খুলনা

শিবসা নদী এখন সরু খাল, দ্রুত খননের দাবি

  প্রতিনিধি ১৭ জানুয়ারি ২০২৪ , ৪:৪২:২৯ প্রিন্ট সংস্করণ

শিবসা নদী এখন সরু খাল, দ্রুত খননের দাবি

খুলনার পাইকগাছা পৌরসভার কোল ঘেষে বয়ে যাওয়া খরস্রোতা শিবসা নদী পলি জমে সরু খালে পরিণত হয়েছে। নদীর তলোদেশ ভরাট হওয়ায় সামান্য জলোচ্ছাস বা জোয়ারের পানি বাড়লে পৌর সদরসহ নদী পাড়ের ইউনিয়নের নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। পানি নিস্কাশন না হওয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে কাঁচা ঘরবাড়ি, ফসলাদি নষ্ট হচ্ছে। নদীটি খননের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছে পাইকগাছা উপজেলেবাসী।

পাইকগাছা পৌরসভা, গদাইপুর, লতা, সোলাদানা, দেলুটি চার ইউনিয়ন ও পৌরসভার মধ্যে দিয়ে বয়ে গেছে খরস্রোতা শিবসা নদী। এ নদীটি পলি জমে সরু খালে পরিনত হয়েছে। মাত্র কয়েক বছর পূর্বে নদী দিয়ে  লঞ্চ, স্টীমার চলতো। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের খুলনা শহরে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যেম ছিলো নদী পথ। ব্যবসায়ীরা কম খরচে গহনা নৌকায় মালামাল আনতো জেলা শহর থেকে। পৌর সদরের পাইকারী ব্যবসায়ী পিযুষ সাধু জানান, নদী পথ বন্ধ হওয়ায় ট্রাকে করে মাল আনতে খরচ বেশি হচ্ছে। তিনি আরো বলেন পূর্নিমা ও অমাবস্যা গোনে পানি বাড়লে নৌকায় মালামাল আনা যায়।

কিন্তু অতিরিক্ত পানি না বাড়লে মালবাহী নৌকা কুলে আসে না। সময়মত মালামাল উঠানো নামানো যায় না। মালের বিশেষ প্রয়োজন হলে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে নামাতে হয়।  সোলাদানা ইউনিয়নের ভিলেজ পাইকগাছা গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম জানান, পৌরসভার ৩ দিকে ছিল ৩টি খেয়াঘাট। হাজার হাজার যাত্রী পারাপার হতো খেয়া নৌকায়। কিন্তু কালের বিবর্তনে নদীটি পলি জমে একেবারেই ভরাট হতে চলেছে। বর্তমানে লঞ্চ, স্টীমার দুরের কথা নৌকাও চালাতে পারছে না। খেয়াঘাট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রায় ৩ কিলোমিটার ঘুরে বাড়ি যেতে হয়। নদীর তলদেশের তুলনায় পৌর সদর ও নদীর পাশের বিলের জমি অনেক নিচু হয়ে গেছে। ফলে পৌর সদর সহ এলাকার পানি নিস্কাশন ব্যবস্থা হারিয়ে ফেলেছে।

নদীতে সামান্য জলোচ্ছাস বা জোয়ারের পানি বাড়লে বাজার তলিয়ে যায়। পৌর সদরসহ আশ-পাশের এলাকা অধিকাংশ সময় তলিয়ে থাকে। নদীতে পলি জমে দু’ধারে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ জন্মে বনাঞ্চলে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে শিববাটী ব্রীজ হতে পৌর সদরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া শিবসা নদী হাড়িয়া পর্যন্ত প্রায় ১৪ কিলোমিটার পলি জমে চরাঞ্চলে পরিণত হয়েছে। নেই কোন খেয়াঘাট, লোকজন হেটেই নদী পার হচ্ছে। এমনিভাবে চলতে থাকলে ১/২ বছরের মধ্যে পাইকগাছা পৌর সদরসহ আশপাশ এলাকা বছরের পর বছর তলিয়ে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। গদাইপুর ইউনিয়নের অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক মোজাম্মেল হক জানান, শিবসা নদী ভরাট হওয়ার কারণে গদাইপুর ইউনিয়নের পানি নামতে পারছে না। সে কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে ডুবে আমন ধান গাছপালা মারা যাচ্ছে। দেলুটি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান রিপন কুমার মন্ডল জানান, আমার ইউনিয়নটি দ্বীপ বেষ্টিত। একদিকে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে, অন্যদিকে, পানি বাড়লে ঝুকিপূর্ণ ওয়াপদা ভেঙ্গে পোল্ডার অভ্যন্তরে পানি প্রবেশ করে।

পৌর মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীর জানান, আগামী দিনে পৌরসভাসহ শিবসার পাশের ইউনিয়নকে বাঁচাতে হলে নদী খনন জরুরী হয়ে পড়েছে। খুলনা নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আশরাফুল আলম জানান, ৩১ নং পোল্ডার খনন করা হবে। শিববাটি ব্রিজ হতে সোলাদানা পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার নদী ৩১ নং পোল্ডারের মধ্যে রয়েছে। আমরা কাগজ পত্র তৈরী করে মন্ত্রনালয়ে পাঠিয়েছি। এখনো প্লানিং কমিশনে রয়েছে। সেখান থেকে একনেকে বৈঠকে পাশ হওয়ার পর টাকা বরাদ্ধ হবে। তখই কাজ শুরু হবে।সর্বোপরি, বৃহত্তর জনগোষ্ঠিকে বাঁচাতে নদীটি খনন করে পূর্বের ধারায় ফিরিয়ে নিতে স্থানীয় সাংসদের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করে জোর দাবি তুলেছেন পাইকগাছা উপজেলাবাসি।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by