খুলনা

লকডাউনে কেশবপুরে মানবেতর জীবন চর্মকারদের

  প্রতিনিধি ১৬ এপ্রিল ২০২১ , ৬:৩১:০৫ প্রিন্ট সংস্করণ

কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি:

করোনা ভাইরাসের কারণে কেশবপুরে লকডাউন চলমান থাকায় থমকে গেছে চর্মকারদের (মুচি) জীবন-জীবিকা। লকডাউনের কারণে উপজেলার প্রায় অর্ধশতাধিক চর্মকার কর্মহীন হয়ে পড়ে একপ্রকার অলস সময় পার করছেন।

কাজ না থাকায় করোনাকালীন সময়ে খাদ্যসংকট দেখা দেয়ায় তাদের পরিবার নিয়ে দিশেহারা হয়ে উঠেছে। কেশবপুর শহরের ত্রিমোহিনী মোড়, থানার মোড় এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানের ফুটপাথে বসা চর্মকারদের সাথে কথা বললে উঠে আসে তাদের দুঃখ ও দুর্দশার কথা।

সরেজমিনে শুক্রবার দুপুরে কেশবপুর শহরের থানার মোড়ের ফুটপাথে দীর্ঘদিন ধরে চর্মকার পেশার সাথে জড়িত বাজিতপুর গ্রামের ভবেন দাস (৬২) বলেন, পরিবারে তার সদস্য সংখ্যা ৩ জন। সকাল থেকে এখনও পর্যন্ত কেউ তার কাছে জুতা সেলাই করতে আসেনি। টাকা আয় না হলে চাল কেনাও বন্ধ হয়ে যাবে। আলতাপোল গ্রামের স্বদেশ দাস (৪৫) বলেন, লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ টাকা আয় হচ্ছে। এ টাকা দিয়ে পরিবারের ৬ জন সদস্যের মুখে খাবার তোলা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।

বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের চর্মকার বিষ্ণুদাস জানান, বাড়িতে তার অষ্টম শ্রেণিতে পড়–য়া এক মেয়ে আছে। লকডাউনের কারণে পর্যাপ্ত আয় না হওয়ায় তিনি মেয়ের খাতা কলমও কিনতে পারছেন না। বাজিতপুর গ্রামের চর্মকার নিতাই দাসের (৫২) কাছে গেলে তিনি চোখের জল মুছতে মুছতে বলেন, ঘরে চাল নেই। এদিকে লকডাউনে আয় রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারি কোন সহযোগিতাও জোটেনি এখনো। কী করবে ভেবে পাচ্ছে না।

শহরের ত্রিমোহনী মোড়ের ফুটপাথে প্রায় ৫০ বছর ধরে অন্যের জুতা সেলাই করে আসছেন বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের চর্মকার লক্ষী কান্ত দাস (৭৫)। তিনি জানান, এতো অভাব এর আগে কখনও হয়নি। গত লকডাউনে কিছু সহযোগিতা পেয়েছিলাম। এবার কেউ ফিরেও তাকায়নি। সংসারে ৭ জন সদস্য নিয়ে খাদ্য সংকটে ভুগছেন তিনি। লকডাউনের আগে জুতা সেলাই করে প্রতিদিন প্রায় ৩শ টাকা আয় ছিল। এখন ৫০ টাকায়ও আয় হচ্ছে না।

আলতাপোল গ্রামের পূণ্য দাস, তাপস দাস, সবুজ দাস, বাজিতপুরের অমল দাসসহ আরও অনেক চর্মকারের সাথে কথা হলে জানায়, দীর্ঘ বছর ধরে বাপ দাদার এ পেশাটাকে আকড়ে ধরে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। তাদের স্বল্প আয়েই এতদিন পরিবারের ভরণ পোষণসহ ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া খরচ চালিয়ে আসছিলেন। তবে করোনার দ্বিতীয় ধাপে লকডাউনের কারণে আবারও থমকে গেছে জীবন-জীবিকা।

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ভয়কে উপেক্ষা করে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের ক্ষুধা নিবারণ করার লক্ষে লকডাউনের মধ্যেও বসেছেন ফুটপাথে। তবে লকডাউনে আয় রোজগার একপ্রকার বন্ধ থাকায় এবং সরকারি বা ব্যক্তি উদ্যোগে এখনও পর্যন্ত কেউ কোন সহযোগিতা না করাই তারা অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছেন।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by