চট্টগ্রাম

প্রস্তুতি সম্পন্ন, শুক্রবার থেকে বাঁশখালীতে ১১দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক ঋষিকুম্ভ ও কুম্ভমেলা শুরু

  প্রতিনিধি ২৬ জানুয়ারি ২০২৩ , ৪:৪৬:৩৮ প্রিন্ট সংস্করণ

চট্টগ্রাম ব্যুরো :

ইতোমধ্যে সবধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার ২৭ জানুয়ারী চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী কোকদন্ডী ঋষিধামে ১১ দিনব্যাপী ২১তম আন্তর্জাতিক ঋষিকুম্ভ ও কুম্ভমেলা অনুষ্ঠিত হবে। এতে দেশ-বিদেশের প্রায় ২হাজার সাধু-সন্ন্যাসী-বৈঞ্চব, সংগীতশিল্পী ও দেশের কয়েকজন মন্ত্রী আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

সনাতনী ধর্মের ২৫ লাখ তীর্থার্থীদের সমাগমের জন্য ঋষিধামের নিজস্ব ৪৪ একর জায়গা ছাড়াও আশপাশের ৮২ একর এলাকাজুড়ে এ মেলা ও ধর্মীয় উৎসব ২৭ জানুয়ারি শুরু হয়ে ৬ ফেব্রæয়ারী পর্যন্ত চলবে। প্রতি তিন বছর পর পর আন্তর্জাতিক ঋষিকুম্ভ ও কুম্ভমেলা মেলা দেশের একমাত্র বাঁশখালীতেই অনুষ্ঠিত হয়।

মেলা পরিচালনা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, গোটা আয়োজন সুশৃঙ্খলভাবে নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসন, স্থানীয় প্রশাসন ও মেলা কমিটির সদস্যদের উদ্যোগে ৪৩টি উপকমিটির মাধ্যমে ১হাজার ৭শ জনের কর্মীবাহিনী সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবেন। ৮২ একর এলাকা জুড়ে থাকবে সিসি ক্যামরার আওতাভুক্ত। সবকিছু সতর্কতার সাথে মনিটরিং করবে ৩শতাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। রাষ্ট্রীয় অতিথি ও বিদেশি অতিথিদের দ্রæত যোগাযোগ রক্ষার্থে বাঁশখালী ডিগ্রী কলেজ মাঠে স্থাপন করা হয়েছে হেলিপ্যাড। প্রতি তিন বছর অন্তর অন্তর শুভ ভৈমী একাদশী হতে মাঘী পূর্ণিমা পর্যন্ত দেশের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ৬৩ বছর ধরে চলে আসা এই ধর্মযজ্ঞ এবার ২১তম আন্তর্জাতিক ঋষি কুম্ভমেলা হতে যাচ্ছে।

এ উপলক্ষে ২৭ জানুয়ারি শুক্রবার আট কিলোমিটার দীর্ঘ বর্ণাঢ্য মহাশোভাযাত্রা তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হবে। এতে উপস্থিত থাকবেন সাবেক ক্রীড়ামন্ত্রী বিরেন শিকদার, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, বাঁশখালীর এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ। পুরো অনুষ্ঠানের পৌরহিত্য করবেন ঋষিধাম ও তুলসিধামের মোহন্ত মহারাজ শ্রীমৎ স্বামী সুদর্শনানন্দ পুরী মহারাজ। এভাবে পরবর্তী ১০ দিনের অনুষ্ঠানেও উপস্থিত থাকবেন বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ ও রাষ্ট্রীয় অতিথিবৃন্দ।

