খেলাধুলা

বিপিএল অভিষেকেই হ্যাটট্রিক করা কে এই মৃত্যুঞ্জয়?

  প্রতিনিধি ৩০ জানুয়ারি ২০২২ , ৫:৫৯:৫৩ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের দর্পণ ডেস্ক:

বিপিএলের এবারের আসরে হ্যাটট্রিক করে হইচই ফেলে দিয়েছেন মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী। গতকাল সাগরিকায় বিপিএল অভিষেকেই হ্যাটট্রিকের গৌরব অর্জন করেন মৃত্যুঞ্জয়। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে মোট ছয়টি হ্যাটট্রিক হয়েছে।

ম্যাচের ১৮তম ওভারে প্রথম দুই বলে এনামুল হক বিজয় ছয় ও চার মেরে দশ রান নেয়ার পর প্রথমে এনামুল ও পরে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, ক্যাচ তুলে প্যাভিলিয়নে ফেরেন, তৃতীয় বলে ইংল্যান্ডের ববি বোপারাকে ইয়র্কার বলে ক্লিন বোল্ড করে উল্লাসে মাতেন মৃত্যুঞ্জয়। এই তিনজনের মধ্যে এনামুল হক বিজয় ছিলেন সেট ব্যাটসম্যান, তিনি আউট হওয়ার আগে ৪৬ বলে ৭৮ রান তোলেন।

একুশ বছরের দোরগোড়ায় থাকা এই ফাস্ট বোলার এর আগে ৫টি প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেট ম্যাচ খেলেছেন। মূলত খেলতেন বয়সভিত্তিক বিভিন্ন টুর্নামেন্টে। বিপিএলের অভিষেক ম্যাচেই হ্যাটট্রিক তুলে নেয়া মৃত্যুঞ্জয় আলোচনার বিষয়বস্তু হয়েছেন তার একটি ফেসবুক কমেন্ট নিয়ে।

হ্যাটট্রিকের পর বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটার শাহরিয়ার নাফীস নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্টে মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীকে ‘যোদ্ধা’ আখ্যা দেন। সেখানে মন্তব্যের ঘরে গিয়ে মৃত্যুঞ্জয় লেখেন, ‘যে দেশে মাশরাফি ভাই এর মত যোদ্ধা আছে। সে দেশে আমার যুদ্ধ অতি তুচ্ছ। তার এই কমেন্ট নিয়েই ফেসবুকে হচ্ছে তুমুল আলোচনা।’

মৃত্যুঞ্জয়ের জন্ম সাতক্ষীরায়, ২০১০ সালে পরিবারসহ ঢাকায় আসার দুই বছর পর তিনি আবাহনীর মাঠে ক্রিকেট কোচিংয়ে ভর্তি হন, সেখান থেকেই পেশাদার ক্রিকেটার হয়ে ওঠা। ২০১৮তে মৃত্যুঞ্জয় অনুর্ধ্ব ১৭ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাথে ভারত সফরে যান। এরপর ইংল্যান্ডে অনুর্ধ্ব ১৯ পর্যায়ের একটি ত্রিদেশীয় সিরিজেও নজর কাড়েন গতি আর সুইং দিয়ে। ২০২০ এ বাংলাদেশের যে কোনও পর্যায়ের ক্রিকেটে প্রথম বিশ্বকাপজয়ী স্কোয়াডের সদস্য ছিলেন তিনি, দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সেবার যুব ক্রিকেট বিশ্বকাপ জেতে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশে তরুণ ফাস্ট বোলারদের কথা এলেই মাশরাফি বিন মর্তুজার সাথে তুলনা হয়, বল হাতে মাঠে দাপট কিংবা পরিসংখ্যান সব বিচারেই মাশরাফি বাংলাদেশের টপ ফাস্ট বোলার, তাই অনেক ফাস্ট বোলারের আইডলও তিনিই। তাসকিন আহমেদ কখনো লুকোননি যে তিনি মাশরাফির অন্ধভক্ত, মৃত্যুঞ্জয়ও খোলামেলা বললেন মাশরাফিই তার নায়ক।

