চট্টগ্রাম

বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালনে সমালোচনা কাটিয়ে উঠতে পারছে না নোবিপ্রবি

  প্রতিনিধি ১৫ জুলাই ২০২৩ , ৬:০৬:২৪ প্রিন্ট সংস্করণ

নোবিপ্রবি প্রতিনিধি :

শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছাড়াই ‘বিশ্ববিদ্যালয় দিবস-২০২৩’ উদযাপন করেছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) প্রশাসন। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। 

আজ শনিবার (১৫ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে শিক্ষার্থীদের তেমন অংশগ্রহণ চোখে পড়েনি। বিএনসিসি, রোভার স্কাউটসহ হাতেগোনা কয়জন শিক্ষার্থী আর শিক্ষক-কর্মকর্তাদের নিয়ে এই দিনটি উদযাপন করতে দেখা গেছে। দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নোবিপ্রবি উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আব্দুল বাকী।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষ্যে উল্লেখযোগ্য কোনো আয়োজন ছিল না। শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রীতি ম্যাচের আয়োজন করা যেত। শুধুমাত্র কেক কাটা আর র‍্যালি করার মাধ্যমে দায়সারা ‘বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’ উদযাপন করেছে নোবিপ্রবি প্রশাসন যেখানে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নেই বললেই চলে।

এক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রশাসনের দেওয়া পূর্বঘোষিত সময়সূচি মেনেও অনুষ্ঠান সাজানো হয়নি। সকাল ১১টায় কেক কাটার কথা থাকলেও প্রোগ্রাম শেষ করা হয় সাড়ে ১০ টায়। এমন একটা বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে ভালোভাবে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালন করা হয় না। নেই কোনো আলোচনা সভা কিংবা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন।

বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন নিয়ে স্মৃতিচারণ করে নোবিপ্রবি শিক্ষার্থী জয় প্রকাশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, ’শিক্ষার্থীরা হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ। শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নেই মানেই বোঝা যায় প্রশাসন কতটা ব্যর্থ বা সাধারন শিক্ষার্থীরা কতটা ডিটাচ এই প্রশাসন থেকে। বেশিদিন আগে না, ২০১৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস আর আজকের দিবসের মধ্যে দিন রাত পার্থক্য। নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন দেখলে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়, যখন একই সময়ে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের ক্যাম্পাসে ঘটা করে আয়োজন করা হয় তাদের বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। এসব বলেও আসলে লাভ নাই।’

এদিকে নোবিপ্রবির বিশ্বিবদ্যালয় দিবস নিয়েও রয়েছে বিতর্ক আর মতভেদ। শিক্ষার্থীরা একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর দিন ২২ জুনকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে উদযাপন করে আসলেও, হঠাৎ করেই ২০১৯ সাল থেকে ২০০১ সালের ১৫ জুলাই মহান জাতীয় সংসদে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০১ পাশ হওয়া তারিখে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন শুরু হয়। এখনও তা বলবৎ রয়েছে।

এ নিয়ে শাহরিয়ার আহমেদ সিয়াম নামের বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্তব্য করে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় দিবস বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কিংবা একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করার দিনকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে গণ্য করা হয়। বাকি সব বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আমাদেরও একটা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস থাকার কথা ছিলো। কিন্তু এখানেই যেন শর্ষের মধ্যে ভূত লুকিয়ে আছে। প্রত্যেক বছর জুন/জুলাই মাস আসলেই একটা কন্ট্রোভার্সির সৃষ্টি হয়। আসলে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস কবে? প্রশাসনের একদল লোক বলে ২২ জুন, অন্যদিকে আরেকদল ১৫ জুলাই।একটা পাবলিক ভার্সিটির দুইদিন বিশ্ববিদ্যালয় দিবস থাকতে পারে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো ধরনের আয়োজন নেই। হলে ফিস্টের ব্যবস্থা নেই। ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন নেই। নামমাত্র আলোকসজ্জা দিয়েই যেন ঠেকার কাজ চালানো! তাহলে এমন ভাবে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালন করার মানে টা কি? প্রতিষ্ঠার ১৮ বছর পরেও কি এই কাজ গুলো আরও গুছানোভাবে করা যেতো না? প্রশাসনের লোকদের নিয়ে কেক কেটে, র‍্যালি করেই কি দায়িত্ব শেষ?  তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় টা মূলত কাদের জন্য?  শিক্ষার্থীদের নাকি প্রশাসনের?’

বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন প্রসঙ্গে নোবিপ্রবি উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আব্দুল বাকী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় দিবস আমাদের চেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য বেশি আনন্দের। আমরা চেয়েছি শিক্ষার্থীদের মনের সুপ্ত ভালোবাসা বিকশিত করতে, যাতে করে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে তারা তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি ভালোবাসা থেকে অংশগ্রহণ করে।

বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে শিক্ষার্থীদের জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা খাবারের আয়োজন না রাখা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বন্ধের দিন হওয়ায় এবং নানাবিধ প্রতিবন্ধকতায় এটি করা সম্ভব হয়নি। তবে আগামী বছর ভালো কিছু হবে এ আশা করছি। আর খাবার দিয়ে প্রলুব্ধ করে ভালোবাসা জাগ্রত করা যায় না। আমরা চাই শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়কে ভালোবেসে এর সকল অনুষ্ঠানে নিজ থেকে অংশগ্রহণ করবে।

উল্লেখ্য, ২০০১ সালের ১৫ জুলাই মহান জাতীয় সংসদে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০১ পাশ হয়। সে আলোকে ১৫ জুলাইকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে পালন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরই ধারাবাহিকতায় এরবছরও প্রশাসনিক ভবন প্রাঙ্গণে নোবিপ্রবির পতাকা উত্তোলন, পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন নোবিপ্রবি উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল বাকী। পরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে একটি আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা  হয়। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন উপাচার্য। এরপর শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে নিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের কেক কাটা হয়। এছাড়া দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by