রংপুর

উলিপুরে চরাঞ্চলে গম চাষে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা

  প্রতিনিধি ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ , ৩:৩৯:০৭ প্রিন্ট সংস্করণ

উলিপুরে চরাঞ্চলে গম চাষে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা

কুড়িগ্রামের উলিপুরে চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় গম চাষে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখছেন কৃষকেরা। অন্য বছরের তুলনায় এ বছর উপজেলায় ব্যাপক গম চাষ করা হয়েছে।

গমের সবুজ পাতার সমারোহ চরাঞ্চল সহ বিভিন্ন এলাকার মাঠ জুড়ে। গম চাষীদের আশা এবার প্রতি বিঘা জমিতে ১০ থেকে ১২ মন করে গমের ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সাথে বাজারেও দাম তুলনামূলক অনেক বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এবার যারা গম চাষ করেছেন তারা ভালো স্বাবলম্বী হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।

বর্তমান মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও ফলন ভালো হওয়ার ও ব্যাপক লাভের আশা করছেন এই এলাকার কৃষকেরা। জানা গেছে, অনেক কৃষক আমন ধান তোলার পরে আলু বা সরিষা রোপণ না করে গম চাষ করেছেন। টানা কয়েক বছর ধরেই গমের ফলন ও দাম দুটোই ভালো পাওয়ায় চলতি মৌসুমে উপজেলায় ব্যাপক পরিমাণে গমের চাষাবাদ করেছে প্রান্তিক চাষিরা। এ অঞ্চলের মানুষ সাধারণত কৃষির ওপর নির্ভরশীল।

গম চাষের পাশাপাশি সারা বছর এ অঞ্চলের চাষিরা বিভিন্ন ধরনের ফসল ফলে জীবন-জীবিকার নির্বাহ করেন।উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবারে উপজেলার ১টি পৌরসভা সহ ১৩ টি ইউনিয়নে গম চাষের লক্ষ্য মাত্রা ৬ শত ৯০ হেক্টর। গম চাষের লক্ষ্য মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। গম উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ৪ শত ৬৪ মে.টন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক গম চাষিদের বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে।

তবে বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই পোকামাকড় নিধন সম্পর্কে পরামর্শ প্রদান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান সূত্রটি। সরেজমিন উপজেলার তিস্তার চরাঞ্চল সহ বিভিন্ন এলাকার মাঠ ঘুরে দেখা যায়, গম চাষের সমারোহ। মাঠ জুড়ে শোভা পাচ্ছে গমের সবুজপাতা। চারিদিকে কৃষকদের গমের সবুজ রঙে ভরে গেছে। নয়ন জুড়ানো দৃশ্য মেতে উঠেছে ফসলের মাঠে। এখন মাঠজুড়ে সবুজ রঙে স্বপ্ন বুনছেন চাষিরা। অল্প কিছুদিনের মধ্যে গমের শিষ পুরোপুরি বের হয়ে আসবে। অথচ কালের বিবর্তনে দিন দিন বিলুপ্তির পথে যেতে বসেছিল গম চাষ করা।

একসময় উপজেলার প্রতিটি মাঠ জুড়ে করা হত ব্যাপক পরিমাণে গম চাষ। কিন্তু অনেক কৃষক আলু চাষের দিকে বেশি ঝুঁকছেন। ফলে গম চাষ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের গম বীজ সরবরাহ করায় কৃষকরা গম চাষে বেশি ঝুঁকছেন। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে চলতি মৌসুমে গমের ব্যাপক চাষাবাদ হয়েছে। পাশাপাশি গত বছরের চেয়ে এ বছরও ভালো ফলনের পাশাপাশি ভালো দামের স্বপ্ন বুনছেন চাষিরা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সরাসরি কৃষকদের সার্বক্ষণিক সহযোগিতাসহ মাঠপর্যায়ে গিয়ে গমক্ষেত দেখে বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়ায় কৃষকরা গমের চাষাবাদ বাড়িয়েছেন।উপজেলার গুনাইগাছ ইউনিয়নের তিস্তার চরাঞ্চল বেষ্টিত নন্দুনেফড়া এলাকার বীজ গম চাষি হাফিজুর রহমান জানান, এবারে তিনি বীজ গমের চাষ করেছেন ৪ একর জমিতে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তাকে বীজ ও সার বিনামূল্যে দিয়েছেন। বীজ ও সার বাদে এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার টাকা। বীজ গম উঠানো পর্যন্ত আরও খরচ হবে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা। সর্বমোট খরচ হবে ৪০ হাজার টাকা। তিনি মোট বীজ গমের আশা করছেন ২’শ মণ। বীজ গমের দাম সাধারণ গমের চেয়ে একটু বেশি থাকে।

বীজ গমের বাজার ১৮’শ টকা মণ প্রতি বিক্রি হয়। মোট দাম হয় ৩ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। খরচ বাদেও দ্বিগুণের বেশি লাভ হয়।চরাঞ্চলের টিপমা এলাকার মহিল উদ্দিন জানান, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রণোদনা হিসাবে বীজ ও সার নিয়ে ৩৩ শতক জমিতে গম চাষ করেছি। এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৮ হাজার টাকা। গম উঠানো পর্যন্ত আরও খরচ হবে ৭ হাজার টাকা। মোট খরচ হবে ১৫ হাজার টাকা। যেভাবে আশানুরূপ ফলন হচ্ছে তাতে গমের আশা করছি প্রায় ১৮ মণ।

গত বছর গমের বাজার ছিল মণ প্রতি ১৬’শ টাকা। এবারো এমন বাজারের আশায় মোট আয়ের আশা করছেন ২৮ হাজার টাকা। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন এলাকার গম চাষিদের মধ্যে মোসলেম, মহিজল, মোস্তাফিজার ও রশিদ সহ আরও অনেকে একই কথা বলেন। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, চরাঞ্চলে আমার ব্লকের মধ্যে নন্দুনেফড়া, শুকদেব, কাজির চক ও টিটমা এলাকায় মোট ৬৫ টি গমের প্রদর্শনী রয়েছে।

এ সকল গম চাষিদের বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। এ সকল গম চাষি সহ আমার ব্লকের সকল গম চাষিদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেয়ায় এখানে গমের বাম্পার ফলনের আশা করছি। এবারে আবহাওয়া অনুকূল থাকায় গম চাষিরা অনেক লাভবান হবেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মো. মোশারফ হোসেন বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার গমের আবাদ অনেক বেশি হয়েছে। গম চাষের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল তাও ছাড়িয়ে গেছে। আমরা প্রতিনিয়ত মাঠে কৃষকদের পাশে থেকে পরামর্শ দিয়ে আসছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আশা করছি এ বছর কৃষকরা গমের ভালো ফলন পাবেন বলে জানান তিনি।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by