আন্তর্জাতিক

মহানবীকে (সা.) কে কটূক্তি: বিক্ষোভ করায় বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো বাড়ি

  প্রতিনিধি ১৩ জুন ২০২২ , ৬:৫০:৪০ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের দর্পণ ডেস্কঃ
শুক্রবারের বিক্ষোভকারীদের শিক্ষা দিতে যে বুলডোজার নামানো হতে পারে, তার ইঙ্গিত আগেই দিয়েছিলেন যোগী আদিত্যনাথের মিডিয়া উপদেষ্টা মৃত্যুঞ্জয় কুমার এবং বিজেপির আরও কয়েকজন নেতা।

যারাই বিক্ষোভ বা প্রতাবাদে অংশ নিয়েছে, তাদের উপর শাস্তির খড়্গ নেমে আসছে। রোববার বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় মুসলিম রাজনীতিভিদ জাভেদ মোহাম্মদের বাড়ি।

মহানবী (স.)-কে নিয়ে বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে শুক্রবার (১০ জুন) রাজধানী দিল্লিসহ ভারতের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভে নামেন সে দেশের মুসলিম সম্প্রদায়। এরইমধ্যে উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজ (পূর্বতন এলাহাবাদ) শহরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় বিক্ষোভকারীদের। এর আগে কানপুরেও গোষ্ঠী সংঘর্ষ দানা বাধে। শনিবার উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুর ও কানপুরে বিক্ষোভ ছড়ানোর অভিযোগে মূল অভিযুক্তদের সম্পত্তি ধ্বংস করার কাজ শুরু করেছে যোগী প্রশাসন।

সাহারনপুর পুলিশের শেয়ার করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশের উপস্থিতিতে পুরকর্মীরা বুলডোজার নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন। বিক্ষোভের মাধ্যমে সমাজে অশান্তি সৃষ্টির অভিযোগে দুই অভিযুক্তের বাড়ি বুলডোজার চালিয়ে ভেঙে ফেলা হচ্ছে। এছাড়া, কানপুরে শনিবারের সহিংসতার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত জাফর হায়াত হাশমির ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের বাড়ি ভেঙে দিয়েছে কানপুর ডেভলপমেন্ট অথরিটি।

শুক্রবারের বিক্ষোভকারীদের শায়েস্তা করতে যে বুলডোজার নামানো হতে পারে, তার ইঙ্গিত আগেই দিয়েছিলেন যোগী প্রশাসনের মিডিয়া উপদেষ্টা মৃত্যুঞ্জয় কুমার এবং বিজেপির আরও কয়েকজন নেতা।

বিক্ষোভের ঘটনার পর শনিবার হুমকির সুরে মৃত্যুঞ্জয় টুইটারে লেখেন, “গোলমাল করছে যারা, তাদের মনে রাখতে হবে, প্রতি শুক্রবারের পরে শনিবার অবশ্যই আসবে।” এই বক্তব্যের সঙ্গে বুলডোজারের একটি ছবিও পোস্ট করেন তিনি। শুধু যোগী প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরাই নন, উত্তরপ্রদেশের দেওরিয়ার বিজেপির বিধায়ক শলভমনি ত্রিপাঠীও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন। সেখানে দেখা যায়, গ্রেপ্তারকৃত কয়েক জন যুবককে মারধর করছে পুলিশ। কবে, কোথায় এই ঘটনা ঘটেছে— তা অবশ্য বোঝা যাচ্ছে না। তবে এই ছবির সঙ্গে বিজেপি নেতা ত্রিপাঠী লিখেছেন, “বিক্ষোভের মাশুল”। আদিত্যনাথের সাবেক মিডিয়া অ্যাডভাইসর ছিলেন শলভমনি ত্রিপাঠী।

এদিকে, পুলিশের মারধর ও বুলডোজারের ছবি উসকানিমূলক শিরোনামে পোস্ট করায় ইতোমধ্যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন মহলে। যোগী সরকারের মন্ত্রী ও প্রদেশ বিজেপির সভাপতি স্বতন্ত্র দেব সিংহও অভিযুক্তদের ঘরবাড়ি ভাঙতে বুলডোজার চালানোর পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। যোগী আদিত্যনাথ নিজেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন, “সমাজবিরোধীরা গত কয়েক দিনে রাজ্যে অশান্তি সৃষ্টি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।”

ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, সাহারানপুরে বিক্ষোভ ছড়ানোয় অভিযোগে দুই অভিযুক্ত মোজাম্মেল ও আব্দুল ওয়াকিরের বাড়ির কিছু অংশ বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই নির্মাণ অবৈধ ছিল। কানপুরে গত ৩ জুনের সংঘর্ষের মূল অভিযুক্ত জাফর হায়াত হাশমির আত্মীয় মুহাম্মাদ ইশতিয়াকের নবনির্মিত ভবনও ভেঙে দিয়েছেন সেখানকার পুরকর্মীরা।

শুক্রবারের বিক্ষোভের ঘটনায় এ পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশের সাতটি জেলা থেকে মোট ২৫৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (আইন শৃঙ্খলা) প্রশান্ত কুমার শনিবার এক বিবৃতিতে জানান, বিক্ষোভের ঘটনায় প্রয়াগরাজে ৬৮ জন, সাহারানপুরে ৪৮ জন, আম্বেদকরনগরে ২৮ জন, মোরাদাবাদে ২৫ জন এবং ফিরোজাবাদে ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

  • সূত্র: টাইমস অফ ইন্ডিয়া

আরও খবর

Sponsered content

Powered by