রাজশাহী

নিয়ামতপুরে ভারি বর্ষণে এলাকা প্লাবিত, বজ্রপাতে পুড়েছে অনেকের টিভি

  প্রতিনিধি ২৯ জুন ২০২১ , ৭:৪৪:৩৭ প্রিন্ট সংস্করণ

শাহজাহান শাজু, নিয়ামতপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি:

সোমবার দিবাগত গভীর রাতে শুরু হওয়া বর্ষার ভারী বর্ষনে পানির তোড়ে ভেঙ্গে গেছে উপজেলার ভাবিচা-শালবাড়ী ৬ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে নির্মিত ভাবিচা খালের উপর একটি ব্রিজের সংযোগ সড়ক। এতে উপজেলা সদরের সাথে চলাচলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে দশ গ্রামের মানুষ। এছাড়াও ওই রাতে বর্জ্রপাতের ঘটনায় নষ্ট হয়ে গেছে অনেকের টিভি।
এছাড়াও ওই রাতে বর্জ্রপাতে নষ্ট হয়ে গেছে বাহাদুরপুর ইউনিয়নের সাদাপুর গ্রামের বাসিন্দা উজ্জ্বলের টিভিও। এমন অনেক টিভি নষ্ট হয়েছে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে।

জানা যায়, রাত আড়াইটা থেকে শুরু হয় ভারী বর্ষণ ও বর্জ্রপাত। উপর্যপূরী বর্জ্রপাতের শব্দে আতংকিত হয়ে পড়েন ঘুমিয়ে থাকা মানুষ। ভয়ঙ্কর শব্দে জেগে উঠেন তারা। এসময় ভারী বর্ষনের পানিতে প্লাবিত হয় ভাবিচা খালটির দু’পাড়। পানি নিষ্কাষনে সরু ব্রিজটি যথেষ্ট না হওয়ায় পানি উপচিয়ে ব্রীজের সংযোগ সড়কের উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে পানি। এসময় পানির প্রচন্ড তোড়ে ভেঙ্গে যায় ব্রীজটির উত্তর পাশের্^র সংযোগ সড়ক। উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে শালবাড়ী, ঘোলকুড়ি, কাঠালপাড়াসহ আরো কিছু গ্রামের প্রায় ৫ হাজার মানুষ। সংবাদ পেয়ে পরদিন মঙ্গলবার সকালেই ব্রীজটি পরিদর্শনে ছুটে আসেন এলজিইডির কর্মকর্তারা।

নিয়ামতপুর এলজিইডি অফিস সুত্রে জানা যায়, ভাবিচা ফুটবল মাঠ-শালবাড়ী স্কুল পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার সড়কটি শেষের অংশ শালবাড়ী হাট পর্যন্ত হেয়ারিং বন করা হয়েছে কয়েক বছর আগে। সড়কের শেষের অংশে জনগুরুত্বপূর্ণ শ্রীমন্তপুর ইউনিয়ন ভ’মি অফিস, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শালবাড়ী হাট-বাজার থাকায় এক কিলোমিটার সড়ক পাকা করনের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে সোমবার ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়শ্রী রানী রায় ও খগাখড়িবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম লিথন। তাহারাও দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন মর্মে জানিয়েছেন।

অপরদিকে টেপাখড়িবাাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ময়নুল হক জানান, আমার ইউনিয়নে ভারত-বাংলাদেশের যৌথ বাঁধটির পূর্বদিকে প্রায় ১ কিঃ মিঃ বালুর বাঁধটি অবস্তিত। এই বালুর বাঁধটি বিগত কয়েক মাস পূর্বে আমি ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে উজানে ঢলে তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় বালুর বাঁধটি ভাঙ্গনের মুখে পরেছে। উজানের ঢেউ মোকাবেলায় যে কোন সময় বালুর বাঁধটি নদী গর্ভে বিলিন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই পুনঃরায় বাঁধ নির্মাণে প্লাস্টিকের বস্তা কিনে এলাকাবাসী নিয়ে বালু ও সিমেন্ট একত্রিত করে বাঁধে ফেলতেছি। এই বাঁধ না থাকলে বাঁধ সংলগ্ন পূর্বখড়িবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ প্রায় ২ হাজার পরিবার পানিবন্দি ও হাজার- হাজার একর জমি চলমান বর্ষার মৌসুমে আমন ধান, পুকুরের মাছ সহ শাক সবজি ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা আছে।

এদিকে এলাকাবাসী দাবি করেছে আমরা সরকারের কাছে ত্রাণ চাইনা দ্রুত টেকসই বাঁধ নির্মাণ চাই। ২২শত মিটার বালুর বাঁধটি ব্লক দ্বারা নির্মানের জন্য – ইউপি চেয়ারম্যান ও এলাকাবাসী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জোর দাবি জানান।

কেননা নদীর পানি যদি আরও বৃদ্ধি পায় তাহলে যে কোনো মুহূর্তে প্রায় ২ হাজার পরিবার বন্যা কবলিত হয়ে পড়ার পাশা-পাশি অনেক আবাদি জমি নষ্ট হয়ে যাবে।

শালবাড়ি গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আনিসুর রহমান জানান, তার সময়ে ব্রীজটি নির্মিত হয়। সেই সময়ে তিনি ব্রীজটি আরো সম্প্রসারিত করার জন্য দাবী তুলেছিলেন কর্তৃপক্ষের নিকট। কিন্তু তার যৌক্তিক দাবী উপেক্ষিত করে সরু করে খালের উপর ব্রিজটি নির্মান করা হয়।

বর্তমান ইউপি সদস্য আকতারুল ইসলাম বুলু জানান, প্রতি বর্ষা মৌওসুমে খালটির দুপাড় উপচিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে ব্রীজটি ও এর উভয় পাশের্^র সংযোগ সড়ক। ব্রিজটি সংস্কারসহ এর সম্প্রসারণ ঘটিয়ে পাকা সড়ক নির্মাণ এখন সময়ের দাবী বলেন তিনি।

এলজিইডি’র প্রকৌশলী নুর এ আলম সিদ্দীকি বলেন, ব্রীজটির সংযোগ সড়ক ভেঙ্গে পড়ায় জনমানুষ চরম দূর্ভোগে পড়েছেন। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন মানুষের দূর্ভোগের কথা ভেবে তার দফতর থেকে সাময়িক যোগাযোগ স্থাপন করতে ব্রিজটির সংযোগ সড়ক নির্মানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) আপাতত সংস্কার কাজ শুরু করেছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে যোগাযোগ স্বাভাবিক হবে। পরবর্তীতে ব্রীজটির গুরুত্বের কথা ভেবে সংযোগ সড়কের উভয় পার্শ্বে সংস্কারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by