রংপুর

ডেইরি খামার পরিস্কারের স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের উদ্ভাবন

  প্রতিনিধি ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ , ৪:৩৮:২৫ প্রিন্ট সংস্করণ

এস কে দোয়েল, তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) :

দেশে নতুন নতুন যন্ত্রপাতির ব্যবহারে কৃষিখাতে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। এসব যন্ত্রের ব্যবহারের ফলে কৃষকের কমেছে শ্রম ও খরচ, উৎপাদন বেড়েছে কয়েকগুণ। প্রযুক্তির ছোঁয়া পড়েছে ডেইরি খামারেও।

ডেইরি খামারের বর্জ্য পরিস্কার করতে বাজারে আসছে ‘অটোমেটিক ফার্ম ক্লিনিং স্ক্রাপার’ নামের বৈদ্যুতিক যন্ত্র। এ যন্ত্রের সাহায্যে গরুর দাঁড়ানো অবস্থায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডেইরি খামারের বর্জ্য পরিষ্কার করবে ও বর্জ্য নির্দিষ্ট স্থানে জমা করবে।

স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রটি দেশীয়ভাবে উদ্ভাবন করেছেন পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও হাসপাতালের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. আজমল হুদা তপন।

দীর্ঘ সাড়ে ৬ বছর ধরে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে কর্মরত রয়েছেন। দেশে দিনদিন বাড়ছে ডেইরি খামারের সংখ্যা। ফলশ্রুতিতে, বর্তমানে বাংলাদেশ এখন মাংসে স্বয়ংসম্পূর্ণ।

অন্যদিকে, প্রচুর বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করছে ডেইরি খামার। শিক্ষিত তরুণদের বড় একটা অংশে তৈরি হয়েছে ডেইরি খামারের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়ার প্রবণতা। তবে প্রচলিত খামার ব্যবস্থাপনায় শ্রমিক সংকট ও অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছেন অনেকেই। ডেইরি খামারে লোকসানের অন্যতম কারণ খামারের কাজ ও জীব নিরাপত্তা সময়মত নিশ্চিত করতে না পারা, শ্রমিক স্বল্পতা ও প্রযুক্তির জ্ঞ্যান সল্পতায় পিছিয়ে থাকা। ডেইরি খামারে যান্ত্রিকীকরণ দিতে পারে যান্ত্রিকীকরণ ব্যবহারে যন্ত্রটি উদ্ভাবন।

যন্ত্রটির উদ্ভাবক ডাক্তার আজমল হুদা তপন জানান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রাবস্থায় ডেইরি খামারের বর্জ্য অপসারণ ব্যবস্থা নিয়ে ভাবতেন। খামারে স্বয়ংক্রিয় বিভিন্ন যন্ত্র লাগানো যায়, যা খুব সহজেই ডেইরি খামারের জীবনিরাপত্তা নিশ্চিত করে শ্রমিকের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে স্বস্তিদায়ক ও মার্জিত পরিবেশে খামার করা যেতে পারে। সেই চিন্তা থেকেই কাজ শুরু তিনি। বিসিএসের মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করার পরপরই ধীরে ধীরে চিন্তা বাস্তবায়ন করতে কাজে লেগে যান। ৫বছর প্রচেষ্টার পর সফল হন দেশীয় যন্ত্রটি তৈরি করতে।

প্রাথমিকভাবে নিজস্ব ডেইরি খামারে ‘অটোমেটিক ফার্ম ক্লিনিং স্ক্রাপার’ ব্যবহার শুরু করেন উদ্ভাবক। স্বাভাবিকভাবেই যন্ত্রটি খামারে কাজ করছে। এতে খামারের গরুর কোন ধরণের সমস্যা হচ্ছে না। খামারিকে প্রাথমিক কিছু প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সহজেই যন্ত্রের কার্যাবলি বুঝিয়ে দেওয়া সম্ভব।

যেসব খামারে ১০-১২টি গরু আছে, সেখানে এই যন্ত্রটি হতে পারে খামার যান্ত্রিকীকরণেই প্রাথমিক পদক্ষেপ বলে জানান এ উদ্ভাবক। রেজাউল করিম লালমিয়া নামের এক খামারি জানান, ডেইরি খামারে দীর্ঘদিন যন্ত্রটি ব্যবহার করছি। আগে অনেক সময় খামারে কাজের লোক পাওয়া না গেলে খামার অপরিষ্কার হয়ে থাকত এবং খামারে প্রায়ই বিভিন্ন রোগ বালাই লেগে থাকত কিন্তু বর্তমানে যন্ত্রটি ব্যবহারের কারণে এসব সমস্যা হচ্ছে না, আর খামারের মেঝে স্যাঁতসেঁতে থাকে না।’

খামারে ‘অটোমেটিক ফার্ম ক্লিনিং স্ক্রাপার’ ব্যবহারের অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা সম্পর্কে উদ্ভাবক আজমল হুদা তপন বলেন, যেখানে শ্রমিকের মাধ্যমে খামার পরিচালনা করলে ১০-১২ টি গরুর খামারে দশ বছরে শুধু বর্জ্য অপসারণে শ্রমিকের মজুরি বাবদ প্রায় সাড়ে চার লক্ষ টাকা প্রয়োজন হয়, সেখানে এ স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র ব্যবহারে মাত্র দেড় লক্ষ টাকা প্রয়োজন।

প্রাথমিকভাবে যন্ত্রটি প্রস্তুত করতে ষাট হাজার টাকা প্রয়োজন। তবে যন্ত্রটির উদ্ভাবক জানান, বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে গেলে আরো কম দামে খামারিদের যন্ত্রটি সরবরাহ করা সম্ভব। সরকারি সহায়তা পেলে খুব শীঘ্রই যন্ত্রটির বাণিজ্যিক উৎপাদন সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by