দেশজুড়ে

মিরসইরায়ে সড়ক সংস্কারে বিএসএফের বাধা, পতাকা বৈঠকে সমাধানের আশ্বাস

  প্রতিনিধি ২৪ মে ২০২১ , ৫:৩৭:২৩ প্রিন্ট সংস্করণ

আশরাফ উদ্দিন, মিরসরাই:

মিরসরাই উপজেলার ১নং করের হাট ইউনিয়নের ৮নং পূর্ব অলিনগর ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে একটি সড়ক সংস্কারে বাধা দিয়েছে ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী বিএসএফ। এটি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের আমলিঘাট ওবায়দুল হক খন্দকার সড়ক নামে পরিচিত।

বাধার কারনে গত সাত মাস ধরে ওই রাস্তার সংস্কার কাজ বন্ধ হয়ে আছে। সংস্কার কাজের মাঝ পথে বাধা পড়ার কারনে বিপাকে পড়েছেন সড়কটির ব্যবহারকারী কয়েক হাজার বাংলাদেশি। জরুরী খাদ্য-শস্য পরিবহন, রোগী পরিবহনসহ যাবতীয় স্বাভাবিক চলাচলে মারাত্মক বাধাগ্রস্থ হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন সড়ক ব্যবহারকারীরা। বাধা দানের পর পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে সুরাহা হওয়ার কথা ছিল কিন্তু দীর্ঘ কয়েকমাস অতিবাহিত হলেও এখনো কোন সুরাহা আসেনি বিএসএফের পক্ষ থেকে।

 

স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী জানান, গত সাত মাস আগে ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী বিএসএফ নো ম্যান্স ল্যান্ড এরিয়ায় পড়েছে অভিযোগ এনে সংস্কার কাজ বন্ধ করে দেয় আমাদের চলাচলের একমাত্র অবলম্বন ওবায়দুল হক সড়কটি। বাংলাদেশী সীমান্ত বাহিনী বিজিবির সাথে পতাকা বৈঠকে সুরাহার মাধ্যমে কাজের অনুমোদন দেয়ার কথা কিন্তু কয়েকবার পতাকা বৈঠক হলেও রাস্তা সংস্কারের কোন সুরাহা হয়নি।

 

স্থানীয় হেড়ম্যান হাফেজ আহম্মদ জানান, ফেনী নদীর ভাঙ্গনে শত বছর বয়সী রাস্তাটির বেশ কিছু অংশ নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। স্থানীয়দের সহায়তায় নিজেদের অর্থায়নে মেরামত করে চালু রাখা হয়েছিল মানুষের চলাচলের জন্য। বর্তমানে সরকারীভাবে টেন্ডার করে ব্রিক সলিং এর কাজ চলছিলো। যেখানে সরকারিভাবে টেন্ডার হয়েছে, সরকারী টাকা খরচ করে সংস্কার করা হচ্ছে চেয়াম্যান মেম্বার সবাই জানে। বিএসএফ সংস্কার কাজে বাধা দেয়ার কারনে গত সাত মাস রাস্তাটি বিকল হয়ে আছে কেউ কি দেখার নেই? ফেনী নদীর মাঝ বরাবর থেকে দেড়শত গজ ভারতীয় সীমান্তে কাটাতারের বেড়া দিয়েছে বিএসএফ। সেই হিসেবে ১৫০ গজ হিসেব করলে আমার বাড়ি ঘর কিছুই নাই সব নো ম্যান্স ল্যান্ডে পড়ে গেছে। আমরা কোথায় যাবো এখন?

শতবর্ষী খোরশেদ আলম জানান, প্রতি মাসে দুই বার করে পতাকা বৈঠক হয় বিএসএফ ও বিজিবি। যুদ্ধের ৩বছর পর থেইে এই বাড়িতে আছি আমি। কখনো ভারতীয় বাহিনীকে দেখিনি এই রাস্তা নিয়ে কথা বলতে কিন্তু বর্তমানে তারা রাস্তার কাজে বাধা দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন হুমকি ধমকি দিয়ে আসছে।

রাস্তার ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বীথি বিল্ডকমের অংশীদার ঠিকাদার সেলিম জানান, সাড়ে ১১শত মিটার রাস্তার মধ্যে ৫শত মিটার রাস্তা নিয়ে বিএসএফ বিজিবি বরাবরে আপত্তি করে কাজ বন্ধ রাখার জন্য অনুরোধ করে। এতে বিজিবি নোটিশের মাধ্যমে আমাদের কাজ করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয় এবং পতাকা বৈঠকে সুরাহা করা হবে বলে জানায়। আমরা ঠিকাদারী নিয়ম অনুয়ায়ী এলজিআরডিকে লিখিত জানাই ও বিরোধপূর্ণ এলাকা ছাড়া বাকি অংশ কাজ সম্পন্ন করি।

স্থানীয় ইতিহাস বিশ্লেষক ডাক্তার জামশেদ আলম জানান, স্বাধীনতার পরেও ফেনী নদীর মালিকানা ছিলো বাংলাদেশের। পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালে ইন্দিরা মুজিব চুক্তিতে ভারত ফেনী নদীতে ভাগ বসায়। সেই অযুহাতে ওই এলাকায় যে কোন উন্নয়ন কাজে বাধা প্রদান করে ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী বিএসএফ।

স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার আজাদ জানান, সড়ক সংস্কারে বাধা দানের পর গত বিজিবি ও বিএসএফের সাথে বৈঠক হয় কয়েকবার। বৈঠকের ভিত্তিতে বিএসএফ সড়কটি সংস্কারের অনুমতি দিয়েছিল তবে কোন এক কারনে সেই অনুমতি আবার ফেরত নিয়ে যায় তারা। তবে সাম্প্রতিক একটি মতবিনিময় সভায় বিজিবির উদ্ধতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন বিএসএফ পুনরায় উক্ত সড়ক সংস্করের অনুমতি প্রদান করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এব্যাপারে জানতে চেয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়াম্যান নয়নকে মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি ব্যস্ততার কথা বলে ফোন রেখে দিয়ে ৩০ মিনিট পরে যোগাযোগ করতে বলেন। তবে ৩০ মিনিট পরে তাকে বার বার ফোন করা হলেও তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি।

অলিনগর বিজিবির ক্যাম্প কমান্ডার মাজেদ দৈনিক ভোরের দর্পণকে জানান, এই ব্যাপারে আমরা স্থানীয় নয়ন চেয়াম্যানের সাথে আলোচনা করে ভারতীয় ক্যাম্প কমান্ডার ববরাবরে চিঠি দিয়েছি। করোনা পরিস্থিতির কারনে পতাকা বৈঠক বন্ধ থাকায় বিএসএফএর সাথে সমাধান সুলভ আলোচনা সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। তবে আশা করছি অচিরেই চিঠির জবাব আসবে এবং রাস্তা সংস্কার কাজের বাধা উঠিয়ে নিবে বিএসএফ।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by