রংপুর

সুস্বাদু রান্না খাওয়ার জন্য উলিপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে লোকজন আসেন মাহমুদা হোটেলে

  প্রতিনিধি ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৩:৫১:০৯ প্রিন্ট সংস্করণ

সুস্বাদু রান্না খাওয়ার জন্য উলিপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে লোকজন আসেন মাহমুদা হোটেলে

কুড়িগ্রামের উলিপুরে চাকচিক্যহীন মাহমুদা হোটেলে গরুর ভুনা মাংস ও ভাত খেতে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় ! প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে লোকজন শুধু খানা খাওয়ার জন্যই আসেন এখানে। স্বাদে অনন্য আর দামে কিছুটা সস্তা হওয়ায় মানুষ খেতে এসে এখানে সিরিয়াল দেন। এই চাকচিক্যহীন হোটেলের সুনাম ও পরিচিতি রয়েছে উপজেলা জুড়ে। প্রতিদিন ৬০ কেজি গরুর মাংস ও ৮০ কেজি চালের ভাত রান্না হয় এই দোকানে। উলিপুর পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্র গবা মোড়ের ভাঙা মার্কেটে অবস্থিত এই মাহমুদা হোটেল।


শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হোটেলের ভেতরে চেয়ার-টেবিল পাতা। হোটেলে বাহিরে গ্যাসের চুলায় রান্না করা হচ্ছে এক ডেকচিতে গরুর ভুনা মাংস, পাশে অন্য ডেকচিতে ভাত। হোটেলের ভেতরে ডালিতে গরুর কাঁচা মাংস রান্নার জন্য প্রস্তুত করে রাখা। ভোজনরসিক মানুষ এসে গরুর ভুনা মাংস দিয়ে ভাত খাচ্ছেন। হোটেলে রান্নার কাজ করছেন ২ জন। এছাড়া ৯জন কর্মচারী দোকান সামলাচ্ছিলেন। অনেকেই বাড়িতে সবাই মিলে খাওয়ার জন্য গরুর ভুনা মাংস কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকেই আবার দুপুরের খাবার খেতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। রাতের বেলাও একই অবস্থা।


হোটেলের মালিক মুকুল মিয়া বলেন, প্রতিদিন ৬০ কেজি গরুর মাংস ও ৮০ কেজি চিকন চালের ভাত রান্না হয় দোকানে। সাথে ডিম, ডাল, সবজি, ভর্তাও রান্নাও হয়। এক বাটি (তিন পিচ) মাংস বিক্রি করা হয় ১৩০ টাকা, ভুনা মাংস এক বাটি ১৫০টাকা, ১ প্লেট ভাত ২০ টাকা, ডিম প্রতিপিচ ২০টা, ডাল ১০ টাকা, ভর্তা ১০ টাকা ও সবজি প্রকার ভেদে ১০ থেকে ২০ টাকা বিক্রি করা হয়। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এই মাংস ও ভাত বিক্রি হয়ে থাকে।


মুকুল মিয়া আরও জানান, বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক থেকে নিয়মিত আমাদের এখানে খাবার অর্ডার করা হয়। এছাড়া অনেকেই এখান থেকে বাসা বাড়িতে রান্না করা মাংস নিয়ে যান। ২০১৭ সাল থেকে এখানে হোটেলের ব্যবসা করে আসছি। হোটেলটিতে একসঙ্গে ২৬ জন মানুষ খানা খেতে পারেন। প্রতিকেজি গরুর মাংস ৬৫০ টাকা ও চিকন চাল ৭৩টাকা কেজি দরে ক্রয় করতে হয়। ১১ জন কর্মচারীকে মজুরী বাবদ প্রতিদিন ৬ হাজার টাকা দিতে হয়।

দিন শেষে সব খরচ শেষে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকার আয় হয়ে থাকে তার। তিনি আরও বলেন, কয়েকমাস পূর্বে প্রতিদিন ৮০ কেজি মাংস বিক্রি হতো। কিন্তু মাংসের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ও মানুষের হাতে টাকা না থাকায় তার বিক্রি কিছুটা কমে গেছে বলে তিনি দাবী করেন।
মাহমুদা হোটেলে খেতে আসা উপজেলার গুনাইগাছ ইউনিয়নের জনি মিয়া (২১) বলেন, আমি নিয়মিত এই হোটেলে খেতে আসি। এখানে গরুর মাংসের রান্না অনেক সুস্বাদু। হাতিয়া ইউনিয়নের আব্দুল্যাহ আল মামুন (১৮) ও মিরাজ (২০) জানান, আমরা প্রায় দিন এখানে খেতে আসি। এখানে খাবারের মান অনেক ভালো। একই ইউনিয়নের আব্দুর রহমান (২৭) বলেন, খাবারের মান ভালো হওয়ায় সব সময় ভীড় লেগেই থাকে। এই হোটেলে একদিনে যতটুকু রান্না করা মাংস বিক্রি হয় আমার ধারণা অনেক নামী দামি হোটেলে তা সপ্তাহেও বিক্রি করতে পারেন না।

থেতরাই ইউনিয়নে ব্র্যাক এনজিওতে কর্মরত রহিমা বেগম (৪৫) বলেন, অফিসিয়াল কোন কাজ নিয়ে উপজেলা ব্র্যাক অফিসে আসলে আমি দুপুরের খাবার এই হোটেলে খেয়ে থাকি। অনেক সময় খেতে এসে দাঁড়িয়েও থাকতে হয়।
এই ছোট হোটেলটিতে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বিভিন্ন বয়সের লোকজন দুপুর ও রাতে খাওয়ার জন্য আসেন। ফলে এই হোটেলে সব সময় ভীড় লেগেই থাকে। খাওয়ার জন্য সিরিয়াল দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন মানুষজন।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by