ঢাকা

গাজীপুরে শতবর্ষী দুটি হাট উন্নয়নের উদ্যোগ নেই

  প্রতিনিধি ১০ এপ্রিল ২০২১ , ৭:১০:২০ প্রিন্ট সংস্করণ

মঞ্জুর হোসেন মিলন, গাজীপুর:

 

গাজীপুর সদর উপজেলার শত বছরের পুরোনো দুটি হাট ভাওয়াল মির্জাপুর  ও কেশরিতা। হাট দুটির একটি ঐতিহ্যবাহী মির্জাপুর সপ্তাহের বুধবার এবং কেশরিতা বটতলায় হাট বসত সপ্তাহে রোববার ও বুধবার।

হাটবারে সরগরম হয়ে ওঠে মির্জাপুর বাজার। তবে কেশরিতায় দীর্ঘদিন ধরে আর হাট বসেনা। এখানে নেই শৌচাগার, নেই কোনো সুযোগ সুবিধা। হাট দুটির উন্নয়নে সরকারের উদ্যোগ গ্রহণের দাবি স্থানীয়দের।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শত বছরেরও বেশী আগে সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের প্রাণকেন্দ্রে নদের তীরে মির্জাপুরে হাট বসে আসছে প্রতি বুধবার। এবং বাড়িয়া ইউনিয়নের কেশরিতা খালের পশ্চিমপাড় বটতলায় শতবছর আগে হাটের যাত্রা শুরু হয়েছিল। দুটি হাটের রয়েছে সরকারি জমি।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মির্জাপুর উপজেলার সবচেয়ে পুরোনো ও বড় বাজার। মির্জাপুর হাট থেকে চলতি বছর সরকার রাজস্ব পেয়েছিল ৯০ লাখ টাকা। তবে কেশরিতা হাট না বসায় সরকারিভাবে এখন ইজারা হয়না।

 

এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জলপথে যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধায় বেলাইবিলের পশ্চিমপাড় কেশরিতা বটতলায় ভাওয়াল জমিদারদের আমলে হাট বসতে শুরু করে। একসময় এই হটের জৌলুস ছিল, এখন জলপথ সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় এবং স্থলপথে বিকল্প রাস্তা হওয়ায় সপ্তাহের হাট বসেনা। কেশরিতা হাটের পূর্ব পাশে কালিগঞ্জের বিশাল এলাকা বেলাইবিলে ওপর দিয়ে রাস্তা নেই। আবার গাজীপুর জেলা সদরের সাথে যে রাস্তাটি রয়েছে তা’ও সরু।

 

বটতলায় রয়েছে কয়েকটি দোকান। কেশরিতা বাজারের দোকানদার হাফিজুল ইসলাম বলেন, হাট না বসলেও প্রতিদিন শতশত মানুষ আসে ঘুরতে। বিকেল বেলায় মোটরসাইকেল রাখারও জায়গা থাকেনা। মোটরবাইকে ঘুরতে আসা কলেজ ছাত্র লিমন বলেন, এখানকার প্রকৃতিক পরিবেশ মনোরম। দক্ষিণ ও পূর্ব দিক উন্মোক্ত হওয়ায় এখানে সময় কাটাতে ভাল লাগে। এ জায়গার উন্নয়ন হলে গড়ে ওঠতে পারে বিনোদন কেন্দ্রে।

স্থানিয় বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব কেরামত আলী বলেন, একসময় নৌপথের সুবিধার্থে আশপাশের উপজেলা থেকেও মানুষ এখানে হাটে নানা পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করতেন। সড়ক পথে পণ্য আনা- নেওয়ার সুবিধা হওয়ায় এখানে আর হাট বসেনা। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও এই হাটের উন্নয়ন করা হলে আবার জমজমাট হয়ে ওঠতে পারে। কেশরিতার বাসিন্দা মাইন উদ্দিন মাস্টার সন্তানদের লেখাপড়ার সুবিধার্থে এখন থাকেন জয়দেবপুর শহরে। ছুটির দিন বা অবসর পেলে কেশরিতার বাড়িতে আসেন। গতকাল শনিবার কেশরিতা বটতলায় কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

 

তিনি বলেন, এই বাজারের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হলে জেলা সদরের সাথে রাস্তা প্রশস্ত করা এবং কালিগঞ্জের নরুন ও পুনসই এলাকার সাথে সড়ক যোগাযোগ লাঘবে।

হাটের ইজারাদার ও ভাওয়াল মির্জাপুর বাজার পরিচালনা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো: আব্দুল গনি বলেন, এ হাটে বাঁশ, কাঠ, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি থেকে শুরু করে তরমুজ, চাল, ডালসহ কৃষকদের উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করা হয়। তবে নির্দিষ্ট কোনো গরু বাজার নেই।

 

শত বছরের পুরোনো এই হাট এখনো ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ সরকারিভাবে এ হাটের কোনো উন্নয়নকাজ করা হয়নি। সেটগুলোর অবস্থা অনেক খারাপ। করোনার কারণে গতবছরও চার মাস বাজার বন্ধ ছিল, আবার লকডাউন শুরু হবে, ইজারা নিয়ে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত। সরকারিভাবে কোনো প্রণোদনা পাইনি।

মির্জাপুর বাজারের ব্যবসায়ী প্রভাষক আবুল বাসার বলেন, সরকার এই হাট থেকে প্রতিবছর রাজস্ব পায়, অথচ বাজারে আসা ক্রেতা- বিক্রেতাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ছেনা। বাজারের সবগুলো সেট নষ্ট, সংস্কার হওয়া দরকার। আর বৃষ্টি হলে বাজারে কাঁদায় মানুষের দুর্ভোগ বাড়ে।

 

গাজীপুর সদর উপজেলা প্রকৌশলী মুহাম্মদ শাকিল হোসেন বলেন, মির্জাপুর বাজারের কিছু উন্নয়ন কাজ চলছে। তবে কেশরিতা বাজার উন্নয়নে এখনো কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল জাকীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলে রিসিভ না করায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

Powered by