বাংলাদেশ

এই যুদ্ধে পুলিশের ট্রেনিং নেই, তবুও মাঠে আছি : আইজিপি

  প্রতিনিধি ১৪ এপ্রিল ২০২০ , ৪:৫৪:৩৭ প্রিন্ট সংস্করণ

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশ প্রথম অস্ত্র হাতে যুদ্ধে নেমেছিল। এবার ২০২০ সালে নতুন আরেকটি যুদ্ধে নেমেছে পুলিশ। এই যুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশের কোনো ট্রেনিং না থাকলেও আমরা মাঠে আছি, লড়ে যাচ্ছি। বিদায়ের প্রাক্কালে মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) সাংবাদিকদের সঙ্গে অনলাইনে মতবিনিময়ের সময় একথা বলেন বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী।

বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে আইজিপি বলেন, করোনা মোকাবিলায় প্রথম থেকেই মাঠে ছিল পুলিশ। যারা বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছে সেসব প্রবাসীদের ঘরে রাখতে তাদের খোঁজ-খবর নিতে কাজ করেছে পুলিশ। এমনকি সারাদেশে হাটে, মাঠে, ঘাটে, মসজিদে এবং মন্দিরে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করে যাচ্ছেন। করোনা বিস্তার রোধের একটি উপায় ঘরে থাকা। দেশবাসীর উদ্দেশে আমি বলতে চাই, আপনারা ঘরে থাকুন, আমরা আপনাদের জন্য মাঠে রয়েছি।

তিনি বলেন, জনগণের ফোন পেয়ে পুলিশ এখন দ্বারে দ্বারে গিয়ে খাবার ও ওষুধ পৌঁছে দিচ্ছে। অনেকে মারা যাচ্ছেন যাদের স্বজনরা মরদেহের কাছে আসছে না। পুলিশ তাদের দায়িত্ব নিয়ে দাফন করছেন। এছাড়াও অনেক এলাকা, অনেক সড়ক লকডাউন হয়েছে। করোনার ঝুঁকিতে সেখানে কাউকে চলাফেরা করতে দেয়া হয় না। অথচ সেখানেও রাস্তায় দাড়িয়ে দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ।

আইজিপির দায়িত্ব পালনকালে নিজের বড় সাফল্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাবেদ পাটোয়ারী পুলিশের ‘নিয়োগ প্রক্রিয়া’ ও জরুরি সেবা ‘৯৯৯’ কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, পুলিশের ইমেজের কথা আসলেই নিয়োগ, পদায়ন ও পদোন্নতির কথা আসতো। আমার সময়কালে আমি এগুলো স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়ায় করতে সক্ষম হয়েছি। এখন পুলিশ সদস্যরা বিশ্বাস করতে শুরু করেছে যে পুলিশে মেধা দিয়ে নিয়োগ-পদোন্নতি হয়। 

জরুরিসেবা ‘৯৯৯’ এর কথা তুলে ধরে আইজিপি বলেন, প্রতিদিন এই ‘৯৯৯’ নম্বরে আমরা অসংখ্য কল পাচ্ছি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত আমরা ২ কোটি কল পেয়েছি। এর মধ্যে ৫৮ লাখ লোককে সহযোগিতা করেছি। বর্তমানে করোনার প্রাদুর্ভাবের দিনগুলোতে ৯৯৯-এ দ্বিগুণ ফোন আসছে। আমরা ফোন পেয়ে তাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছি।

‘আমার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল পুলিশকে জনবান্ধব করা ও এ বাহিনীর ইমেজ বৃদ্ধি করা। আমি দায়িত্ব নিয়েই পুলিশকে জনবান্ধব করার চেষ্টা করেছি। আমার মনে হয় আমরা অনেকটা সফল হয়েছি। কারণ এই সংকটপূর্ণ মুহূর্তে আপনারা দেখতে পাচ্ছেন পুলিশ কীভাবে মানবিক কাজগুলো করছে। আমার টার্গেট ছিল থানাগুলো যেন মানুষের আস্থার জায়গা হয়। থানার ওসি যেন জনগণের ওসি হয়। এর অংশ হিসেবে এখন অনেক থানায় ‘জনতার ওসি’, ‘আমাকে স্যার ডাকবেন না’ ইত্যাদি ব্যানার দেখা যায়। ওসিরা নিজ উদ্যোগে ‘হ্যালো ওসি’র মতো অ্যাপ খুলেছে, থানায় হেল্প ডেস্ক খুলেছে। আমার দায়িত্বপালনকালে আমি প্রথমবারের মতো ৭শ' থানার ওসিকে পর্যায়ক্রমে পুলিশ সদর দপ্তরে ডেকে এনেছি। তাদের জনগণের সেবা দেয়ার জন্য মোটিভেট করেছি। তারা আমাকে বলেছেন, আগে কেউ এভাবে তাদের মোটিভেট করেননি। তারা যখন স্ব-স্ব থানায় ফিরে গেছেন, তাদের মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে। রেঞ্জের ডিআইজি, এসপিরা আমাকে জানিয়েছেন যে, ওসিদের মধ্যে পরিবর্তন এসেছে।’ 

এ প্রসঙ্গে জাবেদ পাটোয়ারী আরও বলেন, অনেকে বাংলাদেশের পুলিশকে হেয় করতে ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের পুলিশের উদাহরণ দিতো। আমারও ইচ্ছা ছিল, বাংলাদেশ পুলিশের যেন বন্ধুত্বপূর্ণ ইমেজ বৃদ্ধি পায়। আমি প্রথম দিন থেকেই সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছি। 

মতবিনিময়কালে চাকরি জীবনের চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, প্রতিদিনই নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। যেমন এখন দেশে যে করোনা পরিস্থিতি চলছে, ৩ মাস আগেও কেউ ভেবেছিল যে এমন পরিস্থিতি হবে। প্রতিনিয়তই অজান এমন অনেক চ্যালেঞ্জের  মুখোমুখি হতে হয়েছে। সে সব ডিঙিয়ে মানুষকে সেবা দেওয়াই মূল লক্ষ্য ছিল বলে জানান জাবেদ পাটোয়ারী। 

আরও খবর

Sponsered content

Powered by