চট্টগ্রাম

চন্দ্রগঞ্জের খাল গুলো বিলীন হওয়ার পথে, খনন ও দখল মুক্তকরার উদ্যোগ নেই

  প্রতিনিধি ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ , ২:২৬:৫৬ প্রিন্ট সংস্করণ

মোহাম্মদ হাছান, চন্দ্রগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি:

লক্ষ্মীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ থানা এলাকার গুরুত্বপূর্ণ খাল গুলো দখল ও বরাট হয়ে যাওয়ায় এই এলাকায় পরিবেশ চরম বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, এই থানা এলাকার গুরুত্বপূর্ণ ৪টি শাখা খালই দীর্ঘদিন ধরে খনন না করায় এক শ্রেণীর অসাধু ব্যক্তিরা জবর দখল করে খালের উপর দোকান-পাট নির্মাণ করায় খাল গুলোর অস্তিত্ব বিলীন হতে চলেছে। ফলে শুষ্ক মৌসুমে এ খাল গুলোতে ময়লা পানি জমে খালের পাড়ের বাসিন্দাদের মধ্যে চরম দূর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। অপর দিকে বর্ষা মৌসুমে এই থানা এলাকায় মারাত্মক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাকে । এতে মানুষের বাড়ি ঘর ও ফলের বাগান এবং কৃষি জমির ফসলহানি ঘটছে।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, চন্দ্রগঞ্জ উত্তর বাজার দিয়ে প্রবাহিত মহেন্দ্র খালের শাখা খালটি পশ্চিম দিকে প্রায় ৬কি. মি. বিস্তৃত হাজিরপাড়া ও উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের প্রায় ৩০টি গ্রামের পানি এই শাখা খাল হয়ে মহেন্দ্র খাল দিয়ে মেঘনায় চলে যেতো। দীর্ঘ তিন যুগেও এই খালটি খনন না করায় পলি জমে খালটি এখন অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে। তদউপরি এই খালের চন্দ্রগঞ্জ উত্তর বাজার এলাকায় অর্ধশত দোকান তুলে ও বাজারের ময়লা আবর্জনা ফেলে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যক্তি খালটিকে তিলে তিলে গিলে খাচ্ছে। এ খালটি ভরাট এবং সংস্কারের অভাবে চন্দ্রগঞ্জ বাজারের গরু হাটা থেকে মাছ দোকান পর্যন্ত জায়গায় সামান্য বৃষ্টি হলে হাটু পরিমান পানি জমে যায়। স্থানীয় প্রভাবশালীদের দৌরাতেœ দিন দিন খালটি সমতলে পরিনত হচ্ছে। এমনও দেখা যাচ্ছে যে এইসব শাখা খালের কোন কোন জায়গায় রাস্তা করে যাতায়াতের পথ করে ফেলেছে।

এবার যদি একটু চন্দ্রগঞ্জ পশ্চিম বাজারের আফজাল রোডের দিকে তাকাই, সেখানেতো আরো করুন অবস্থা। আফজাল রোডে চন্দ্রগঞ্জ পশ্চিম বাজার থেকে ১নং পোল পর্যন্ত পশ্চিম পাশে যে খাল ছিল তা এখন শুধু কল্পনাতে আছে বাস্তবে নাই। আফজাল রোডের পশ্চিম পাশের খালের পশ্চিমে যাদের জমি তারা স্বেচ্চাচারীভাবে কোন রকম পরিকল্পনা ছাড়া সরকারী খাল দখল করে দোকান-পাট ও তাদের চলাচলের পথ বানিয়ে ফেলেছে। যার ফলে ঐ এলাকায় সামান্য বৃষ্টি বা কোন নির্মাণ কাজের পানি পড়লেই জলাবদ্ধতা হয়ে যায়। কারন পশ্চিমবাজার থেকে ১নং পোল পর্যন্ত এই বিশাল এলাকায় কোন ড্রেনের ব্যবস্থাও করা হয় নাই। এখন প্রশ্ন হল কার আদেশে এবং কাদের ইশারায় বিনা অনুমতিতে সরকারী খাল গুলো ভরাট করে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছে? যখন ভরাট করা হয় তখন কি চন্দ্রগঞ্জ বাজারে কোন কর্তৃপক্ষ ছিল না? নাকি থেকেও নিরব ভূমিকা পালন করেছে?

অপরদিকে থানা এলাকার দত্তপাড়া বাজার থেকে বিনোদপুর, পালপাড়া হয়ে বসুদুহিতা পর্যন্ত বিস্তৃত রহমত খালীর শাখা খালটির অস্তিত্ব এখন আর নেই বললেই চলে। একই অবস্থা বসুদুহিতা থেকে চরশাহী নুরুল্যাপুর পর্যন্ত বিস্তৃত্ব ওয়াপদার খালের শাখা খালটির। খালটিতে বিভিন্ন প্রভাবশালীরা অসংখ্য বাধ ও ছোট ছোট কালভার্ট দিয়ে খালটির অস্তিত্ব বিলীন করে দিয়েছে। ফলে এই খাল তিনটি দিয়ে এখন আর পানি প্রবাহ হয়না বললেই চলে। অথচ এক সময় এই খাল গুলো দিয়ে মহেন্দ্র, রহমত খালী ও ওয়াপদার খাল থেকে পানি এনে হাজার হাজার একর জমিতে শুষ্ক মৌসুমে ইরি চাষ ও বর্ষার মৌসুমে বৃষ্টির পানি অপসারণ হতো। উৎপাদিত হতো ধান, পাটসহ নানা ফসল। বর্তমানে এই এলাকার বেশির ভাগ জমিই পড়ে থাকে অনাবাদী অবস্থায়।

খালগুলো নতুন করে খনন ও অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা গেলে আবারো এই এলাকার পরিবেশ প্রাণ ফিরে পেতো। উৎপাদিত হতো হাজার হাজার মণ ধান ও মূল্যবান ফসল। দূর হতো জলাবদ্ধতা।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা এলজিইডি কর্মকর্তা মো: শহিদুল ইসলাম জানান এই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ার সুবাধে তিনি নিজে ত্রাণ ও দূর্যোগ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দফতরে আবেদন করার পর দূর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় তিন বছর আগে খালগুলো খননের উদ্যোগ নিলেও অদ্যবদি তা আলোর মুখ দেখে নি।

খাল জবর দখল ও খননের ব্যাপারে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুম বলেন, “খালের বিষয়টি ইউএনও অফিসের আওতাধীন না, এটা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে একটি অবৈধ দখলদারদের তালিকা আছে, তারা যদি অবৈধ দখল উচ্ছেদের ব্যাপারে কোন সাহায্য চায় তাহলে এসি ল্যান্ড এবং পুলিশ দিয়ে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের ব্যাপারে সহায়তা করব”।

সর্বোপরি চন্দ্রগঞ্জ থানার চন্দ্রগঞ্জ বাজারসহ আশে পাশের এলাকাগুলোর সকল মানুষের প্রাণের দাবী শীঘ্রই চন্দ্রগঞ্জের শাখা খাল গুলো পুনরুদ্ধার ও খনন কাজ করে পানির প্রবাহ গতিময় করে এ অঞ্চলকে পানিতে তলিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের একান্ত সুদৃষ্টি কামনা করি।

 

আরও খবর

Sponsered content

Powered by