রংপুর

সড়ক দূর্ঘটনায় স্বামীর পর প্রাণ হারালেন স্ত্রী

  প্রতিনিধি ২৭ আগস্ট ২০২৩ , ৬:৪১:৩৬ প্রিন্ট সংস্করণ

সড়ক দূর্ঘটনায় স্বামীর পর প্রাণ হারালেন স্ত্রী

২০২২ সালের আগস্ট মাসে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় পিয়াল ও মিতু’র। দাম্পত্য জীবন সুখের ছিল। একটি আকস্মিক সড়ক দুর্ঘটনায় সব স্বপ্ন শেষে হয়ে যায়। মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই মারা যান পিয়াল। গুরুত্বর আহত স্ত্রী মিতু এ হাসপাতাল থেকে ও হাসপাতাল ঘুরে ঘুরে সাত দিন ধরে বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টা করে তিনিও জীবন যুদ্ধে হেরে যান।

এত অল্প বয়সে তাদের এমন পরিণতি কেউ মানতে পারছেন না। স্বামীর মৃত্যু পর স্ত্রী মারা যাওয়ার খবরটি এলাকার মানুষকে ব্যথিত করেছে।


এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ আগস্ট ঢাকা থেকে মোটরসাইকেল যোগে পিয়াল ও মিতু কুড়িগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। ওই দিন সন্ধ্যার দিকে গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জে পৌঁছিলে তাদের মোটরসাইকেলটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান পিয়াল। পরে স্থানীয়রা আশংকাজনক অবস্থায় মিতুকে গোবিন্দগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন।


নিহত পিয়ালের ছোট ভাই দারুদ রিয়াল আমান বলেন, গত বছরের ১৮ আগস্ট পিয়াল ও মিতুর বিয়ে হয়। ভাই-বোনদের মধ্যে সবার বড় ছিলেন পিয়াল। পিয়াল কুড়িগ্রাম সরকারি পলিটেকনিক্যাল থেকে পাশ করার পর ঢাকায় বিএসসি করেন। এরপর বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইবিএস গ্রুপে চাকরি নেন। এরপর তারা (স্বামী-স্ত্রী) ঢাকায় থাকতেন। ওই কম্পানি থেকে পিয়ালকে অস্ট্রেলিয়ায় দুই বছর মেয়াদের চাকরির সুযোগ পান। ২৭ আগস্ট তার অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার কথা ছিল এজন্য বাড়ি আসছিলেন। কিন্তু আমার ভাই শেষ পর্যন্ত জীবন নিয়ে বাড়িতে পৌঁছিতে পারলেন না। সন্তানকে হারিয়ে বাবা মা পাগল প্রায়। নিহত পিয়াল হাসান (৩০) চিলমারী উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের ফরকেরহাট ময়নার খামার গ্রামের শাহ আলমের ছেলে। দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে পিয়াল সবার বড়।


নিহত মিতুর স্বজন ও এলাকাবাসী জানায়, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ১৯ আগস্ট ঢাকা ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতাল এবং ২০ আগস্ট ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হয়। মিতুর অবস্থা অবনতির দিকে যাওয়ায় ২২ আগস্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে শ্যামলীর ট্রমা সেন্টার এবং অর্থোপেডিক হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ওই দিন চিকিৎসক তার ডান হাত ও পা কেটে ফেলেন। এর দুই দিন পর গত ২৫ আগস্ট (শুক্রবার) বিকেল সাড়ে চারটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মিতু। নিহত মিম্মা আরা মিতু (২৪) উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের ঘোলদার পাড়ার সাবেক সেনা সদস্য মিজানুর রহমান দুলুর মেয়ে। দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে মিতু সবার বড়। তিনি সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। স্বামীর চাকরির সুবাদে ঢাকায় বসবাস করতেন তারা।


এদিকে কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে জীবনের কাছে পরাজয় বরণ করা মিতুর মৃতুর সংবাদটি ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। শনিবার (২৬ আগষ্ট) সকালে ঢাকা থেকে মিতুর মরদেহ গ্রামে পৌঁছিলে একনজর দেখার জন্য আশপাশের লোকজন ছুটে যান তার বাড়িতে। এ সময় ওই এলাকা শোকে নিস্তব্ধ হয়ে যায়। পরে তাকে ঘোলদার পাড় গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শায়খুল ইসলাম নয়া শোক প্রকাশ করে বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। স্বামীর পর স্ত্রী মিতু মৃত্যুবরণ করেছেন। আমাদের সবাইকে সাবধানে মোটরসাইকেল চালানোর দরকার। সবার সচেতনতা প্রয়োজন।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by