দেশজুড়ে

সীতাকুন্ডে ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ বছর না পেরোতেই ধস

  প্রতিনিধি ২৯ আগস্ট ২০২০ , ৭:৩১:২২ প্রিন্ট সংস্করণ

কামরুল ইসলাম দুলু, (সীতাকুন্ড) চট্টগ্রাম : ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে সীতাকুন্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ নির্মাণ করার ১ বছর যেতে না যেতেই ধসে গেছে। ২ হাজার ১৫০ মিটার এবং ৪ দশমিক ৩ মিটার লম্বা বেড়িবাঁধের কাজ শুরু হয় গত বছর। এক বছরের মধ্যেই বাঁধের মাটি সরে বøক ধসে যাওয়ায় স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন আন্দোলনের পর পানি উন্নয়ন বোর্ড ইউনিয়নের ২ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করে। তারা আশঙ্কা করছেন বাঁধের বøক ধসে যাওয়ার ফলে বাঁধ ভেঙ্গে আবারো গ্রাম জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হবে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের জমাদার পাড়া এলাকার ৭ টি স্থানে, বোয়ালিয়া কুল এলাকার ৩ স্থানে এবং আকিলপুর এলাকার ১০ স্থানে বাঁধের বøক নিচের দিকে ধসে গেছে। যার ফলে বাঁধ ভেঙ্গে যেতে শুরু করেছে। স্থানীয় এলাকাবাসী বেড়িবাঁধের সংস্কারে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ করেছে। নি¤œমানের নুড়িপাথর, সিমেন্টও বালু ব্যবহারের ফলে বাঁধ রক্ষায় নির্মিত সিসি বøকগুলো স্থাপনের আগেই ভেঙে যাচ্ছে। ফলে ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দেও বাঁধটি টেকসই হয়নি বলে মনে করছেন তারা। এর আগেও বাঁশবাড়িয়ায় কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ ভাঙা বেড়িবাঁধের সংস্কারে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। জানা যায়, সীতাকুন্ডের বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের আকিলপুর, জমাদারপাড়া, বোয়ালিয়াক‚ল, আকিলপুর, সত্যপাড়া, মাঝামাঝি পাড়া গ্রামের সাগর উপক‚লে ২.১৫ কি.মি দীর্ঘ উপক‚ল রক্ষা বেড়িবাঁধ গত দেড় যুগ ধরে ভাঙতে ভাঙতে সাগরে বিলীন হয়ে যায়। এতে ওই এলাকার শত শত একর ফসলি জমিতে লোনা পানি ঢুকে ফসল উৎপাদন বন্ধসহ জোয়ারের সময় বাড়ি ঘরে রান্না বন্ধ হয়ে যেত। ফলে বাঁধ সংস্কারের দাবিতে মহাসড়কে মানববন্ধন, মিছিল, সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করে হাজার হাজার নর-নারী। এভাবে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের অনুরোধে এলাকার সংসদ সদস্য দিদারুল আলম পানি সম্পদমন্ত্রীকে বারবার সমস্যাটি অবগত করলে তিনি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এখানে স্থায়ী ও মজবুত বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ‘বেড়িবাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ অংশে তীর সংরক্ষণ’ প্রকল্পের মাধ্যমে বেড়িবাঁধ সংস্কারও শুরু হয়। জয়েন্ট ভেঞ্চার লি., রহমান ইঞ্জিনিয়ারিং ও ইউনুছ ব্রাদার্স নামক তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। পানি সম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বøক দিয়ে বাঁধ রক্ষা করা হবে সেই বøকই তৈরি হচ্ছে অত্যন্ত নি¤œমানের সরঞ্জাম দিয়ে। পাথর ও বালু ময়লাযুক্ত। ব্যবহারের আগে এগুলো ঠিকভাবে পরিষ্কারও করা হয় না। বøকে পাথরের সাইজ হবে ৪০ এমএম আর বালু হবে মোটা ২.৫ এফএম আয়তনের। বিধি মোতাবেক প্রতি বøক তৈরির নিয়ম ৬টি পাথর, ৩টি মোটা বালু, ১ বস্তা সিমেন্ট দেয়ার কথা থাকলেও নি¤œমানের ৩ বালতি পাথর, ৯ থেকে ১৩ বালতি স্থানীয় ১.২০ এফএম মাপের বালু, আর ১ বস্তা সিমেন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানা যায়। ফলে এসব বøক ধাক্কা দিলেই ভেঙে যাচ্ছে। যে সিসি বøক নিজেই দুর্বল সেগুলো দিয়ে বাঁধ রক্ষা হবে কীভাবে-এ প্রশ্ন এলাকাবাসীর। এব্যাপারে বাঁশবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান শওকত আলী জাহাঙ্গীর বলেন, এখানে যে মাটি দেওয়া হয়েছে তা বুলডোজার দিয়ে ফিনিশিং করা হয়নি। এস্কেভেটর দিয়ে সী সাইড থেকে বøকগুলো এনে বসিয়ে দিয়েছে, জাম্পিং না হওয়ার কারণে বøকগুলো দেবে গেছে। এখানে কাজের মান যথাযতভাবে হয়নি, বাঁধে যে বøক বসানো হয়েছে তা নিন্মমানের। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান বলেন, অমবস্যায় জোয়ারের পানি বেড়ে যাওয়ায় এবং সাগরে প্রচন্ড ঢেউ থাকার কারণে অনেকস্থানে বøক ধসে গেছে শুনেছি। তা শীগ্রই মেরামত করা হবে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by