ঢাকা

মুকসুদপুরে তাঁত বস্ত্র মেলার নামে মসজিদের পাশে প্রকাশ্যে চলছে জুয়া ও অশ্লীলতা

  প্রতিনিধি ২৫ জুন ২০২৩ , ৯:২১:৩৫ প্রিন্ট সংস্করণ

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিঃ 

ঢাকা—গোপালগঞ্জ মহাসড়ক সংলগ্ন মুকসুদপুর উপজেলা সদরে চলছে তাঁত বস্ত্র মেলা-২০২৩।  ধীরে ধীরে জমে উঠছে দেড়মাসব্যাপী এই মেলা। তবে, এই মেলাকে কেন্দ্র করে  চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে। মেলায় এসেই এই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন আগত দর্শনার্থীরা। তাদের প্রশ্ন— মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের জন্য উপহার দেওয়া এই মডেল মসজিদের  পাশেই মেলা কেন?

দামি মটরসাইকেল, ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক ও ফ্রিজ পাওয়ার আশায় প্রতিদিন অনেকেই কিনছেন লটারীর টিকিট। কেউ কিনছেন ২০টি, কেউ ৫০টি, আবার তার চেয়ে বেশী করেও টিকিট কিনছেন অনেকে। দামি উপহার পাওয়ার আশায় সহজ-সরল প্রকৃতির খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষগুলো ধার দেনা ও সঞ্চয়কৃত অর্থ দিয়ে মেলার টিকিট কিনছেন। পরবর্তীতে, র‍্যাফেল ড্র -এর মাধ্যমে কোন পুরস্কার না পেয়ে হতাশায় ভেঙ্গে পড়ছেন তারা। শূন্য হাতে বাড়িতে ফিরে পরিবারের সদস্যদের সাথে ঝগড়াঝাটি করার ফলে সংসারে দাম্পত্য কলহ একের পর এক বেড়েই চলেছে। এভাবেই প্রতিদিন তাঁত বস্ত্র, শিল্প ও বাণিজ্য মেলার আয়োজক কর্তৃপক্ষ  লুটে নিচ্ছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। 

সচেতন মহল মনে করেন মুকসুদপুর পৌর মেয়র আশরাফুল আলম শিমুল ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রবিউল আলম শিকদার যদি মেলা বন্ধের উদ্যোগ নেন, তাহলে বাচঁবে মডেল মসজিদের সম্মান। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়— মুকসুদপুর উপজেলা মডেল মসজিদের পাশেই বসানো হয়েছে তাঁত বস্ত্র শিল্প ও বাণিজ্যমেলা। তবে— মেলার নামের সাথে রয়েছে অসংগতি। নামে মাত্র তাঁত বস্ত্র শিল্প ও বাণিজ্য মেলা বসানো হয়েছে। মেলায় লটারীর নামে প্রকাশ্যে চলছে রমরমা জুয়া। দর্শনার্থীদের বাধ্যতামূলক করা হয়েছে লটারীর টিকিট। মেলায় প্রবেশ গেটের দুই পাশে রয়েছে পুরুষ ও মহিলা টিকিট কাউন্টার। শুরুতে প্রবেশ টিকিট কাউন্টার থাকলেও বর্তমান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ২০ টাকার বিনিময়ে লটারীর টিকিট নিতে। লটারীর টিকিটে লেখা হচ্ছে দর্শনাথীদের নাম, পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর। এতে বিব্রত হচ্ছে মেলায় আগত দর্শনার্থীরা। 

এছাড়া লোভনীয় পুরুস্কারের কথায় ফুলঝড়াচ্ছে মেলা কমিটি। মেলার ভেতর কমপক্ষে ২০টি জায়গায় বসানো হয়েছে টিকিট কাউন্টার। টিকিট বিক্রিতে ব্যস্ত কর্মীরা জানান— প্রতিদিন দুটি মোটর সাইকেল ও স্বর্ণের চেইন সহ ৫১টি পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। রাত ১০টা থেকে শুরু হয় লটারীর ড্র-এর অনুষ্ঠান।

