রংপুর

উলিপুরে চরাঞ্চলে কাজের সুযোগ বাড়ছে নারী শ্রমিকের

  প্রতিনিধি ২৩ মার্চ ২০২৪ , ৩:০৯:৫৫ প্রিন্ট সংস্করণ

উলিপুরে চরাঞ্চলে কাজের সুযোগ বাড়ছে নারী শ্রমিকের

কুড়িগ্রামের উলিপুরে তিস্তা চরাঞ্চলে পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি কাজের সুযোগ বাড়ছে নারী শ্রমিকের। গত কয়েক মাস আগেও তিস্তা নদীতে ছিল অথৈ পানি। এখন তিস্তার পানি শুকিয়ে যাওয়ায় তিস্তার বুকে জেগে উঠেছে চর। যেদিকে দু-চোখ যায় শুধু ধু-ধু বালুচর। এ বালুচরে স্থানীয় কৃষকরা আলু, পেঁয়াজ, রসুন, মিষ্টিকুমড়া ও বাদাম রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ব্যাপক পরিসরে তিস্তার চরে চাষাবাদ হওয়ায় কর্মসংস্থান হয়েছে অনেক পুরুষের পাশাপাশি নারী শ্রমিকের। কেননা কৃষি কাজ ছাড়া, তেমন কোনো কাজের সুযোগ নেই এ চরাঞ্চলে।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং লিঙ্গ-অন্তর্ভুক্ত উন্নয়ন সম্প্রদায়ের কল্যাণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং এলাকায় অনেকের জীবিকা নির্বাহে অবদান রাখেন। কৃষিতে নারী ও পুরুষ উভয়ের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছেন। এক সময় নারী শ্রমিকেরা অবহেলিত থাকলেও এখন চরাঞ্চলে তাদের অনেক কদরও রয়েছে। জানা গেছে, তিস্তা নদীটি নীলফামারী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে লালমনিরহাট হয়ে কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট, উলিপুর ও চিলমারী উপজেলা হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে মিলিত হয়েছে।

উপজেলার বজরা, গুনাইগাছ, থেতরাই ও দলদলিয়া ইউনিয়ন তিস্তা নদী দ্বারা বেষ্টিত।কৃষকেরা জানান, এ বছর তিস্তা নদীতে দ্বিতীয় দফা বন্যায় ভারত থেকে পানির সঙ্গে কাদাপানি আসার ফলে তিস্তা নদীর বালু মাটিতে পলি জমেছে। ফলে এসব জমিতে বিভিন্ন ধরনের আবাদ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন চরাঞ্চলের চাষিরা। গোড়াই পিয়ার, রামনিয়াশা, হোকডাঙ্গা, টিটমা, নাগড়াকুড়া, দড়িকিশোরপুর, মধ্য গোড়াই, কদমতলা, অজুর্ন, বিরহিম, অন্তোষ অভিরাম, সাদুয়া দামারহাট, কর্পূরা, খারিজা লাটশালা সহ অসংখ্য চরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভেসে উঠা তিস্তার চরাঞ্চল জুড়ে আলু ও পেঁয়াজ তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।

তারা জমিতে পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি নারী শ্রমিক দিয়ে সারাদিন আলু ও পেঁয়াজ উঠিয়ে নিচ্ছেন। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবারে উপজেলায় এবারে আলু চাষের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৩০ হেক্টর। এ পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে ১ হাজার ৯০ হেক্টর। যা লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে ৫০ হেক্টর বেশি অর্জিত হয়েছে। পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫শ ৫৬ হেক্টর। এ পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে ৫শ ৫৬ হেক্টর। এছাড়া চরাঞ্চলে আলু ও পেঁয়াজের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। বর্তমান আলু ও পেঁয়াজের বাজারদর ভালো থাকায় খুশি চাষিরা।

