রংপুর

পঞ্চগড়ে বিরল প্রজাতির সাপ উদ্ধার

  প্রতিনিধি ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ , ৮:৫৩:৪০ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের দর্পণ ডেস্ক:

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ঝলইশালশিরী ইউনিয়নের কালিয়াগঞ্জ বাজার এলাকা থেকে বাংলাদেশের নতুন প্রজাতির সাপ উদ্ধার করা হয়েছে। বাংলাদেশের নতুন প্রজাতির এই সাপটির নাম রেড কোরাল কুকরি স্নেক। 

পঞ্চগড়ের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও উদ্ধারকারী মো. সহিদুল ইসলাম এই সাপটি উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে হস্তান্তর করেছেন। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভিআরসি’র প্রশিক্ষক বোরহান বিশ্বাস রোমন এই সাপটি রাজশাহী নিয়ে যান।

পঞ্চগড়ের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও উদ্ধারকারী মো. সহিদুল ইসলামের বাড়ি পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার ঝলইশালশিরী ইউনিয়নের ডাবরভাংগা নতুনহাট এলাকায়।

সহিদুল ইসলাম জানান, গত ৭ ফেব্রুয়ারি বোদা উপজেলার ঝলইশালশিরী ইউনিয়নের কালিয়াগঞ্জ বাজারের পাশের একটি উঁচু জায়গা এক্সেভেটর মেশিন দিয়ে কাটার সময় একটি সাপ বেরিয়ে আসে। তখন এলাকাবাসী আমাকে খবর দেয়। খবর পেয়ে আমি সেখানে গিয়ে ৮টির মতো সাপ উদ্ধার করি।

সাপগুলো হচ্ছে- রেড কোরাল কুকরি একটি, দাঁড়াশ সাপ দুটি , গুইসাপ একটি, হেলে দুটি, কৃষ্ণ কালাচ একটি।

উদ্ধারকৃত সাপগুলোর মধ্যে রেড কোরাল কুকরি সাপটি এস্কেভেটর দিয়ে আঘাত পেয়েছে। আমি প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি। পরে রাজশাহী থেকে আসা ভেনম রিসার্চ সেন্টারের প্রশিক্ষক বোরহান বিশ্বাস রোমন স্যারের কাছে হস্তান্তর করেছি। অন্য সাপগুলোকে ফিরোজ আল সাবাহ ও বন বিভাগের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে অবমুক্ত করা হয়।

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভেনম রিসার্চ সেন্টারের প্রশিক্ষক ও সাপ গবেষক বোরহান বিশ্বাস রোমন জানান, সাপটি মারাত্মকভাবে আহত। জখম হয়েছে। সাপটি বর্তমানে রাজশাহীতে সাপ উদ্ধার ও সংরক্ষণ কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

সাপ গবেষক বোরহান বিশ্বাস রোমন জানান, উজ্জল কমলা ও লাল প্রবাল রঙ এই সাপটি অত্যন্ত মোহনীয়। লাল প্রবাল সাপটি মৃদু বিষ ধারী ও অত্যন্ত নিরীহ। এই সাপটি পৃথিবীর দুর্লভ সাপদের একটি। পৃথিবীতে হিমালয়ের পাদদেশ দক্ষিণে ৫৫ আর পূর্ব-পশ্চিমে ৭০ কিলোমিটার এলাকায় দেখা যায়। পৃথিবীর ২১তম সাপটি মৃত অবস্থায় ও ২২তম সাপটি মারাত্মকভাবে আহতাবস্থায় পাওয়া গেছে।

তিনি জানান, সর্বপ্রথম এই সাপের দেখা মেলে ১৯৩৬ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশে প্রথম এ ধরনের সাপ দেখা যায়। এরপর ২০১৯ সালে আবার উত্তর প্রদেশের খেরি জেলায় দেখা যায় এমন একটি লাল প্রবাল সাপ। এছাড়া নেপালের মহেন্দ্র নগর, চিতোয়ান ন্যাশনাল পার্ক, ভারতের নৈনিতাল ও জলপাইগুড়ির বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সময়ে এমন সাপ দেখা গেছে।

তিনি আরও জানান, সাপটি নিশাচর এবং বেশির ভাগ সময় মাটির নিচেই থাকে। সম্ভবত মাটির নিচে কেঁচো ও লার্ভা পিপড়ার ডিম ও উইপোকার ডিম খেয়ে জীবন ধারণ করে। নরম মাটি পেলে মাটি খুঁড়ে ভিতরে চলে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। মাটির ভিতরে থাকার জন্য রোসট্রাল স্কেল ব্যাবহার করে সাপটি। রোসট্রাল স্কেল হলো সাপের মুখের সম্মুখ ভাগে অবস্থিত অঙ্গবিশেষ যার সাহায্যে মাটি খনন করে। এ সাপটি পূর্ণ বিষধর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সাপটির এ বিষয়ে গবেষণা চলছে।

সকল বন্যপ্রাণীসহ এমন দুর্লভ প্রজাতির সাপ আমাদের অমূল্য সম্পদ। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে সচেতন হওয়াসহ বন্যপ্রাণীর আবাস ধ্বংস বন্ধের আহবান জানান তিনি। ভুটান, নেপাল, চীন ও ভারতের কাছাকাছি হওয়ায় পঞ্চগড়ের বিভিন্ন এলাকায় এই সাপটি আরও থাকতে পারে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by