Uncategorized

ছেঁউড়িয়ায় এবার বসবে না লালনমেলা

  প্রতিনিধি ১৬ অক্টোবর ২০২০ , ৭:৪১:০৮ প্রিন্ট সংস্করণ

ছেঁউড়িয়ায় এবার বসবে না লালনমেলা

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
আজ শনিবার ১লা কার্তিক। উপমহাদেশের আধ্যাত্বিক পুরুষ বাউল স¤্রাট ফকির লালন শাহের ১৩০তম তিরোধান দিবস। আর এই দিবসটিকে ঘিরে প্রতিবছরই আধ্যাত্বিক গুরু ফকির লালনকে স্মরণ ও তার দর্শন পাওয়াসহ অচেনাকে চেনা, জ্ঞাণ সঞ্চয়, আত্মার শুদ্ধি ও মুক্তির লক্ষে সাধু সঙ্গে ও পূণ্য সেবায় যোগ দিতে আত্বিক প্রশান্তির প্রয়াসে সাঁইজির ধামে আসেন লালন ভক্ত-অনুসারী ছাড়াও অসংখ্য দেশ-বিদেশের দর্শনার্থী। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারনে এবার হচ্ছেনা ১লা কার্তিক বাউল স¤্রাট ফকির লালন শাহের ১৩০তম তিরোধান দিবসের অনুষ্ঠান। জেলা প্রশাসন করোনা ভাইরাসের কারনে এবার বাউল স¤্রাট ফকির লালন শাহের ১৩০তম তিরোধান দিবসের সকল অনুষ্ঠান স্থগিত করায় হতাশ লালন ভক্ত- অনুসারীরা। তারপরও তিরোধান দিবস উপলক্ষে দুর-দুরান্ত থেকে কুষ্টিয়ায় আসতে শুরু করেছেন বাউল-ফকির, ভক্তরা। আখড়াবাড়ির প্রধান গেট তালা বন্ধ থাকায় সেখানে ঢুকতে না পেরে কালী নদির তীরে লালন একাডেমির বিশাল মাঠে জড়ো হয়েছিলেন তারা। কিন্ত গত দুইদিন আগে সেখান থেকেও বাউল-ফকির ও ভক্তদের বের করে দিয়ে মাঠে ঢোকার সকল গেটে তালা মেরে দেয় কমিটির লোকজন। এখন তারা লালন একাডেমির সামনের রাস্তা ও আশেপাশের এলাকায় জড়ো হচ্ছেন। এখানে আশা বাউল-ফকির ও ভক্তরা বলছেন আমরা এখানে আসি সাঁইজিকে স্মরণ করতে, আমাদের ধর্মনীতি পালন করতে দেয়া হোক। না হলে অধর্ম হবে। করোনার কারণে মেলা না হোক, লালনের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করতেই হবে। তাই অতিদ্রæত লালন মাজারের প্রধান গেটের তালা খোলাসহ সাধুদের সবধরনের সুযোগ সুবিধা দেওয়ার দাবী তাদের। এখানকার ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনার কারণে গত সাত মাস লালনের আঁখড়াবাড়ি বন্ধ আছে। এতেকরে তাদের চরম লোকশান গুনতে হচ্ছে আবার নতুন করে তিরোধান দিবসের অনুষ্ঠান স্থগিত করায় চরম বিপর্যয়ে সম্মুখিন হবেন তারা। আর লালন একাডেমির সভাপতি ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মোঃ আসলাম হোসেন বলছেন, দূর-দুরান্ত থেকে আসা বাউল ও ভক্তরা একসঙ্গে হলে সংক্রমণ বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সুপারিশ ও লালন একডেমীর এডহক কমিটির সিদ্ধান্তে সরকারের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে স্থগিত করা হয়েছে তিরোধান দিবসের অনুষ্ঠান। উল্লেখ্য, ১২৯৭ বঙ্গাব্দের পহেলা কার্তিক মরমী সাধক বাউল স¤্রাট ফকির লালনশাহের মৃত্যুর পর থেকে তার স্বরনে প্রতিবছরই তিরোধান দিবসের অনুষ্ঠান চালিয়ে আসছে তার অনুসারীরা। এ উপলক্ষে আখড়াবাড়ী চত্বরে কালী নদীর তীরে মাঠে লালন মেলার আয়োজন করা হয়। আর আখড়াবাড়ির ভেতরে ও বাইরে লালন অনুসারী, ভক্তদের খন্ড খন্ড সাধু আস্তানায় গুরু শিষ্যের মধ্যে চলে লালনের জীবন কর্ম নিয়ে আলোচনা ও তার গান। আর রাতে লালন মঞ্চে চলে সাঁইজির জীবন কর্মনিয়ে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
সংগ্রামের দীপ্ত প্রতীক কবি রুদ্রের ৬৪তম জন্মবার্ষিকী পালিত
