ঢাকা

পদ্মা সেতু দিয়ে চলছে ফিটনেসবিহীন গাড়ী , অভিযুক্ত গাড়ীর সংখ্যা ২৩১২

  প্রতিনিধি ১৯ এপ্রিল ২০২৩ , ১:৫৬:৩৪ প্রিন্ট সংস্করণ

এস এম বাবুল

পদ্মা সেতু দিয়ে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় চলাচলরত দূর পাল্লার গাড়ীর অধিকাংশেরই নেই ফিটনেস ও রুট পারমিট। ব্যানারের অনুমোদন নেই এমন গাড়ীর সংখ্যা রয়েছে অনেক। এমন অভিযোগ এনে বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান ও সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব বরাবরে আবেদন করেছেন জনৈক আবুল হাসান।
বুধবার (২২ মার্চ) বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ ও বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরীর বরাবরে ২৮টি কোম্পানির প্রায় দুই হাজার তিনশ বারটি গাড়ীর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আনেন।
অভিযোগে যে সকল কোম্পানীর গাড়ীর কথা বলা হয়েছে-নড়াইল এক্সপ্রেস (৭৩) বিএম পরিবহন (১০৫) রাজধানী পরিবহন (৩৫) সূর্যমুখী পরিবহন (২৯) বিএমএফ পরিবহন (১০৭) খান পরিবহন (২০) ইলিশ পরিবহন (৭২) সাকুরা পরিবহন (১২৫) হামিম পরিবহন (৪৩) স্বাধীণ পরিবহন (৭৫) প্রচেষ্ঠা পরিবহন (৮৫) আপন পরিবহন (৫৫) শরিয়তপুর পদ্মা ট্রাভেলস (৬০) বেপারী পরিবহন (১২৭) শরিয়তপুর সুপার (৬৫) গুনগুন পরিবহন (৬৭) সোনালী পরিবহন (৯০) শিবচর পরিবহন (৪০) গোল্ডেন লাইন (৭১) ইমাদ পরিবহন (১৩৫) বনফুল পরিবহন (২৭) সেতু ডিলাক্স (৮০) ফ্রেম পরিবহন (৭০) চেয়ারম্যান পরিবহন (২২) হামদান পরিবহন (১৫) গেøারি পরিবহন (১০৫) মুনমুন পরিবহন (২৫৭) ফালগুনী পরিবহন ( ২৫৭)।
এ ছাড়াও পদ্মা সেতু দিয়ে চলাচলকারি দূরপাল্লার গাড়ীর ফিটনেস, রুট পারমিট ও ব্যানারের অনুমোদন ছাড়া যে সকল পরিবহন চলাচল করছে সে সকল পরিবহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে এবং মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা যথাযথ ব্যবস্থা নিতেও তিনি আবেদন জানিয়েছেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে আবুল হাসানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু দিয়ে চলাচলকারি ২১ জেলার দূর পাল্লার পরিবহনের অধিকাংশ গাড়ীর ফিটনেস নেই, এমনকি অনেক গাড়ীর রুট পারমিট ও নেই। এ ছাড়া একটি কোম্পানি ১০টি গাড়ীর অনুমোদন নিয়ে রোডে চালাচ্ছে ৬০/৭০টি অধিক গাড়ী। এ ভাবে ফিটনেস ও রুট পারমিট বিহীন গাড়ী চালিয়ে পরিবহন মালিকরা ঠিকই কোটি কোটি টাকা আয় করে নিচ্ছেন কিন্তু সড়কে যাত্রীদের যে নিরাপত্তা থাকছেনা সে বিষয়ে তাদের কোন মাথা ব্যাথা নেই। তাছাড়া সরকারকে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে দিনের পর দিন গাড়ী চালাচ্ছে এ সব অসাধু মালিকরা। ফিটনেসবিহীন গাড়ীর বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা না নিলে ঘটতে পারে ইমাদ পরিবহনের মতো ভয়াবহ দুর্ঘটনা।
দুর্ঘটনার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন, বেশ কয়েকজন যাত্রীও। বাগেরহাটের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, ঢাকা-বাগেরহাট রুটে যে সকল গাড়ী চলাচল করে তার অধিকাংশই গাড়ীর ফিটনেস নেই। রাস্তায় যে কোন সময় বন্ধ হয়ে যায়। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে এ যাত্রী আরো বলেন, ইমাদ, দোলা ও টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেসের গাড়ীগুলো অনেক পুরানো। বডিতে রং করে চটকদার বানানো হলেও এর ইঞ্জিন অনেক পুরানো। যত্রতত্র নষ্ট হয়ে যায়। সম্প্রতি ইমাদ পরিবহনের দুর্ঘটনার পর এ সকল গাড়ীতে উঠতে ভয় লাগে বললেন এ যাত্রী।
গত ১৯ মার্চ (রবিবার) মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কুতুবপুর এক্সপ্রেসওয়েতে ইমাদ পরিবহনের ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে গাড়ীর ফিটনেসের কথা। দুর্ঘটনা কবলিত বাসটির ফিটনেস সনদের মেয়াদ ছিলোনা। সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সার্ভারে সার্চ করে দেখা যায়, বাসটি সাসপেন্ডে ছিল। অর্থাৎ, বাসটির নিবন্ধন ও চলাচলের অনুমতি স্থগিত করা ছিল। কিন্তু এরপরও বিআরটিএ এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে বাসটি কীভাবে চলছিল- এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি।
ভয়াবহ এ দুর্ঘটনার পর হঠাৎ করে ইমাদ সহ ওই রুটে চলাচলকারি অন্যান্য পরিবহনের গাড়ীর সংখ্যা কমতে থাকে। কমতে থাকে ট্রিপের সংখ্যাও। যাত্রীদের নির্ধারিত সময়ের টিকেট দিয়ে দফায় দফায় সে টিকেট পরিবর্তন করতে দেখা যায়। ট্রিপ ড্রপ নিয়ে ওই সময় কথা হয় ইমাদ পরিবহনের ব্যবস্থাপক সেলিম শেখের সাথে, মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, গাড়ী দুর্ঘটনার পর ঝামেলায় আছি। আপাতত; আমরা ট্রিপ কমিয়ে এনেছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ধীরে ধীরে ট্রিপ বাড়ানো হবে। ফিটনেসবিহীন গাড়ী রাস্তায় চলাচল করছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি কোন উত্তর না দিয়ে পরে কথা বলবেন বলে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করেন।
এ বিষয়ে জানতে, মুঠোফোনে বিআরটিএ’র চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। মুঠোফোনে ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েও তার জবাব মেলিনি।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব খন্দকার মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ফিটনেসবিহীন ও রুট পারমিট ছাড়া গাড়ী রাস্তায় চলাচল করলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়বে। এ সকল গাড়ী যাতে রাস্তায় চলাচল করতে না পারে সে ব্যাপারে সকলকে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানান এ সংগঠক।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by