মেলায় ঘুরতে আসা বাচ্চু শেখ বলেন, মডেল মসজিদের পাশে এই অশ্লীল মেলা খুব কষ্টকর। প্রশাসন আছে উপজেলার চেয়ারম্যান আছে পৌরসভার মেয়রসহ আরো যারা আইনের লোক আছে সবাই মিলে এই অশ্লীল মেলা বন্ধ করে দেওয়া উচিৎ। 

অপরদিকে মেলায় বসানো হয়েছে দি রাজমণি সার্কাস। প্রতিদিন ৩ থেকে ৪টি শো দেখানো হয় সেখানে। এই সার্কাসের আড়ালে প্রতিদিন রাতে চলছে অশ্লীল নৃত্য। সেখানে আনা হচ্ছে চলচ্চিত্রের নায়ক—নায়িকা ও মডেলদের। তবে, মডেল মসজিদের পাশেই প্রকাশ্যে মেলার নামে জুয়া ও অশ্লীলতা নিয়ে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের মাঝে। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি এ প্রতিবেদককে বলেন— একটা মসজিদের পাশে এভাবে অশ্লীলতা মেনে নেওয়া কষ্টকর। দিনরাত সব সময় চলছে গান—বাজনা। মেলার আয়োজক কমিটি অন্য কোথাও বসাতে পারতো। নামাজের সময়ও বন্ধ হয় না গানবাজনা। আর রাত হলে তো সার্কাসের নামে চলে অশ্লীলতা। মেলায় আগত দর্শনার্থীরাও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা জানান— মসজিদের পাশে এভাবে মেলা দেওয়া মোটেও ঠিক হয়নি। আয়োজক কমিটি অন্য কোথাও দিতে পারতো।

এ বিষয়ে মডেল মসজিদের ইমাম ও খতিব মাহামুদ হাসান বলেন— আসলেই বিষয়টি একটু খারাপ লাগে। কিন্তু মসজিদ উদ্বোধনের ৩ থেকে ৪ মাস আগেই হয়তো ডিসি অফিস থেকে মেলার অনুমতি নেওয়া হয়েছে। যে কারনে এখন করার কিছু নেই। এসব বিষয় নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হয়নি আয়োজক কমিটি। 

তবে, আয়োজক কমিটির এক সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন জানান— লটারী ও সার্কাস মেলার একটি অংশ। এগুলো না থাকলে তো মেলা জমবে না। তবে, সার্কাসের আড়ালে অশ্লীলতা হচ্ছে না। 

মুকসুদপুর পৌর মেয়র আশরাফুল আলমের মুঠোফোনে ফোন দিলে তা বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এবিষয়ে মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমাম রাজী টুলু বলেন— মেলার বিষয়ে প্রতিদিন আমি মনিটরিং করছি। জুয়া ও অশ্লীলতার বিষয়টি আমার নজরে আসেনি। আমি যতটুকু জানি আয়োজক কমিটি ২০ টাকার র‍্যাফেল ড্র দিচ্ছে এবং প্রবেশ মুখে বাণিজ্য মেলায় প্রবেশ ফি হিসেবে একটি টিকিট দেওয়া হচ্ছে। বাধ্যতামূলক র‍্যাফেল ড্রয়ের টিকিট দেওয়া হচ্ছে না। তবে, র‍্যাফেল ড্র এবং সার্কাসের বিষয়ে অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান।

মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব রবিউল আলম শিকদার বলেন, গোপালগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান তিন-চার দিন আগে  ইউএনও মহোদয়কে মেলা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু 

কেন যে মেলা বন্ধ হচ্ছে না তা আমার জানা নেই, আমি ঢাকায় এসেছি, এমপি মহোদয়কে দ্রুত মেলা বন্ধ করতে অনুরোধ জানাবো। 

গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মাহবুবুল আলম জরুরী মিটিংয়ে ব্যস্ত থাকায় বারবার চেষ্টা সত্ত্বেও এ বিষয়ে তার সাক্ষাৎকার নেওয়া সম্ভব হয়নি।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by