বাগেরহাট প্রতিনিধি : সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচার এরশাদের মসনদ কাঁপিয়ে তোলা সংগঠন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বিশিষ্ট কবি ও গীতিকার রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর ৬৪তম জন্মবার্ষিকী পালিত হয়েছে। ১৯৫৬ সালের ১৬ অক্টোবর পিতার কর্মস্থল বরিশালে জন্ম গ্রহণ করেন করেন এই ক্ষনজন্মা কবি। দিনটির স্মরণে রুদ্র স্মৃতি সংসদ শুক্রবার দুপুরে কবির গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার মিঠাখালিতে কবির কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, বাদজুমা মিলাদ মাহফিল এবং দোয়ার আয়োজন করে। করোনাকালীন দুর্যোগের কথা মাথায় রেখে এবার সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সীমিত পরিসরে সংসদ এ আয়োজন করে। উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ ঢাকা ওয়েস্ট অ্যান্ড হাইস্কুল থেকে ১৯৭৪ সালে এসএসসি এবং ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৭৬ সালে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে ১৯৮০ সালে বিএ (সম্মান) ও ১৯৮৩ সালে এমএ পাশ করেন। অকাল প্রয়াত এই কবি যাবতীয় অসাম্য, শোষণ ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন। একই সঙ্গে তাঁর কাব্যের আরেক প্রান্তর জুড়ে রয়েছে স্বপ্ন, প্রেম ও সুন্দরের মগ্নতা। দেশ ও জাতির সংকটে রুদ্রের কবিতা হয়ে উঠেছে তারুণ্যের দীপ্র হাতিয়ার। বাংলাদেশের কবিতায় অবিসস্মরণীয় এই কবির শিল্পমগ্ন উচ্চারণ তাকে দিয়েছে সত্তরের অন্যতম কবি-স্বীকৃতি। কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ মাত্র ৩৫ বছরের (১৯৫৬-১৯৯১) স্বল্পায়ু জীবনে তিনি সাতটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও গল্প, কাব্যনাট্য এবং ‘ভালো আছি ভালো থেকো’ সহ অর্ধ শতাধিক গান রচনা ও সুরারোপ করেছেন। পরবর্তীকালে এ গানটির জন্য তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি প্রদত্ত ১৯৯৭ সালের শ্রেষ্ঠ গীতিকারের (মরণোত্তর) সম্মাননা লাভ করেন। ‘উপদ্রæত উপকূল’ ও ‘ফিরে চাই স্বর্নগ্রাম’ কাব্যগ্রন্থ দুটির জন্য ‘সংস্কৃতি সংসদ’ থেকে পরপর দু’বছর ‘মুনীর চৌধুরী সাহিত্য পুরষ্কার লাভ করেন। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করেন। অকাল প্রয়াত কবি তার ৩৪ বছরের স্বল্পায়ু জীবনে সাতটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও গল্প, কাব্যনাট্য এবং ‘ভালো আছি ভালো থেকো’সহ অর্ধশতাধিক গান রচনা ও সুরারোপ করেছেন। তার জনপ্্িরয় কবিতার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হলো- ‘বাতাসে লাশের গন্ধ’। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থাবলীর মধ্যে কবিতার বই রয়েছে, উপদ্রæত উপকূল (১৯৭৯), ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম (১৯৮১), মানুষের মানচিত্র (১৯৮৬), ছোবল (১৯৮৬), গল্প (১৯৮৭), দিয়েছিলে সকল আকাশ (১৯৮৮) এবং মৌলিক মুখোশ (১৯৯০)। এছাড়া সোনালি শিশির (ছোটগল্প), বিষ বিরিক্ষের বীজ (নাট্যকাব্য) ও মনুষ্য জীবন (গল্প) নামে গ্রন্থ রয়েছে। সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৮০ সালে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ লাভ করেন রুদ্র মহম্মদ শহীদুল্লাহ। তিনি ১৯৮১ সালের ২৯ জানুয়ারি বহুল আলোচিত নারীবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে বিয়ে করেন। তবে ১৯৮৮ সালে তাদের দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটে। ’ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো’ জনপ্রিয় এ গানের ¯্রষ্টা তারুণ্য ও সংগ্রামের দীপ্ত প্রতীক কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ’র ১৯৯১ সালের ২১ জুন মাত্র ৩৫ বছর বয়সে তিনি মারা যান।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by