ঢাকা

গাজীপুরে কৃষি সম্প্রসারণে অনিয়ম- দুর্নীতি কৃষির উন্নয়নে কাজে আসছে না সরকারী বরাদ্দ

  প্রতিনিধি ৮ আগস্ট ২০২০ , ৭:২৮:০৪ প্রিন্ট সংস্করণ

গাজীপুরে কৃষি সম্প্রসারণে অনিয়ম- দুর্নীতি  কৃষির উন্নয়নে কাজে আসছে না সরকারী বরাদ্দ

মঞ্জুর হোসেন মিলন, গাজীপুর: কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সুসংহত করতে ফসলের উন্নত জাত, প্রযুক্তি প্রদর্শনী স্থাপন, গ্রহণকরণ ও মাঠ দিবস খাতের টাকা লুটপাটের অভিযোগ ওঠেছে গাজীপুর সদর উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। বøক পরিদর্শন না করে কর্মকর্তাদের ভ্রমণ বিল ও মোটরসাইকেলের পেট্রোলের টাকা এবং ভুট্রা, পেঁয়াজ, ভিটি বেগুন, সড়িষাসহ বিভিন্ন প্রদর্শনী না করে মিথ্যো ভাউচারে বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া প্রদর্শনীভূক্ত বীজ উৎপাদনে নির্বাচীত কৃষকদের যে সংখ্যা দেখানো হয়েছে বাস্তবে এতো কৃষক নেই। অনুসন্ধানে জানা গেছে, গাজীপুর সদর উপজেলা কৃষি অফিসের সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নতুন ফসল, ফসলের জাত ও উন্নত কৃষি প্রযুক্তি প্রবর্তন ও সম্প্রসারণে বিগত অর্থ বছওে (২০১৮-২০১৯) প্রদর্শনী মাঠ দিবস কাগজে-কলমে হলেও বাস্তবে হয়নি। খাদ্য নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ফসলের উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ এবং উৎপাদন বৃদ্ধি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে রাজস্ব অর্থায়নে প্রদর্শনী স্থাপন ও গ্রহণ কার্যক্রমে অনিয়মের শেষ নেই। এসকল অনিয়মের সাথে জড়িত উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাবিনা সুলতানা, অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা বনানী কর্মকার ও সম্প্রসারণ কৃষি কর্মকর্তা সাবরিনা আফরিন এবং সহায়তা করছেন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম ভূইয়া পাভেল, সানিয়া সুলতানা সহ কয়েকজন।
মসলা উৎপাদনে কৃষকদের আগ্রহী করে তুলতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ডাল, তেল, মসলা বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্পের আওতায় সদর উপজেলার বাড়িয়া ইউনিয়নের সুকন্দি গ্রামের কৃষক আহসান সরকার আদা চাষ করেন। কৃষককে সরকারী সহায়তায় বীজ, সার ও অন্যান্য সহায়তা বাবদ এক লাখ ত্রিশ হাজার টাকার সমপরিমাণ সহায়তার কথা। কিন্তু কৃষক আহসান সরকার পেয়েছেন এক টন প াশ কেজি বীজ। কৃষক আহসান নির্দেশনা মতে জমি প্রস্তÍুত করেন। জমিতে বপনের আগে আদা বীজ শোধনের কথা থাকলেও বøকের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার অসহযোগীতায় কৃষক শোধন ছাড়াই জমিতে লাগান আদা। এরপর ছত্রাকে আক্রান্ত হয়। ক্ষেতে জন্মানো আদা গাছ কিছুদিন পর লাল হয়ে মরে যায় বলে কৃষক আহসান সরকার জানান। এক টন প াশ কেজি বীজ বপন করে উৎপাদিত ফসল পেয়েছে দশমন। এই আদা প্রদর্শনীতে মাঠ দিবস দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেছেন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো: শহীদুল ইসলাম ভূইয়াসহ সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম ভূইয়া পাভেল আদা চাষ নিয়ে আপনার সাথে কোনো কথা নেই বলে ফোন কেটে দেয়। পরে একাধিক বার ফোন করে দেখা করে কথা বলবে বলে জানান। একই বøকের দিগধা গ্রামে বোরো ব্রী ধান-৮১ এর প্রদর্শনীভূক্ত বীজ উৎপাদন ১৫জন কৃষক দলের প্রধান মো. সুরুজ্জামানের প্রদর্শনী প্লটে মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটি ছিল ৫০জন কৃষকের মাঠ দিবস। এ মাঠ দিবসে উপস্থিত সকল কৃষক সন্মানি ভাতা তিনশ টাকা পাওয়ার কথা ছিল। নাম গোপন রাখার শর্তে কয়েকজন কৃষক এ প্রতিবেদককে জানান, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি নেয়া হয়েছে, তবে কয়েকজন কৃষক ছাড়া অন্যদের ভাতা দেয়া হয়নি। সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের বিকেবাড়ি বøকে ফসলের উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ এবং উৎপাদন বৃদ্ধি কার্যক্রম ব্যহৃত হচ্ছে। প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনী কার্যক্রম সম্পর্কে দু‘একজন ছাড়া কিছুই জানেন না কৃষকরা। শুধু তা-ই নয়, ফল ও বৃক্ষমেলা-২০১৯ এর আওতায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে চারা বিতরণের মাস্টার রোলে ডগরী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বিকেবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম রয়েছে। বিকেবাড়ি বøকের দায়িত্ব প্রাপ্ত উপ- সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সানিয়া সুলতানা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গাজীপুরের উপ পরিচালকের দপ্তরে দাখিল করা মাস্টার রোলে প্রাপ্তি স্বীকার স্বাক্ষরের কলামে দু‘টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকের নাম রয়েছে। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ডগরী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহিদ হোসেন এবং বিকেবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিজুল ইসলাম চারা গাছ পায়নি বলে জানান এবং মাস্টার রোলের স্বাক্ষর তাঁদের নয় বলে জানান। এ ব্যাপারে উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সানিয়া সুলতানার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও বক্তব্য পাওয়া যায় নি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাবিনা সুলতানা বলেন, আমরা এখন করোনা ও বন্যা পরবর্তী র্কাক্রম নিয়ে ব্যস্ত। পুরোনো বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাইনা। আমাদের ভালো কাজ নিয়ে রিপোর্ট লিখেন-মন্দ কথা লিখবে না। একাধিক সুত্রে জানা যায়, কৃষি সম্প্রসারণ কাজে গাজীপুরের উপ পরিচালক মো. মাহবুব আলম শশরীরে মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন বা তদারকি করেন না। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন উপজেলা প্রশিক্ষণে উপস্থিত না হয়ে ‘বক্তৃতা ভাতা’র নামে টাকা লোপাটের অভিযোগ রয়েছে। কৃষি প্রশিক্ষণে কথিত বক্তৃতা দেওয়ার নামে টাকা পকেটে ভরার অভিযোগ এই উপপরিচালকের বিরুদ্ধে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত জুন মাসে জেলার উপজেলাগুলোর কোনোটিতে অনুষ্ঠিত প্রশিক্ষণে অংশ নেন নি। অবৈধভাবে টাকা নেয়ার জন্য বক্তৃতাস্থলে উপস্থিত না থেকে কাগজে- কলমে উপস্থিত সীটে স্বাক্ষর দেখিয়ে ভাতা নিয়েছেন। অনিয়ম অব্যবস্থাপনা বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গাজীপুরের উপ পরিচালক মো. মাহবুব আলম বলেন, আমার এখানে অনিয়ম হয়না।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by