প্রতিনিধি ১১ জানুয়ারি ২০২৪ , ৫:৩৫:৪৯ প্রিন্ট সংস্করণ
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে চাঁদাবাজির টাকা ভাগাবাগির জেড়ে, মদপান করে রাতভর পৈশাচিক নির্যাতন চালিয়ে সাইফুল ইসলাম রাসেল (৩২) নামে এক যুবককে হত্যা করা হয়েছে।
হত্যার ঘটনায় বুধবার (১০ জানুয়ারি) রাতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় রাসেলের পিতা তোফাজ্জল হাওলাদার বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। মামলায় আলতাফ উদ্দিন রাব্বি সহ ১৩ জনের নামোল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ১০/১২ জনকে আসামী করা হয়েছে।
১) আলতাফ উদ্দিন রাব্বি, ২) আলমগীর হোসেন, ৩) আমির, ৪) শিপন, ৫) মোঃ রাসেদ, ৬) অপু আহম্মেদ, ৭) মোঃ সবুজ, ৮) মোঃ সুমন, ৯) দেলোয়ার ওরুফে দেলু, ১০) ওভি, ১১) রনি ওরুফে ভাইস্তা রনি, ১২) সুমন, ১৩) রিপন ওরুফে তোতলা রিপন।
অভিযোগ উঠেছে, দক্ষিন কেরানীগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফতাব হোসেন রাব্বির নেতৃত্বে তার অফিসে (টরচার সেলে) মঙ্গলবার সারারাত ১৫/২০ জন রাসেলের উপর নির্যাতন চালায়। বুধবার ভোরে স্বজনরা রাব্বির অফিস থেকে অচেতন অবস্থায় রাসেলকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষনা করেন।
বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, রাব্বির পক্ষে বিভিন্ন জায়গা থেকে চাঁদা আদায় করতো রাসেল। চাঁদার টাকা ভাগবাটোয়ারা নিয়ে রাব্বি রাসেলকে সন্দেহ করে। যার জের ধরে মঙ্গলবার রাতে তেলঘাট এলাকার পারভীন টাওয়ারের নিচতলায় রাব্বির অফিসে ডেকে আনা হয় রাসেলকে। সেখানে সবাই মিলে মদ্যপান করে। এরপর রাব্বির নেতৃত্বে রাসেলের উপর শুরু হয় অমানুষিক নির্যাতন চলে রাতভর।
রাসেলের উপর নির্যাতনের বেশ কিছু ভিডিও ফুটেছ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। একটি ভিডিও ফুটেছে দেখা যায়, রাসেলের পরনে কোন জামা কাপড় নাই। খালি গায়ে থাকা রাসেলকে কয়েকজন টানা হেচড়া করছে,আরেকজন ভিডিও করছে । প্রচন্ড মারে আধমরা অবস্থায় রাসেল রাব্বিকে বলছে, ‘আব্বা আব্বা, রাব্বি আব্বা আমাকে বাঁচান।’ অপর একটি ভিডিওতে দেখা যায়, অচেতন অবস্থায় বসিয়ে রাখা হয়েছে রাসেলকে। একজন তাকে গালিগালাজ করছে। আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, মেঝেতে নিথর দেহ রাসেলের। নাক দিয়ে রক্ত ঝড়ছে। কেউ একজন সেটা মুছে দিচ্ছেন।
স্বজনরা বুধবার ভোরে রাব্বির অফিস থেকে রাসেলকে উদ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন।
স্থানীয়রা জানান, রাব্বির বাবা শুভাঢ্যা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী বাসের উদ্দিন। সে শুভাঢ্যা ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেনের ভাতিজা। বছরখানেক আগে বাবা ও চাচার প্রভাব খাটিয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ ভাগিয়ে নেন। পদ পাওয়ার পর বিশাল বাহিনী নিয়ে চলাফেরা শুরু করে রাব্বি। তার বাহিনীর লোকজন স্থানীয় বিচার শালিস থেকে শুরু করে বিভিন্ন দোকানদার ও রাস্তাঘাট থেকে চাঁদা আদায় করে থাকে।
রাব্বির অফিসে নিয়মিত বসানো হয় নেশার আসর। নিহত রাসেল রাব্বির পক্ষে চাঁদা আদায়ের কাজ করতো। সে বরিশাল জেলার মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার ভাষানচর গ্রামের তোফাজ্জল হাওলাদারের ছেলে। তিনি দুই সন্তানসহ পরিবার নিয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের খেজুরবাগ এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।
নিহতের ছোট ভাই হৃদয় বলেন, তার ভাইকে তার বন্ধুবান্ধবরা আওয়ামীলীগ ক্লাবে ডেকে নিয়ে মারধর করে বস্তায় ভরে ভাবির বাড়ীতে ফেলে আসে, যাওয়ার সময় হুমিকিও দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, শুভাঢ্যা ই্উনিয়নের চেয়াম্যান ইকবাল হোসেনের সাথে কাজ করতো তার ভাই। হত্যার সাথে জড়িত ইকবাল চেয়ারম্যানের ভাতিজা রাব্বি, নিবির ফয়সাল তারা ক্লাবেই ছিল তখন। নির্যাতন সহ মারধরের ভিডিও সকলের কাছেই আছে।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুব আলম জানান, মামলা হয়েছে। আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম বলেন, মামলাটি গুরুত্বপূর্ণ ভাবে দেখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ছাড় দেয়ার কোন সুযোগ নেই। অপরাধি যে কোন ব্যক্তিই হোকা না কেন, আইনের কাছে কোন রাজনৈতিক পরিচয় বিষয় না অপরাধীকে শাস্তির আওতায় আনতে কাজ করছে পুলিশ ।