শিক্ষা

কবি নজরুলকে বাংলাদেশে আনার সুবর্ণজয়ন্তী পালন জাককানইবি’তে

  প্রতিনিধি ২৪ মে ২০২২ , ৭:২২:১৫ প্রিন্ট সংস্করণ

মো: আরাফাত রহমান: জাককানইবি প্রতিনিধি:

নানাবিধ আয়োজন ও কার্যসূচীর মধ্যদিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশে আনায়নের সুবর্ণ জয়ন্তী (৫০ বছর) পালন করেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় (জাককানইবি) । মঙ্গলবার (২৪ মে) দিনব্যাপী জমকালো আয়োজনের মধ্যদিয়ে তা পালিত হয়েছে । সারাদেশে এ বিষয়ে এটিই একমাত্র আয়োজন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশ ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি একবিন্দুতে এসে মিলেছিলেন। ঐতিহাসিকে সে দিনটিতে জাতির পিতার ঐকান্তিক চেষ্টায় আমরা ঘরে ফেরাতে পেরেছিলাম দ্রোহের কবি, সাম্যের কবি, আমাদের জাতীয় কবি নজরুলকে। কবির শেষ জীবন কেটেছিলো এদেশের মাটি ও জলের সাথে মিশে। এমনকি তাঁর সমাধিও হয়েছে এখানে। আর এর সবকিছুই সম্ভব হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কল্যাণে। বছরঘুরে আজ সে দিনটি আবারও আমাদের মাঝে ফিরে এসছে। গুণে গুণে ৫০ বছর, তথা সবুর্ণজয়ন্তী। ঐতিহাসিক সে দিনটির সুবর্ণজয়ন্তী পালনে আর কোথাও কোন উদ্যোগ চোখে না পড়লেও জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ছিলো তার ব্যতিক্রম।

আলোচনা সভা, দেশীয় ও আন্তর্জাাতিক সেমিনার, স্মারক ডাক টিকেট প্রকাশ, নজরুল পদক প্রদান, বইমেলা, চারুকলা প্রদর্শনীসহ নানা কার্যসূচী পালন করা হয়।

দিবসটি উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর ও মাননীয় ডাক ও টেলিযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের গাহি সাম্যের গান মঞ্চে তিন দিনব্যাপী ১২৩তম নজরুল জন্মজয়ন্তী উদ্বোধনী পর্ব ও বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগে নজরুলের বাংলাদেশে আগমনের সুবর্ণজয়ন্তী (৫০ বছর) উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখরের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, ট্রেজারার অধ্যাপক মো. জালাল উদ্দিন ও শিল্পী সুজিত মোস্তফা। সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মো. হুমায়ুন কবীর।

 

নজরুলের জীবনের নানা দিকের কথা তুলে ধরে সভাপতির বক্তব্যে মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, আজকের দিনটি যদি আমাদের ইতিহাসে না থাকতো, দিনপঞ্জিকায় না থাকতো তাহলে হয়ত আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে আমাদের এ মাটিতে সমাধিস্থ করতে পারতাম না। আমাদের এ মাটিতে যে তাকে দীর্ঘ কয়েক বছর রাখার সুযোগ পেয়েছিলাম সে সুযোগ হতে বঞ্চিত হতাম । আজ নজরুলের বাংলাদেশে আসার ৫০ বছর পূর্ণ হলো। অথচ ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ দিনটিকে ততটা মর্যদার সাথে স্মরণ করা হয় না। আমি জানি না কেন? তবে আমরা নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় নজরুলের চেতনাকে ধারণ ও লালন করি। আর যার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সংশ্লিষ্টতা আছে তাকে অবশ্যই পালন করতে হবে। ১৯৭২ সালের সে ঐতিহাসিক দিনটিকে স্মরণ করেই নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করেছে।

ত্রিশালের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় সারা বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে পথ নির্দেশক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রতাশ্যার কথা জানিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বলেন, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় আমার দায়িত্বের অংশ নয়। যেহেতু এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ইটফেলা থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত এর সঙ্গে আমার যে সম্পর্ক সে সম্পর্কের সূত্রধরে আমার অন্তরের মধ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয়। এই প্রতিষ্ঠান আমাদের স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান। নজরুলকে বাংলাদেশে আনার ঐতিহাসিক দিনটিকে স্মরণ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে ব্যপক উদ্যোগ ও কার্যসূচী গ্রহণ করেছে সেজন্য বর্তমান প্রশাসনের প্রতি তাঁর আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানান।
টেলিযোগাযোগ খাতে সরকারের উন্নয়ন ও পরিকল্পনার চিত্র তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে মাত্র সাড়ে ৭ লাখ লোক ইন্টারনেট ব্যবহার করতো। আর ২০২২ সালে সেটি আমরা ১৩ কোটিতে উন্নীত করেছি। মাত্র সাড়ে সাত এমবিপিএস-এর ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করত আমরা এটিকে ৩ হাজার ৪০০ জিপিবিএস ব্যান্ডউইথে উন্নীত করেছি। আমাদের দুটো সাবমেরিন কেবল আছে এখন আমরা তৃতীয় সাবমেরিন কেবলের সংযোগ দিচ্ছি। আমাদের উদ্দেশ্য খুব পরিষ্কার। সেটি হলো আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন কোন অবস্থাতেই পৃথিবী থেকে এক সেকেন্ডের জন্য বিচ্যুৎ না হতে পারে। তার ব্যবস্থা করা আমার নৈতিক দায়িত্ব।এসময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে খুব শিগগিরই ওয়াই-ফাই অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হবে বলে ঘোষণা দেন।

অনুষ্ঠানে নজরুলের বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে প্রকাশিত স্মারক ডাক টিকট প্রকাশ করা হয় এদিন। নজরুল পদক-২০২২ প্রদান করা হয়েছে। এবার সাহিত্যে অধ্যাপক ড. প্রীতিকুমার মিত্র (মরনোত্তর) ও সংগীতে শিল্পী সুজিত মোস্তফা নজরুল পদক পেয়েছেন। মাননীয় মন্ত্রী ও উপাচার্য পুরষ্কারপ্রাপ্তদের হাতে পদক, সনদ ও প্রতীকী আর্থিক চেক তুলে দেন। এছাড়াও অনুষ্ঠানে ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে নজরুল’ স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন, ‘নজরুল ও বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন, বইমেলা উদ্বোধন ও চারুকলা বিভাগ আয়োজিত বার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনীরও উদ্বোধন করেন মাননীয় মন্ত্রী।
এর আগে সকালে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসে পৌঁছালে তাকে ফুলেল স্বাগত জানান মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর। মন্ত্রীকে গার্ড অব অনার দেন পুলিশের একটি চৌকস দল। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা স্তরের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ছাত্রছাত্রীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by