সিলেট

চারদিকে অথৈ পানি, লাশ দাফন সংকটে সুনামগঞ্জ

  প্রতিনিধি ২২ জুন ২০২২ , ৭:১৩:০১ প্রিন্ট সংস্করণ

বাবার মরদেহ পলিথিন মুড়িয়ে বাক্সবন্দি করে বাঁশের সঙ্গে বেঁধে রেখেছেন ছেলে সংগৃহীত

ভোরের দর্পণ ডেস্কঃ

সন্তান ভেলায় ভাসিয়ে দিচ্ছে মায়ের লাশ, বাবা-মা ভাসিয়ে দিচ্ছে সন্তানের লাশ। তাদের আশা, কোনও সহৃদয় ব্যক্তি লাশ পাওয়ার পর দাফনের ব্যবস্থা করবেন।কেউবা পানি নেমে যাওয়ার আশায় দিনের পর দিন বাক্সবন্দি করে রেখেছে প্রিয়জনের মরদেহ। এমনই দুর্বিষহ দিন কাটছে বন্যাকবলিত সুনামগঞ্জের স্বজনহারা পরিবারের সদস্যদের। বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদেনে উঠে এসেছে এমনই হৃদয়বিদারক ঘটনা।

রবিবার (১৯ জুন) সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকায় ভেলায় ভাসানো এক নারীর লাশ পাওয়া যায়।লাশের সঙ্গে তার সন্তানের রেকা একটি চিরকুট। তাতে লেখা রয়েছে, “শুকনো জায়গায় মাকে কবর দিও।” হাওর উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি কাশমির রেজার বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ খবর জানায় অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউন।

এদিকে লাশ ভাসিয়ে দেওয়ার আরও একটি ঘটনার কথা জানান তাহিরপুরের দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলী আহমদ মুরাদ। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “নয় নগর গ্রামের রেণু মিয়ার দুই বছরের ছেলে আলামিন বন্যার পানিতে ডুবে মারা যায়। শুকনো জায়গায় কবর দিতে না পেরে মা-বাবা পানিতে ছেলের লাশ ভাসিয়ে দেন।”

এরকম আরও একটি অমানবিক ঘটনার খবর পাওয়া গেছে সুনামগঞ্জ শহরতলীর ইব্রাহিমপুরে। জেলার সর্বত্র বন্যার পানি থাকায় নিজের বাবার লাশ দাফন করতে পারেননি ইব্রাহিম মিয়া। নিজের বাবার লাশ বন্যার পানিতে ভাসিয়ে দেওয়ার সাহস হয়নি তার। আর তাই পলিথিন মুড়িয়ে বাক্সবন্দি করে বাঁশের ওপর বেঁধে রেখেছেন বাবার মরদেহ। একই জায়গাতে পড়ে আছে আরও একটি অজ্ঞাত মরদেহ।

এ বিষয়ে সুরমা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বলেন, “কবরস্থানের পাশে মরদেহ দাফন না করে ফেলে রাখা হয়েছে। এটা খুবই অমানবিক। আর এখন লাশ পঁচে গন্ধ বের হচ্ছে। এতে মানুষ অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সরকার উদ্যোগ নিয়ে কবরস্থানগুলো উঁচু করলে বর্ষায় মরদেহ দাফন করা নিয়ে সমস্যায় পড়তে হবে না।”

এদিকে হাওর উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি কাশমির রেজা বলেন, “রবিবার সকালে আমরা একটি সেবামূলক সংগঠনের সঙ্গে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর এলাকার টাঙ্গুয়ার হাওরে সারাদিন ঘুরে ত্রাণ বিতরণ ও বন্যার চিত্র পরিদর্শন করি। আমাদের নৌকা বিশ্বম্ভরপুর হাওরের ভাতের টেক আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে মর্মান্তিক সেই দৃশ্য চোখে পড়ে। আত্মীয়-স্বজন কলার ভেলায় করে একটি লাশ পানিতে ভাসিয়ে দিচ্ছেন! সেই লাশের সঙ্গে একটি চিরকুট দেওয়া হয়েছে। তাতে মায়ের লাশ দাফনের জন্য ছেলে আকুতি জানিয়েছেন।”

তিনি আরও বলেন, “হাওরে অমানবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মানুষ দাঁড়ানোর মতো এক ইঞ্চি শুকনো জায়গাও নেই। এর মধ্যে দুর্গত অনেক এলাকায় এখনও ত্রাণসামগ্রী পৌঁছেনি। মধ্যনগর, তাহিরপুর, ধর্মপাশা, শাল্লা এলাকা খুবই দুর্গত। ওইসব এলাকায় যাতায়াত খুবই কষ্টকর, তাই লোকজন সেখানে ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছেন না। আর একশ্রেণির নৌকার মাঝি সিন্ডিকেট করে ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন। তারা এক হাজার টাকার জায়গায় ১০ হাজার টাকা নিচ্ছেন। ত্রাণসামগ্রী বিতরণসহ নৌকার মাঝিদের নৈরাজ্য দূর করতে প্রশাসনের তদারকি বৃদ্ধি করা জরুরি।’

এ প্রসঙ্গে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শাবিউর রহিম জাকির বলেন, ‘আমার উপজেলার ৯০ ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এখানে কবরস্থানগুলো তলিয়ে গেছে। লাশ দাফনে বিড়ম্বনা সৃষ্টি হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে এটাই স্বাভাবিক।’

তাহিরপুরের ইউএনও মো. রায়হান কবির বলেন, “আমার এলাকায় সবকটি ইউনিয়ন ও গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। কবরস্থানগুলো তলিয়ে গেছে। লাশ দাফন না করে ভাসিয়ে দেওয়ার তথ্য আমাদের কাছে নেই।” তবে এমন ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান তিনি।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by