রংপুর

উলিপুরে মেলা উপলক্ষ্যে খেলার মাঠ ৯ মাস ধরে বন্ধ

  প্রতিনিধি ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ , ৮:০১:২২ প্রিন্ট সংস্করণ

উলিপুরে মেলা উপলক্ষ্যে খেলার মাঠ ৯ মাস ধরে বন্ধ

কুড়িগ্রামের উলিপুরে মেলা উপলক্ষ্যে খেলার মাঠ প্রায় ৯ মাস ধরে বন্ধ রাখা হয়েছে। মাসের পর মাস মাঠ বন্ধ থাকলেও অজ্ঞাত কারণে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি প্রশাসন। প্রায় দুই বছর পূর্বে ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম মাঠটি নতুন ভাবে সাজানো হলেও বর্তমানে সেখানে নেই খেলাধুলার পরিবেশ। এ নিয়ে ক্রীড়াপ্রেমী ও স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের জুন মাস থেকে স্টেডিয়াম মাঠে খেলাধুলা বন্ধ রেখে, মাঠ ঘিরে করা হয় মেলার আয়োজন। দীর্ঘদিন মাঠটি বন্ধ থাকার পর গত ১৯ জানুয়ারি শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম মাঠে উপজেলা পরিষদ হস্ত কুটির শিল্প ও পণ্য মেলা এবং সার্কাস শুরু হয়। মেলার আয়োজক উপজেলা পরিষদ। মেলা শুরুর কয়েকদিন পর থেকেই চটকদার সব বিজ্ঞাপন প্রচার করে মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, সোনার অলংকার, গরু, টিভি, ফ্রিজসহ বিভিন্ন রকমের পুরস্কারের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতিদিন র‌্যাফেল ড্রয়ের টিকিট বিক্রি করা হয়।

লোভে পড়ে সাধারণ মানুষ কিনেছেন এসব লটারির টিকিট। মেলায় র‌্যাফেল ড্র-সংশ্লিষ্টরা এভাবে প্রতিদিন মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় লাখ লাখ টাকা। এ নিয়ে সর্বত্র সমালোচনা শুরু হলে সাময়িকভাবে ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে তা বন্ধ রাখা হয়। এরপর থেকে প্রকাশ্যে মাইকিং করে প্রচার-প্রচারণা বন্ধ হলেও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বাঁধাহীন ভাবে চলছে মেলা। দীর্ঘদিন থেকে খেলার মাঠ বন্ধ থাকায় ক্রীড়াপ্রেমী ও স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

এছাড়া স্টেডিয়ামের পাশে রয়েছে এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র। পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে চলমান মেলা নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে মেলা কর্তৃপক্ষ পুনরায় প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে পুরোদমে মেলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার ফুটবলার জিয়াউর রহমান, শাওন আহম্মেদ, ক্রিকেটার মেহেদী হাসান ও ফুয়াদ হোসেনসহ অনেক খেলোয়াড় অভিযোগ করে বলেন, খেলা ধুলার কথা কেউ চিন্তা করেন না। আমরা শুনেছি ‘‘খেলার মাঠে মেলা হবে না’ প্রধানমন্ত্রীর দেয়া এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে উদ্যোগী হয়ে কাজ করে যাচ্ছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।

প্রায় দুই বছর পূর্বে ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম মাঠটি সংস্কার করা হয়। অথচ মেলার কারণে দীর্ঘ নয় মাস ধরে মাঠ বন্ধ রেখে অজ্ঞাত কারণে সরকারি বিভিন্ন অনুষ্ঠান করা হয় ছোট পরিসরে স্কুল মাঠে। এমনকি গত বিজয় দিবসের সরকারি কর্মসূচি পালন করা হয় স্কুল মাঠে। এছাড়া গত জুন মাসে অনুষ্ঠিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের (অনুর্দ্ধ-১৭) খেলা গুলো উপজেলা সদর থেকে দূরবর্তী ধামশ্রেনী ইউনিয়নের মাঠে গড়ায়।

উপজেলার সকল খেলোয়াড়দের দাবি দ্রুত খেলার মাঠটি পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে এনে খেলা ধুলার পরিবেশ সৃষ্টি করা হোক। সার্কাস ও মেলার প্রোপাইটার (মালিক) জাহাঙ্গীর হোসেন মিয়ার সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, সার্কাস ও মেলার পুনঃরায় অনুমতির জন্য জেলা সদরে অবস্থান করছি। ফিরে গিয়ে মেলার সার্বিক বিষয়ে কথা হবে। উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার জানান, মেলা ও সার্কাসের বিষয়ে আমার সাথে কোন আলোচনা হয়নি। এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে তিনি স্বীকার করেন, দীর্ঘদিন ধরে খেলার মাঠটি বন্ধ রাখা দুঃখজনক।

মেলা পরিচালনা কমিটির সভাপতি, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টু বলেন, উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেলা চালানো হয়েছে। বর্তমানে চলমান মেলার বিষয়গুলো আমার জানা নেই। তবে আমি শুনেছি সার্কাস ও মেলার প্রোপাইটার জাহাঙ্গীর হোসেন প্রশাসনের কাছে ধরনা দিচ্ছেন মেলাটি পুনরায় চালানোর জন্য।

দীর্ঘদিন ধরে খেলার মাঠ বন্ধ ও এসএসসি পরীক্ষা চলমান এ অবস্থায় মেলা চালানো কতটুকু যৌক্তিক জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়গুলোর সাথে আমি আর নেই। স্টেডিয়াম মাঠের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) কাজী মাহমুদুর রহমান জানান, মেলা চালানোর অনুমতি এক সপ্তাহ পূর্বে শেষ হয়েছে।

তাদের দ্রুত মাঠ খালি করতে নিদের্শনা দেয়া হয়েছে। এরপরেও যদি তারা বিলম্ব করে তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Powered by