঝখানে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশের ফুটপাত ও ফুটপাতসংলগ্ন জমির মালিক সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। সেখানে বসানো হয়েছে দোকানপাট। গড়ে তোলা হয়েছে ট্রাক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও টেম্পোস্ট্যান্ড। আর এসব স্থাপনা থেকে পার্কিংয়ের নামে আদায় করা হচ্ছে চাঁদা। চাঁদা আদায় করছেন শ্রমিক নেতা মনির ও মোস্তফা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাওনা চৌরাস্তা ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা এ অভিযোগ করেন। মাওনা হাইওয়ে থানায় নতুন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ আর এম আল মামুন যোগদানের পর থেকে ফুটপাতে দোকান বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও জানান তারা।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা উড়াল সেতুর দক্ষিনের সীামানা থেকে উত্তরের সীমানা পর্যন্ত সড়কের দু’পাশে রয়েছে পাঁচ ফুট প্রশস্ত ফুটপাত। অথচ সেই ফুটপাত পথচারীদের ব্যবহারের সুযোগ নেই। টং দোকান, পোশাকের দোকান, খাবারের দোকানসহ নানা ধরনের দোকান বসার কারণে কোথাও পা ফেলার উপায় নেই। এ দৃশ্য কেবল মাওনা চৌরাস্তাতেই নয়, মহাসড়কের ভবানীপুর, বাঘের বাজার, মাষ্টারবাড়ী, এমসি বাজার, নয়নপুর এবং জৈনা বাজার এলাকায়ও এমন দৃশ্য দেখা যায়।
ওইসব বাজারের একাধিক বড়, মাঝারি ও ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ীরা জানান, মহাসড়ক তথা সড়ক ও জনপথের জায়গায় তারা ব্যবসা করেন। ব্যবসায়ের ধরণ ও আকার ভেদে ৩০ থেকে ৬০ হাজার টাকা জামানত, ৩ থেকে ৬ হাজার টাকা মাসিক ভাড়া এবং প্রতিদিন ২৫ থেকে ৫০ টাকা খাজনা দেন।
মহাসড়কের কোনো কোনো অংশে প্রতিনিয়ত গাড়ী পার্কিং করা হচ্ছে। এতে পথচারী ও যানবাহনের স্বাভাবিক চলাচলে ভোগান্তি বাড়ছে। নিয়মিত ঘটছে দুর্ঘটনা। এসব ঘটনা ব্যবসায়ী, বাজার ইজারাদার, হাইওয়ে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট কেউই অস্বীকার করছেন না। সড়ক ও ফুটপাত দখলের ব্যাপারে ব্যবসায়ী এবং বাজার ইজারাদার পরস্পরকে দোষারোপ করছেন। তবে নিয়মিত ব্যবস্থা নেয়ারও দাবী করছেন তারা। এদিকে, প্রশাসন দাবী করছেন নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান ও ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। এতে পথচারী ও যানবাহন চলাচলে ভোগান্তি কমছে না। মহাসড়কের কোনো অংশ ইজারা দেয়া হয়নি।
এ সড়কে চলাচলকারী ইমাম পরিবহনের চালক ফয়সাল আহমেদ বলেন, সড়কের পাশে গড়ে উঠা অস্থায়ী এসব দোকানপাটগুলো এখন আর অস্থায়ী নয়। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নানা পণ্য সাজিয়ে বসছে ব্যবসায়ীরা। এসব দোকানপাটের জন্য যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা ও দুর্ঘটনা ঘটছে। বাঘের বাজারের ইজারাদার সফিকুল ইসলাম সফিক বলেন, সরকারি নিয়মানুযায়ী তিনি বাজার ইজারা নিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা তুলছেন। বাজারে যারা জমির মালিক তারা তাদের দোকান ঘরের সামনের সরকারি বা ইজারাকৃত জায়গা জোর করে মোটা অংকের জামানত নিয়ে ব্যবসায়ীদের মাসিক ভাড়া দিয়ে থাকেন। এছাড়া বাজার বাসানোর সরকারি বাড়তি কোনো জায়গাও নেই। বাধ্য হয়ে অস্থায়ী ব্যবসায়ীরা মহাসড়কের অংশবিশেষ ও ফুটপাতে দোকানপাট সাজিয়ে বসে। এছাড়া কোনো উপায়ও নেই। ট্রাক শ্রমিক ফেডারেশন মাওনা আ লিক শাখার সভাপতি ও শ্রীপুর পৌরসভার কাউন্সিলর হাবিবুল্লাহ জানান, পণ্যবাহী ট্রাক পার্কিংয়ের জন্য কোনো নির্ধারিত জায়গা বরাদ্দ নেই। সাধারণত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দুই পাশেই ট্রাকগুলো পার্কিং করা হয়। বহুবার শ্রীপুর পৌরসভা ও জেলা প্রশাসকের কাছে মৌখিকভাবে ট্রাক স্ট্যান্ডের জন্য জায়গা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। তাঁর সংগঠনের অধীনে কমপক্ষে ৬’শ ট্রাক রয়েছে। এছাড়া ভাসমান ট্রাক রয়েছে কমপক্ষে দেড় হাজারের মতো বলেও জানান তিনি। মাওনা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ আর এম আল মামুন জানান, মাওনা চৌরাস্তা কাঁচা বাজারের জন্য মহাসড়কে গাড়ী পার্কিং বাড়ছে। সড়কের ওপর এবং ফুটপাত থেকে উচ্ছেদ করার কিছুক্ষণ পরই আবার এসে দোকান সাজিয়ে বসে। এসব বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়রসহ সংশ্লিলষ্টদের সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।