ইতোমধ্যে ঋষিধামের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে প্যান্ডেল স্থাপন, সাজসজ্জা ও আলোকসজ্জার কাজ সম্পন্ন হয়েছে, দেশ-বিদেশের সাধু, সন্ন্যাসী ও ভক্তদের জন্য টাঙানো হচ্ছে তিন হাজার অস্থায়ী ত্রিপল। যশোর, দিনাজপুর, ঢাকা, ফরিদপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা স্টলের বরাদ্দ নিচ্ছেন। ওইসব মেলায় আনা হবে কুটির শিল্প, কারুশিল্প, মৃৎশিল্প, খেলনার দোকান, পুতুলের দোকান, প্রসাধনী সামগ্রী, পোশাক-পরিচ্ছদ, খাদ্য সামগ্রীর দোকানসহ আবহমান গ্রাম বাংলার নানা সংস্কৃতির স্টল।
এ বিষয়ে বাঁশখালীর ঋষিধামে ঋষিকুম্ভ ও কুম্ভমেলার সভাপতি সুকুমার চৌধুরী বলেন, ‘জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সাথে কয়েকদফা বৈঠক করে ২৫ লাখ তীর্থার্থীর মিলনমেলা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন করতে যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। দেশি-বিদেশি অতিথিদের জন্য সার্বিক নিরাপত্তাবলয় সৃষ্টি করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ১১ দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠান সূচির মধ্যে রয়েছে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, আট কিলোমিটার দীর্ঘ বর্ণাঢ্য মহাশোভাযাত্রা, অতিথিশালার উদ্বোধন, শ্রী মদ্ভগবদগীতা পাঠ, ঋষিধ্বজা উত্তোলন, বেদমন্ত্র পাঠ, ১০৮ দীপমÐিত মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, গুরু মহারাজের পূজা, দশমহাবিদ্যা পূজা, আন্তর্জাতিক ঋষি সম্মেলন, সনাতন ধর্ম সম্মেলন, সংগীতাঞ্জলি, রাষ্ট্রীয় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বরণসভা, মহাপ্রসাদ বিতরণ, দেশি-বিদেশি ধর্মীয় শিল্পীদের নৃত্য ও গান, নাটক, গীতালেখ্যসহ যাবতীয় আচার-অনুষ্ঠানের কর্মসূচি যথাযথভাবে সম্পন্ন করা হবে।

বাঁশখালীর ঋষিধামের প্রধান পুরোহিত মোহন্ত মহারাজ শ্রীমৎ স্বামী সুদর্শনানন্দ পুরী মহারাজ বলেন, ‘বাংলাদেশের চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার কালীপুরস্থ কোকদন্ডী গ্রামে ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে মহাপুরুষ সাধক ঋষি অদ্বৈতানন্দ পুরী মহারাজ পরম পূণ্যপীঠ ঋষিধামে কুম্ভমেলার প্রবর্তন করেন। ঋষিধামের নামের সাথে সঙ্গতি রেখে তথা যুগে যুগে ঋষিপুরুষের স্মরণ, মনন ও স্মৃতি বহনের মানসে এ মেলাকে ‘ঋষিকুম্ভ’ নামকরণ করা হয়। এ মেলায় দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্ত, অনুরক্ত, সাধু ও সন্ন্যাসীরা ভিড় করেন। কুম্ভমেলাকে কেন্দ্র করে আশপাশের গ্রামেও উৎসবের আবহ তৈরি হয়।

হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী ভারতের চারটি স্থানে কুম্ভমেলা হয়। এগুলো হলো হরিদ্বার, প্রয়াগ, নাসিক ও উজ্জয়িনী। তিন বছর পর চক্রাকারে চারটি স্থানে কুম্ভমেলা বসে। বাংলাদেশে একমাত্র ঋষিধামেই ৩বছর পরপর এই মেলার আয়োজন হয়। প্রতিবারই ভারতসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শতাধিক সন্ন্যাসী আসেন। যেন এটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এক মহা মিলনমেলা।’

বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘কুম্ভমেলা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন করতে তিনশতাধিক আইন শৃঙ্খলাবাহিনী দিয়ে নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টি করা হয়েছে। এখানে সার্বক্ষণিক পুলিশ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত থাকবেন।’

বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘এটা একটা বৃহত্তর আন্তর্জাতিক ধর্মীয় অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানের যাবতীয় বিষয় প্রতিদিন আমি নিজে উপস্থিত থেকে মনিটরিং করব। সকলের আন্তরিক সহযোগিতায় অনুষ্ঠান সুন্দর ও সফলতা কামনা করি।’

 

আরও খবর

Sponsered content

Powered by