চট্টগ্রাম

খামার গড়ে স্বাবলম্বী হলেন লক্ষ্মীপুরের রাসেল

  প্রতিনিধি ১৭ জুন ২০২১ , ৬:৫২:২৯ প্রিন্ট সংস্করণ

জাহাঙ্গীর লিটন, লক্ষ্মীপুর:
সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা, কঠোর পরিশ্রম মানুষকে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়। তেমনি এক সফল মানুষ লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী গ্রামের কৃষক পরিবারের সন্তান রাসেল। ১ টি ছাগলে ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে ব্যবসা শুরু করে তিনি এখন একজন সফল ব্যবসায়ী। বর্তমানে তাঁর খামারে ৫০টি ছাগল ও ২৫টি গরু রয়েছে। এতে মূলধন দাঁড়িয়েছে এক কোটি টাকার ওপর।

গরু পালন, দুধ বিক্রি, গোবর, বায়োগ্যাস প্লান্ট, কেঁচো দিয়ে জৈবসার প্রস্তুত করে ১২ বছরে কোটিপতি বনে যান সফল এ উদ্যোক্তা। নিজ এলাকায় গড়ে তুলেছেন “রাসেল ডেইরি ফার্ম” নামক একটি প্রতিষ্ঠান। বাবা আবদুল হালিম, মা, ভাই ও স্ত্রীকে সাথে নিয়ে দেখভাল করেন তাঁর এ খামার। জানা যায়, ছোটবেলা থেকে ব্যাংকার হওয়ার ইচ্ছে থাকলেও পরিবারের চাপে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নে পড়তে হয়েছে বিজ্ঞান বিভাগে। কিন্তু পড়াশুনা বেশিদূর আর এগোয় নি। ছাত্রজীবন থেকে বাবার কাছ থেকে নেয়া ১০/২০ করে টাকা করে জমিয়ে শখের বশে ২০ হাজার টাকায় একটি ছাগল কিনেন তিনি।

ওই ছাগল থেকে ৩টি বাচ্চা হয়। বাচ্চাগুলো বড় করে বিক্রি করেন এক লাখ টাকা। ব্যবসার এক লাখ ও জমানো আরো ১ লাখ টাকা দিয়ে একটি শংকর জাতের গাভী ও উন্নত জাতের দুইটি ছাগল কিনেন তিনি। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। কঠোর পরিশ্রম আর সততার মাধ্যমে ১২ বছরেই কোটিপতি বনে যান সফল এই উদ্যোক্তা। রাসেল ডেইরী ফার্মে গিয়ে দেখা যায়, ৪০ শতাংশ জমির উপর খামার গড়ে তুলেছেন তিনি।

খামারে লোহার খাঁচায় সারি সারি বাঁধা রয়েছে বকনা গরু ও ছাগল। সফল খামারি রাসেলের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ২০১০ সালে ফিজিয়ান জাতের একটি গাভী থেকেই প্রজনন সম্প্রসারণ শুরু। বর্তমানে খামারে ২টি ষাঁড়, ১৫টি গাভী ও ১০টি বাছুরসহ ২৫টি গরু রয়েছে। বর্তমানে ১৫টি গাভী থেকে প্রতিদিন ১০০ লিটার দুধ পান তিনি। এছাড়া দেশীয় ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল, দেশী মোরগ-মুরগি, কবুতর পালনও শুরু করেছেন তিনি।

খামারি রাসেল বলেন, খামারে বাছুর হলো লাভের অংশ। বছর শেষে ৪০টি বাচ্চা হয় সাধারণত। বাছুর থেকে বছরে আয় হয় প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। বর্তমানে খামারে তার দেড় কোটি টাকার গরু ও ছাগল রয়েছে। খামারে বোয়ার, তোতাপুরি, হারিয়ানা, বিটল, শিরহি ও যমুনাপারি নামের জাতের ছাগল রয়েছে। গরুর খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় খরচ কমাতে কাঁচা ঘাসের কোনো বিকল্প নাই।

খরচ সাশ্রয় হলে খামারি লাভবান হতে পারবে। তিনি আরও বলেন, পরিশ্রম আর সততায় ব্যবসায় সফল হওয়া সম্ভব।’ স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হোসেন আহাম্মদ জানান, এ এলাকায় রাসেল বেকার যুবকদের একটা উদাহরণ। স্বল্প সময়ে পরিশ্রমের মাধ্যমে রাসেল তাঁর খামারের পরিসর বাড়াতে পেরেছেন। আত্মপ্রত্যয়ী এই যুবকের খামার দেখে বেকারত্ব দূর করতে অন্যরাও এগিয়ে আসবে বলে মনে করেন এই জনপ্রতিনিধি।

জেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আইয়ুব মিঞাঁ রানা বলেন, রায়পুরে সফল খামারি রাসেল গরু ও ছাগল পালন করে স্বাবলম্বী। তাঁর খামারের গবাদি পশুগুলোকে প্রাণী সম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে ভ্যাকসিন দেয়া হয়। পশু লালন পালনে তাঁকে নানা পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি সরকারি সহযোগিতার দেয়ার কথা জানালেন প্রাণী সম্পদ বিভাগের এই কর্মকর্তা।

 

আরও খবর

Sponsered content

Powered by