দেশজুড়ে

ইয়াসের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড মোংলা, প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুতি

  প্রতিনিধি ২৭ মে ২০২১ , ১০:২৬:৩০ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের দর্পণ ডেস্ক:

প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোর আকুতি করছি, ত্রাণ চাই না, একটি টেকসই বেড়িবাঁধ চাই। এমন আকুতি বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলার উপকূলীয় এলাকার সাধারণ মানুষের।

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে জোয়ারের পানিতে বসতঘর হারিয়ে মনের ক্ষোভ নিয়ে এমনটাই জানালেন জেলে গাবরিয়েল সরদার। এছাড়া সহায় সম্বল হারিয়ে দুশ্চিন্তায় রাত কাটানো সুন্দরবন সংলগ্ন মোংলা উপজেলার শত শত অসহায় পরিবারের নারী-পুরুষ ও শিশুরা এমন দাবি জানায়। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস কেড়ে নিয়েছে তাদের শেষ সম্বলটুকু। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি আর উপজেলা প্রশাসন বলছে, ক্ষতিগ্রস্তদের তাৎক্ষণিক খাবার ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকারি সহায়তার জন্য তৈরি করা হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত তালিকাও।

মোংলা বন্দর থেকে ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে চিলা ইউনিয়নের শেষ সীমানা থেকেই শুরু বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। পশুর ও শ্যালা নদী সংলগ্ন মোংলা উপজেলার বুড়িরডাঙ্গা, কানাইনগর, চিলা ও জয়মনির ঘোলে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার লোকের বসবাস। এর মধ্যে অধিকাংশ বসবাসকারী জেলে ও দিন মজুর। তাদের জীবন চলে অন্যের গাঁ খাটুনী আর সুন্দরবনের নদী ও খালে মাছ শিকার করে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর নদীর উত্তাল ঢেউয়ের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকা সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় জেলে ও স্থানীয়দের দুর্দশার সীমা নেই। এবারের ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে বড় ধরনের জীবনের ক্ষতি না হলেও নদীর পাড়ের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে শেষ হয়েছে অনেকের আশ্রয়ের সম্বলটুকুও।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পানি ভেসে গেছে তাদের ঘরের নিচের মাটি ও ঘের-পুকুরের মাছসহ সহায় সম্বল সবকিছু। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে সুন্দরবনের দুবলার চর আর করমজল বন্যপ্রানী প্রজনন কেন্দ্রের। এবারের ঘূর্ণিঝড়ে মোংলা উপজেলায় ৩শ’ হেক্টর চিংড়ি ঘের তলিয়ে চাষিদের প্রায় অর্ধ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। জোয়ারে তলিয়েছে উপকূলীয় এলাকার ৫শ’ ১০টি বসত ঘর আর পানিবন্দী হয়ে পড়েছে সাড়ে ৬শ’ বসবাসকারী। তবে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের খাদ্য সহায়তা আর পুনর্বাসন ব্যবস্থা করবে সরকার বলে জানায় উপজেলা নির্বাহী কমলেশ মজুমদার।

ক্ষতিগ্রস্ত ও স্থানীয়রা জানায়,  ঘূর্ণিঝড়ের সময় নদী ভাঙ্গনের ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয় উপকূলবাসীর। তারা জানায়, আম্পানের এক বছর পর আবারো প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আসছে এমন খবরে গত তিন দিন থেকেই ঘরে বাচ্চাদের ঘুম পাড়িয়ে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে বাবা-মায়েরা।

স্থানীয়রা বলেন, কত মানুষ আসে, প্রতিশ্রুতি দেয় কিন্তু টেকসই বাঁধ হয় না। জীবন বাঁচাতে সব সময়ই আতঙ্কে থাকতে হয় আমাদের। কখন যেন ভাসিয়ে নিয়ে যায় পরিবারের লোকজনসহ আমাদের সহায় সম্বলটুকু।

চাদঁপাই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোল্লা মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে এ এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তলিয়ে গেছে পুকুর ও মৎস্য ঘের। তাই সরকারের কাছে অবেদন, ত্রাণ সহায়তা না দিয়ে একটি টেকসই বেড়িবাঁধ দিলে আন্তত মানুষ বেঁচে থাকতে পারবে। জীবনই যদি না থাকে তা হলে ত্রাণ দিয়ে কী হবে?

মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমলেশ মজুমদার বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে আঘাত হানার কথাশুনে সকাল থেকেই স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নয়ন কুমার রাজবংশী, সমাজসেবক মো. হাসেম ফকির, সুলতান মেম্বার, সিপিপি উপজেলা টিমলিডার ও স্বেচ্ছাসেবকসহ এলাকার অন্যান্য ব্যক্তিদের নিয়ে নদী সংলগ্ন বুড়িরডাঙ্গা, জয়মনি, চিলা, কাইনমারী ও কানাইনগর এলাকা সরেজমিনে যাই এবং লোকজনকে আতঙ্ক না হয়ে সচেতন থাকার পরামর্শ দেয়া হয়।

তিনি বলেন, জোয়ারের পানি বাড়ায় বেশ কিছু বাড়িঘর তলিয়ে যায় এবং পানিবন্ধী লোকজনকে দ্রুত শুকনো খাবার ও গৃহহীন মানুষদের থাকার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও দ্রুত মোংলা উপজেলাবাসীর ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়েছে সহায়তা ও পুনর্বাসনের জন্য।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by