উপজেলার দরিকিশোরপুর চরশেখেরটেক এলাকার কৃষক সুরুজ্জামাল মিয়া বলেন, আমার তিস্তার চরে কয়েক একর জমি আছে। সেই জমিগুলোতে প্রতি বছর বিভিন্ন ধরনের ফসলের আবাদ করে আসছি। এবারে চরের ৫০ শতক জমিতে পেঁয়াজ চাষে সব মিলিয়ে খরচ হয় প্রায় ২০ হাজার টাকা। আর এ ৫০ শতক জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদন হবে ৪০ মণ। এখন পেঁয়াজ উঠাতে ব্যস্ত সময় পার করছি। পুরুষ শ্রমিকের সংকট দেখা দিয়েছে। নারী শ্রমিক দিয়ে পেঁয়াজ উঠাতে হচ্ছে। আবার নারী শ্রমিক অল্প পারিশ্রমিকেই মিলছে। নারী শ্রমিক না থাকলে আমাদের মত চরাঞ্চলের চাষিদের অনেক সমস্যা হত।

নারী শ্রমিকের পারিশ্রমিক সম্পর্কে বলেন, তাদের দিনে পারিশ্রমিক ২৩০ টাকা দিলেই হয়। নারী শ্রমিকেরা তিস্তার চরাঞ্চলে অনেক ভূমিকা রাখছেন। তিস্তার চরে কাজ করতে আসা হেনা বেগম (৬৭) নামের এক নারী। তিনি বলেন, আমার পরিবারে কেউ নেই। স্বামী ৫ বছর আগে মারা গিয়েছে। আমি নিরুপায় হয়ে চরাঞ্চলে কাজ করতে এসেছি। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কাজ করলে মজুরি পাই ২৩০ টাকা। পুরুষরা পান ৪০০ টাকা। মজুরিটা একটু বেশি হলে ভালো হতো। তারপরেও নিয়মিত কাজ থাকার কারণে অনেক কষ্ট করে সংসার চালিয়ে যাচ্ছি।

এ রকম কাজ সারা বছর থাকলে, আমার মতো পরিবারগুলোর জন্য অনেক ভালো হতো।এছাড়া চরাঞ্চলে কাজ করতে আসা নারী শ্রমিকদের মধ্যে রাশেদা বেগম (৬০), নাসিমা (৩৫), মিনারা (৩২), কল্পনা (২৭), আনোয়ারা (৬২), লিলুফা (২৭) ও রহিমা (২৯) সহ আরও অনেকে বলেন, আমরা সমাজে অবহেলিত নারী শ্রমিক। আমরা পুরুষ শ্রমিকের মত সারাদিন চরাঞ্চলে কাজ করি। পুরুষ শ্রমিকের মত আমাদের মজুরি একটু বেশি হলে অনেক ভালো হত। তার পরেও তারা জানান, এভাবে চরাঞ্চলে সারা বছর কাজ থাকলে আমরা ভালো ভাবে সংসার চালিয়ে পারবো।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মো. মোশারফ হোসেন বলেন, তিস্তার চরাঞ্চলে সারা বছর বিভিন্ন ধরনের চাষাবাদ হয়ে থাকে। চরাঞ্চলে কাজের জন্য শ্রমিকের চাহিদা লেগেই থাকে। পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি নারী শ্রমিকেরা অনেক ভূমিকা রাখছেন। চরাঞ্চলে নারী শ্রমিক না থাকলে শ্রমিক সংকট দেখা দিত বলে তিনি মনে করেন। উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সখিনা খাতুন বলেন, নারী শ্রমিকেরা সমাজে অবহেলিত।

আমরা নারী শ্রমিকদের সঠিক মজুরি দিতে চাই না। একজন পুরুষ শ্রমিকের মত একজন নারী শ্রমিক সারাদিন জমিতে কাজ করে। অথচ পুরুষ শ্রমিকের অর্ধেক মজুরি দেয়া হয়। যা দিয়ে তাদের সংসার পরিচালনা করা খুবই কষ্টকর। পুরুষ শ্রমিকের সমান মজুরি নারী শ্রমিকদের দিয়ে বৈষম্য দূরীকরণের কথা বলেন তিনি।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by