তবে মৃত্যুঞ্জয় মাশরাফির সাথে তুলনা উড়িয়ে দিলেন। বিবিসি বাংলাকে মৃত্যুঞ্জয় বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে মাশরাফি ভাইকে খুব ভালো লাগে। তিনি এখনও এই বয়সে যেই ডেডিকেশন দেখাচ্ছেন, আমরা নিজেরাই এতো ডেডিকেশন দিতে পারবো, এটা খুবই প্রশ্নবিদ্ধ একটি বিষয়। তার ডেডিকেশন, তার খেলার প্রতি আগ্রহ, তার সাপোর্টিং মনোভাব আমাকে খুব অনুপ্রেরণা দেয়।’

মাশরাফির সাথে মৃত্যুঞ্জয়ের তুলনাটা আসলে ক্রিকেট সমর্থকরাই করছেন। মাশরাফির ক্যারিয়ারে বড় একটা সময় ইনজুরির কারণে মাঠের বাইরে ছিলেন, ছয়বার হাঁটুতে অস্ত্রোপচার হয়েছে তার, যে কারণে টেস্ট ফরম্যাট থেকে অল্প দিনেই দূরে সরে যেতে হয়েছিল। মুত্যুঞ্জয়ও ছোট ক্যারিয়ারে দুইবার ইনজুরির কবলে পড়েছেন, ২০২০ সালে বাংলাদেশের অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী স্কোয়াডে ছিলেন মৃত্যুঞ্জয়। এরপর চোট ও কোভিড মিলিয়ে তেমন মাঠে নামা হয়নি তার, প্রায় দুই বছর পরে এসে তিনি বোলিং দিয়েই আলোচনায় এলেন বিপিএল ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচে।

মৃত্যুঞ্জয় বলেন, ‘আমি যেহেতু ইনজুরিতে ছিলাম, তাই মাশরাফিকে দেখে অনেক কিছু শেখার আছে। বাংলাদেশের অনেক পেস বোলাররাই তাকে দেখে অনুপ্রেরণা পায়। সে বাংলাদেশে আমার একজন আইডল বলা যায়।’

বিপিএলের ইতিহাসে ষষ্ঠ, বিপিএলে বাংলাদেশিদের মধ্যে দ্বিতীয় এবং অভিষেকে দ্বিতীয় বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিকের পর নিজের ক্রিকেট ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন মৃত্যুঞ্জয়। মাত্র ২০ বছর বয়সেই হ্যাটট্রিকবয় হওয়া মৃত্যুঞ্জয় বলেছেন, ‘আমি নিজের ওপর কখনও নিরাশ হই না। যদি আমার আজকের দিনটা ভালো নাও যেতো, আমার নিজের ওপর নিজের আত্মবিশ্বাসটা থাকতো। আজকের দিন ভালো গেছে, আমি যে পরিকল্পনায় ছিলাম, আমি চাই যেন ওই প্রসেসটা ধরে রাখতে পারি।’

এসময় এবারের আসরে নিজের লক্ষ্যের কথা জানাতে গিয়েও পরিণতবোধের পরিচয় দেন মৃত্যুঞ্জয়। আসরের সেরা খেলোয়াড় হওয়ার উচ্চাশা প্রকাশের বদলে, নিজের ঘাটতিগুলো শুধরে নিয়ে নিজেকে আরও খাঁটি সোনায় পরিণত করার কথাই জানিয়েছেন তিনি।

মৃত্যুঞ্জয়ের ভাষ্য, ‘একজন খেলোয়াড়ের সবসময় লক্ষ্য থাকে একটা টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হওয়া। তবে আমার লক্ষ্যটা হচ্ছে, যেহেতু আমার এখন একটা শেখার সময় চলছে, আমার যেটা ভালো হচ্ছে সেগুলো নিয়েই করা এবং যেগুলোতে ঘাটতি আছে, সেগুলোতে এখানে যারা সিনিয়র খেলোয়াড় আছে, বিদেশি খেলোয়াড় আছে তাদের কাছ থেকে শেখা। কারণ সবাই কিন্তু একটা প্রসেসে থেকে শেখার চেষ্টা করে। তো আমি যেনো ঐ প্রসেসে ভালোভাবে থাকতে পারি তাই সবকিছু থেকে শেখার চেষ্টা করছি। ফলের থেকে নিজেকে তৈরি করার দিকেই ফোকাস করতে চাচ্ছি।’

আরও খবর

Sponsered content

Powered by