দেশজুড়ে

রংপুরে ‘পুলিশি নির্যাতনে’ মৃত্যু নিয়ে তুলকালাম, ৩ মামলা

  প্রতিনিধি ২ নভেম্বর ২০২১ , ৭:৪১:৪৬ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের দর্পণ ডেস্ক: 

রংপুরের হারাগাছে পুলিশি নির্যাতনে তাজুল ইসলাম নামে এক মাদকসেবীর মৃত্যুর অভিযোগ তোলা হলেও নিহতের পরিবার অপমৃত্যুর (ইউডি) মামলা করেছেন। অন্যদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে দুটি মামলা করা হয়েছে। একটি মাদক উদ্ধারের মামলা, অপরটি থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ মিছিল ও ভাঙচুরের পাশাপাশি সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার মামলা। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।

মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরপিএমপি) সহকারী কমিশনার আলতাব হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, নিহতের ছোট ভাই মর্তুজার রহমান আবু বাদী হয়ে সোমবার রাত পৌনে ৩টার দিকে হারাগাছ থানায় একটি অপমৃত্যু (ইউডি) মামলা করেন। ঘটনার রাতেই নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তাজুল ইসলাম (৫৫) হারাগাছ পৌর এলাকার দালাল হাট নয়াটারী গ্রামের মৃত শওকত আলীর ছেলে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হারাগাছ থানা এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সোমবার রাতে থানা চত্বর ঘেরাও করে ক্ষুব্ধ জনতার বিক্ষোভের সময় নিক্ষেপ করা ইটপাটকেল থানা এলাকায় জড়ো করে রাখা হয়েছে। থানার ভেতরে শিশু ও সেবাকেন্দ্রের কক্ষটি বিধ্বস্ত অবস্থায় আছে। চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর, থানার গাড়ি রাখার গ্যারেজ ভাঙচুর করা হয়েছে। সেখানকার পাঁচটি মোটরসাইকেল ও দুটি পিকআপ ভ্যান ভাঙচুর করেছে উত্তেজিত জনতা।

তবে বর্তমানে হারাগাছ থানা এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকলেও স্থানীয়দের মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্ক নেই। দোকানপাট খোলা রয়েছে। যে যার মতো কাজকর্ম ও চলাফেরা করছেন। এখন সেখানে স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

এর আগে সোমবার (১ নভেম্বর) রাতে পুলিশি নির্যাতনে আটক ব্যক্তির মৃত্যুর অভিযোগ তুলে হারাগাছে শুরু হয় তুলকালাম। স্থানীয়দের দাবি, ঘটনার দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নতুন বাজার বছিবানিয়ার তেপতি থেকে তাজুল ইসলামকে মাদকসহ আটক করে পুলিশ। এ সময় তিনি পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে পালানোর চেষ্টা করেন। পুলিশ তাকে মারধর করলে ঘটনাস্থলেই মারা যান তাজুল ইসলাম। এ ঘটনা জানাজানি হলে এর প্রতিবাদে প্রথমে রংপুর-হারাগাছ সড়ক অবরোধ করে উত্তেজিত জনতা।

পরে তারা হারাগাছ থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ মিছিল করেন। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করলে বিক্ষোভকারীরা রংপুর-হারাগাছ সড়কের হকবাজার এলাকায় অবস্থা নেন। এ সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও দুদিক থেকে ইটপাকটেল ছোড়াছুড়ি হতে থাকে। বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের গাড়িসহ কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করে। শত শত মানুষ থানায় হামলার চেষ্টা করে। পুলিশ টিয়ারশেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। এতে পুলিশ, সাংবাদিকসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। প্রায় তিন ঘণ্টা পর বিক্ষোভকারীরা পিছু হটলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

এদিকে নির্যাতনে ওই ব্যক্তির মৃত্যুর অভিযোগ অস্বীকার করছে পুলিশ। নগরীর হারাগাছ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত আলী সরকার বলেন, এলাকাবাসী ভুল তথ্য পেয়ে থানা ঘেরাও করে ভাঙচুর করেছে। উত্তেজিত জনতার ছোড়া ইট-পাটকেলের আঘাতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। বিক্ষোভকারীরা থানা চত্বরে রাখা পাঁচটি মোটরসাইকেল ও দুটি পিকআপ ভ্যান ভাঙচুর করেছে।

তিনি জানান, সোমবার সন্ধ্যায় মাদকবিরোধী অভিযানের সময় নতুন বাজার বছিবানিয়ার তেপতি থেকে মাদকসহ আটক করে তাজুল ইসলামকে হাতকড়া পরানো হয়। এতে ভয়ে সে মলত্যাগ করে ফেলে। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে পুলিশ হাতকড়া খুলে দেয়। এরপর পুলিশ তাজুলকে স্থানীয়দের জিম্মায় দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এর কিছুক্ষণ পর খবর আসে যে তাজুল মারা গেছেন।

আরপিএমপির সহকারী কমিশনার আলতাব হোসেন জানান, হারাগাছ থানা ঘেরাও করে হামলা, ভাঙচুর ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ এবং মাদক উদ্ধারের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে। এছাড়া নিহতের পরিবার থেকে একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। সব মিলিয়ে তিনটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশের পক্ষ থেকে দুটি মামলা করা হয়েছে।

নিহত তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে কাউনিয়া থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা রয়েছে। তার নামে ওয়ারেন্ট ছিল। কয়েক মাস আগে তাকে মাদকসহ আটক করা হয়েছিল। তিনি মাদক কারবারি ও মাদকসেবী ছিলেন। ঘটনার দিন তার কাছে থেকে তিন পোটলা হেরোইন উদ্ধার করেছে পুলিশ।

এদিকে হারাগাছ থানা পুলিশের অভিযানে তাজুল ইসলাম নামে ওই ব্যক্তির মৃত্যুর খবর উচ্চ আদালতের নজরে আনা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ওই ঘটনায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়েছেন। মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলিরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চে বিষয়টি নজরে আনেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।

উল্লেখ্য, গত ২৪ সেপ্টেম্বর হারাগাছের সাহেবগঞ্জ এলাকায় মাদকসেবীকে ধরতে গিয়ে ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছিলেন পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) পিয়ারুল ইসলাম। এ ঘটনার পরদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার ঠিক ৩৬ দিন পর এবার পুলিশের বিরুদ্ধে মাদকসেবীকে আটকের পর পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।

আরও খবর

Sponsered content