চট্টগ্রাম

সন্তানের দু-মুঠো ভাতের জন্য লক্ষ্মীপুরে নৌকার মাঝি মায়া বেগম

  প্রতিনিধি ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ , ৯:০৫:৪৩ প্রিন্ট সংস্করণ

জাহাঙ্গীর লিটন, লক্ষ্মীপুর:

শক্ত হাতে সংসারের হাল ধরতে নৌকার মাঝি হয়ে জীবন সংগ্রামে লড়ছেন মায়া বেগম নামের লক্ষ্মীপুরের এক নারী। সদর উপজেলার লাহারকান্দি ইউনিয়নের তালহাটি গ্রামের ওয়াপদা খালে খেয়া পারাপারেই দিন যাপন করছেন তিনি। যাত্রীদের থেকে নেয়া টাকায় স্বামীর রেখে যাওয়া তিন কন্যা সন্তানকে নিয়ে এখন ঢিমেতালে চলছে তার সংসার। এদিকে মায়ের কষ্ট লাঘবে তিন কন্যার রয়েছে উচ্চ শিক্ষিত হওয়ার স্বপ্নও।

 

এমন প্রেক্ষাপটে দারিদ্রতা কিংবা পৃষ্টপোষকতার অভাবে তাদের স্বপ্ন পূরণের বাস্তবতা কোথায় থমকে দাঁড়ায় তা জানেনা কেউই। তবে ওই নারীর পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিলেন স্থানীয় প্রশাসন।

একই সঙ্গে মায়ার মতো অন্যদের পাশেও থাকবেন বলে জানালেন জেলা প্রশাসক।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, লক্ষ্মীপুর সদরের লাহারকান্দি ইউনিয়নের তালহাটি ও চাঁদখালি গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ওয়াপদা খাল। খালটির এপাড় ওপাড়ে তালহাটি ও চাঁদখালি গ্রামে বাস করেন শত শত মানুষ। প্রতিদিন দুই গ্রামের খাল পাড়ের বাসিন্দা, কৃষক, শিক্ষার্থী, নারীরা স্থানীয় একটি খেয়া পারাপার হতে হয়। আর তাদের পারাপারের একমাত্র মাধ্যম হলো মায়া বেগমের নৌকা।

 

কাক ডাকা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শক্ত বৈঠা হাতে নৌকার মাঝি হয়ে অক্লান্ত পরিশ্রমের চাপ পড়ে তার শরীরে। তবুও থামেনি ব্যাতিক্রমী এ নারী। প্রতিদিন যাত্রী পারাপার করে জনপ্রতি ৫ টাকা হারে গড়ে মায়া বেগমের আয় হয় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। কখনো কেউ টাকা দেয় আবার কেউ দেয়না। ফলে কোনদিন ৫০-৬০টাকাও আয় হয় তার। তা দিয়েই নুনে-ভাতে ঢিমেতালে তার সংসার চলে বলে জানান মায়া।

মায়া আরো জানায়, তিন মেয়েকে নিয়ে স্বামীর সংসারে ছিলেন মায়া। হঠাৎ করে প্রায় ৮-১০ বছর আগে সংসার চালানোর অক্ষমতায় তাদের ছেড়ে অজ্ঞাত স্থানে চলে যান তার স্বামী। পরিবারের আর কেউ উপার্জনক্ষম না থাকায় সমাজের সাথে আপোষহীনভাবে সংগ্রামী হয়ে উঠেন মায়া।

 

এরপর জীবন-জীবিকার বাস্তবতায় হাতের ব্যাথায় মলম পড়ে রোজ, তবে মনের ক্ষত শুকায়না তার। স্থানীয় তালহাটি গ্রামে নিজেদের বাড়ীতে সন্তানদের নিয়ে মায়ের ঘরের পাশে খুপড়ি ঘরে বসবাস করেন তিনি। আর শক্ত হাতে সংসারের হাল ধরতে বৈঠা হাতে নৌকার মাঝি হলেন জীবন যোদ্ধা নারী ।

সন্তানদের দু-বেলা দু-মুঠো ভাত যোগানো আর তাদের শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে একাই জীবনযুদ্ধে লড়ছেন তিনি। মায়ার বড় ও মেঝো মেয়ে এবার চাঁদখালী উচ্চ বিদ্যালয়ে এবং ছোট মেয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছেন। যে নৌকা দিয়ে তার সংসার চলে, সেটিও পুরানো হয়ে গেছে এখন। কোন সাহায্যতো মিলেনা। কষ্ট করে মেয়েদের পড়াশুনা চালাতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।

 

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ জানান, নৌকায় জীবন চলা সংগ্রামী নারী মায়ার পরিবার ও তার সন্তানদের দায়িত্ব নেবে প্রশাসন। এছাড়া মায়ার মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অন্য সুবিধাবঞ্চিত নারীদেরও পাশে দাঁড়াবেন বলে আশ্বাস দেন জেলা প্রশাসক।

 

 

আরও খবর

Sponsered content

Powered by