চট্টগ্রাম

হেফাজতকে সমর্থন দিয়ে এবার চাঁদপুরে ছাত্রলীগ সহ-সভাপতির পদত্যাগ

  প্রতিনিধি ৩১ মার্চ ২০২১ , ৭:১৯:৫৯ প্রিন্ট সংস্করণ

মাহফুজুর রহমান, চাঁদপুর প্রতিনিধি:

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের উপর সহিংসতার ঘটনা এবং হেফাজতের চলমান আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে পদত্যাগ করেছেন  চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আতিকুর রহমান।
নিজের ফেসবুক আইডিতে এক স্ট্যাটাসে ‘বিদায় ছাত্রলীগ লিখে’ তিনি ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগের ঘোষনা দেন।
তিনি লিখেন- ‘বিদায় ছাত্রলীগ’। আমি একজন ছাত্রলীগ কর্মী হওয়ার আগে আমি একজন মুসলমান। আমি ছাত্রলীগ কে ভালোবাসার আগে আমি আমার ইসলাম কে ভালোবাসি। আমি ছাত্রলীগের স্লোগান জয় বাংলা শুনার আগে আমি আজানের ধ্বনি আল্লাহু আকবর শুনেছি।
আমি ছাত্রলীগের মিছিলে যোগদানের আগে আমি মকতবে গিয়েছিলাম।
আমি ছাত্রলীগের আদর্শকে বুকে ধারণ করার আগে ইসলামি আদর্শ ধারণ করেছি।
আমি ছাত্রলীগ করে বঙ্গবন্ধুকে আইডল মানার আগে আমার নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কে আইডল মানি।
আর যে ছাত্রলীগ আমার নবীর সুন্নাহ কে নিয়ে টানাটানি করতে পারে তাঁকে বর্জন করতেও পারি
অনেক পাপ করেছি হে মাবুদ আমায় হেদায়েত দান করো,আর ক্ষমা করে কবুল করে নিও !
এ নিয়ে উপজেলা জুড়ে তৃণমূল ছাত্রলীগ নেতাদের মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তৃণমূল ছাত্রলীগের একাধিক নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রাজপথের ত্যাগী কর্মীদের বাদ দিয়ে ও অবমূল্যায়ন করে ছাত্রলীগের কমিটিতে অনুপ্রবেশকারী ও অন্য দলের এজেন্টদেরকে পদপদবী দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছে। তাছাড়াও বিভিন্ন ভুইফোঁড় সংগঠনের নামেও শিবির-ছাত্রদলসহ বিরোধী সংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে আওয়ামী ব্যানারের নিচে নিরাপদে স্থান করে দেয়া হয়েছে। সুযোগ পেলে তারাই সংগঠনকে বিতর্কের মাঝে ফেলে দেয়।
পরে বুধবার রাতে তিনি ‘সকলের দৃষ্টি আর্কষন করছি’ জানিয়ে আরেকটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লিখেন-
প্রিয় ফেসবুকবাসী, আমার আইডি থেকে একটি পোষ্ট প্রচার হবার কারনে অনেকেই আমার উপর ক্ষীপ্ত হয়েছেন, নানাভাবে পোষ্ট করেছেন এবং প্রতিবাদ জানিয়েছেন। আপনারা দয়া করে বিষয়টিকে সহজভাবে দেখবেন বলেই আমার বিশ্বাস। আর হ্যাঁ, আমি মুসলিম, আমার কাছে আমার ধর্মটাই সবার আগে প্রাধান্য পাবে। কারন আমি এই করোনাকালীন সময়ে বুঝেছি, এই ক্ষুদ্র জীবন আসলে কিছুই না। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে না পারলে ইহকাল পরকাল দুটোই বৃথা।
আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন দেখতাম আমার বাবা কিভাবে রাজনীতি করেছেন। আমার পরিবার একটি রাজনৈতিক পরিবার সেটা আপনারা সবাই জানেন। আমার বাবা এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। একসাথে অনেক মামলার আসামি হয়েছেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে বাবা নিজের জীবনবাজী রেখে কাজ করেছেন দলের জন্য। ক্রসফায়ারের সম্মুখীন হয়েছেন। সেটাও আপনারা সবাই জানেন। এখনও এই দলকে ভালোবেসে পড়ে আছেন। আমি দেখেছি ১/১১ তে জনাব গাজী মাইনুদ্দিন, জনাব মিঠুন ভদ্র আঙ্কেল কে,  জনাব শুক্কুর আলম শুভ মামাকে, আমার ছোট খালু জনাব মোশারফ হোসেন বাবুল, জনাব চঞ্চল মামাকে তারা কিভাবে সংগ্রাম করেছেন। আমি তাদের নিয়ে খুব গর্ব করতাম এখনও করি। আর বর্তমান প্রেক্ষাপট পুরোটাই ভিন্ন। আমার কাছের কিছু ত্যাগী সহপাঠি আছেন যারা দলের প্রতিটি কাজ সুষ্ঠভাবে পালন করছেন। অথচ রাজনীতিতে তাদের কোন মূল্যায়ন হচ্ছে না। এসব ত্যাগী দলীয় মানুষদের কাছে আমি নিতান্তই নগন্য একজন কর্মী। উনাদের দলের প্রতি ত্যাগ এবং ভালোবাসার কাছে আমি কিছুই না।
আমি বর্তমানে আমাদের ছাত্র রাজনীতি নিয়ে হতাশ হয়েছি। তাছাড়া অন্যদল বা কুচক্র মহলের কথা নাইবা বললাম। যেখানে ত্যাগী ছাত্র নেতারা আজ লাঞ্চিত এবং হতাশ। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অশিক্ষিত নেতার পিছনে রাজনীতি করতে হচ্ছে। আমি আমার দলকে ভালবাসি। দলের কিছু মানুষকে ভালোবাসি না, যারা সঠিক সময়ে সঠিক কথা বলে না, বরং তেলবাজি এবং মিথ্যাচার করে যাচ্ছে। বামপন্হী কিছু মানুষ ধর্ম নিয়ে বাজে কথা বললে, আমি তার প্রতিবাদ করলেও দলের অনেকে রাগ হয়ে যায়। আমাকে বিভিন্নভাবে কটু কথা বলে। নবীর সুন্নাহ, দাড়ি টানাটানির ছবিটা আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে। তাই অনেকের প্রতি অভিমান করে আমি গতকাল পোষ্ট করেছিলাম। যেটা পরে ভাবলাম দেশের এই নাজুক পরিস্হিতিতে এটা মোটেও ঠিক হয়নি। যদিও পরবর্তীতে বিষয়টা আমার সাংগঠনিকভাবে এগুনো উচিত ছিল। আর হ্যাঁ, আমি আমার পোষ্টটি শেয়ার করার জন্য কাউকে উৎসাহিত করি নাই। বরং পাবলিকই আমার এই পোষ্ট স্বেচ্ছায় ভাইরাল করে, যা আমি মোটেও ভালভাবে নেইনি। এবং যথাশীঘ্রই দেশ ও দলের কথা ভেবে আমি পোস্টটি ডিলিট করে দিই। আমি প্রিয় বঙ্গবন্ধুর এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সংঘঠনের সকল নেতা কর্মী এবং উপজেলাবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আপনারা দয়া করে আমার ভুলগুলোকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
তাছাড়া আমি কি করেছি দলের জন্য তা বলতে চাই না। সেটা আপনারা বলবেন। তবে এটা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবো দল থেকে আমি সহ সভাপতি পদটি ছাড়া আর কিছুই পাইনি। নিজের টাকা খরচ করে যেটুকু সম্ভব হয়েছে দলের জন্য কাজ করার চেষ্টা করেছি। আজ পর্যন্ত দলের কোন সুবিদা ভোগ করিনি।
আমি বাকি জীবনটা শুধু মাত্র আমার ধর্ম নিয়ে কাটাতে চাই। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলা গড়তে কোন পোষ্ট পদবী লাগবে না। ইনশাআল্লাহ নিজের জায়গা থেকে দেশ ও মানুষের সেবায় যাতে কাজ করে যেতে পারি, সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। আর আমি মিথ্যে বলতে পারবো না। তাই সত্যটা তুলে ধরলাম। বিচার আপনাদের’।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by