চট্টগ্রাম

সীতাকুণ্ডে স্বামী হৃদয় নিজের হাতে হত্যা করে স্ত্রী সায়মাকে,১৬৪ ধারায় জবানবন্দি 

  প্রতিনিধি ১১ মে ২০২৩ , ৯:৩২:৫১ প্রিন্ট সংস্করণ

কামরুল ইসলাম দুলু.চট্টগ্রাম :
স্ত্রীকে নিজ হাতে ছুরি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করেছে বলে স্বীকারোক্তি জবানবন্দি দিয়েছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের মুরাদপুর ইউনিয়নের হাসনাবাদ গ্রামে খুন হওয়া গৃহবধূ রোশনী আক্তার সায়মা’র স্বামী দিদারুল আলম হৃদয়। স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে পরকীয়ার সন্দেহের কারণে এমন হত্যাকান্ড বলে মনে করছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করে দিদারুল আলম।
গত মঙ্গলবার (৯মে) উপজেলার মুরাদপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের হাসনাবাদ গ্রামের মোঃ দেলোয়ার হোসেনের নতুন বাড়িতে জবাই করে স্ত্রীকে হত্যা করার পর এটিকে বাড়ীর লোকজন ডাকাতির ঘটনা বলে প্রচার করে। সীতাকুণ্ড মডেল থানার ওসি তোফায়েল আহমেদ বলেন, পারিপার্শ্বকতা ও প্রযুক্তির সহায়তায় আমরা উপলব্ধি করতে সক্ষম হই যে, ঘটনাটি ভিকটিমের শ্বশুর বাড়ীর লোকজন ডাকাতির ঘটনা বলে প্রচার করলেও প্রকৃত পক্ষে ঘটনাটি হচ্ছে একটি পরিকল্পিত খুনের ঘটনা।
এমতাবস্থায় আমি ভিকটিমের স্বামী, ভিকটিমের ননদসহ অন্যান্যদের মোবাইল ফোন এবং অন্যান্য বিষয়াদি প্রযুক্তির আলোকে অনুপঙ্খ পর্যালোচনা করি এবং অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যাদির বিষয়ে আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সহ থানার স্পেশাল টিমের সঙ্গে আলোচনা করি। উক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে আমার প্রাপ্ত তথ্যাদি ও পারিপার্শ্বিকতায় প্রকাশিত তদন্তে প্রাপ্ত ফলাফল সম্পর্কে সকলে একমত পোষন করেন যে, ঘটনাটি সম্পূর্ণ ভাবে একটি পরিকল্পিত খুনের ঘটনা। পরবর্তীতে আমি ও আমার স্পেশাল টিমের অফিসাদের নিয়ে ভিকটিমের স্বামী দিদারুল আলম প্রকাশ হৃদয়কে তথ্য প্রযুক্তির আলোকে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদ করি। জিজ্ঞাসবাদে ভিকটিমের স্বামী এক পর্যায়ে স্বীকার করেন যে, তিনি নিজেই তার স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যা করেছে। আদালতে ১৬৪ ধারা জবানবন্দিতে আসামী দিদারুল আলম স্বীকার করেন যে, ঘটনার দিন সে পরিবারের কাউকে কোন কিছু না বলে রাত অনুমান ১০ টার দিকে তার বাড়ীতে এসে পৌছায়। বাড়ীতে পৌছে সে তার স্ত্রীর শয়ন কক্ষের পাশে গিয়ে উকি দিয়ে দেখেন যে, তার স্ত্রী তার বাচ্চাকে দুধ খাওয়াচ্ছেন। তখন তার অতিরিক্ত গরম অনুভুত হওয়ায় সে তাদের পুকুর পাড়ে খড়ের গাদার পাশে গিয়ে অবস্থান করেন। সেখানে গিয়ে সে তার স্ত্রীকে ফোন দেয় এবং পুকুর পাড়ে তার স্ত্রীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি  নিয়ে আসতে বলে। তখন তার স্ত্রী তাকে বলে যে, আমি আসতে পারি কিন্তু তুমি আমাকে কোন স্পর্শ করবে না। পরবর্তীতে তার স্ত্রী পুকুর পাড়ে পিছনে হাত দিয়ে আসেন। আসার পরে সায়মার স্বামী দিদারুল আলম হৃদয় তাকে জিজ্ঞাসা করে যে, তোমার ফোন কোথায় এবং আলাপ চারিতার এক পর্যায়ে সে তার স্ত্রীকে ঠোটে জোর পূর্বক আদর করেন। এতে সায়মা ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। এরপর হৃদয়ের হাতে থাকা ছুরি দিয়ে সায়মা’র গলায় পৌছ দেয়। এসময় ধড়পড় শুরু করে। তাতে কোন কাজ না হলে তার স্ত্রী মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তখন স্বামী দেখেন যে, সায়মা আর বাঁচবে না এবং তার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। এমতাবস্থায় হৃদয় নিজে ছুরি নিয়ে তার গলা কেটে দেয় এবং বুকের বাম পাশে তিনটি কোপ দিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। কিছুক্ষন ঘটনাস্থলে বসে থেকে পাশে খোলা মাঠ দিয়ে হাবিব রোডে চলে যায়। ঘটনাটি অন্য দিকে প্রবাহিত করার জন্য সাড়ে ১২ টার দিকে বাড়ীতে পুলিশের উপস্থিতি নিশ্চিত হয়ে সে তার কর্মস্থল ফটিকছড়ি থেকে এসেছে মর্মে প্রমান করার চেষ্টা করে। ওসি তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমার প্রাথমিক তদন্তে ভিকটিম ও ভিকটিমের স্বামী একে অপরের উপরে পরকীয়া সন্দেহ হওয়ায় এই হত্যা সংগঠিত হয়েছে মর্মে প্রকাশ পায়। এটি একটি পূর্ব পরিকল্পিত ঘটনা। ঘটনার বিষয়ে আরো গভীর তদন্ত অব্যহত রয়েছে। ভিকটিমের স্বামী বৃহস্পতিবার বিজ্ঞ আদালতে ঘটনার বিষয়ে নিজেকে জড়িয়ে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by